মহান স্বাধীনতার ৫৩ বছরে পদার্পণ করল বাংলাদেশ। ১৯৭১ সালের আজকের এই দিনে পৃথিবীর বুকে স্বাধীন অস্তিত্বের জানান দেয়া বাংলা আজ বিশ্বের বিস্ময়। দীর্ঘ এই পথচলায় অর্থনৈতিক অগ্রগতিতে সন্তুষ্টি প্রকাশ করলেও বিশেষজ্ঞরা বলছেন, অসাম্প্রদায়িক-ধর্মনিরপেক্ষ বাংলা প্রতিষ্ঠার স্বপ্ন পূরণ আজো অধরাই রয়ে গেছে ।
ইতিহাসের নৃশংসতম এক হত্যাযজ্ঞ শেষে বাংলার পূর্ব আকাশে উঁকি দেয় রক্তরাঙা সূর্য। দিনের আলোয় ফুটে ওঠে ক্ষত-বিক্ষত বাংলার পথ প্রান্তর। ভীতবিহ্বল মানুষ দেখলো সারি সারি স্বজনের মৃতদেহ। শুরুটা সেখান থেকেই। শোষণ আর বৈষম্যের যাতাকলে পিষ্ট বাঙালি দমে যাওয়ার পাত্র নয়। ২৬ মার্চ স্বাধীনতার ঘোষণা পাওয়া মাত্র মৃত্যুকে তুচ্ছজ্ঞান করে গড়ে তোলে প্রতিরোধ। দীর্ঘ ৯ মাসের যুদ্ধ, সংগ্রাম, মৃত্যু, লাঞ্ছনা ও চরম আত্মত্যাগের মাধ্যমে ছিনিয়ে আনে তার হাজার বছরের কাঙ্ক্ষিত বিজয়। ত্রিশ লাখ প্রাণের বিনিময়ে বাংলা বিশ্বের বুকে মাথা উঁচু করে দাঁড়ায়।
শূন্য থেকে যাত্রা শুরু করা বাঙালির পরের গল্পটা শুধুই এগিয়ে যাওয়ার। নানা পিছুটান, ষড়যন্ত্র সত্বেও স্বাধীনতা পরবর্তী পাঁচ দশকে বাঙালির অর্জন বিস্ময় জাগিয়েছে সারা বিশ্বে। বিগত এক দশকের অবকাঠামোগত উন্নয়ন, অর্থনৈতিক অগ্রগতিসহ সামগ্রিক অগ্রযাত্রা দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে। তবে উন্নয়নের মহাসড়কে গতিশীল যানের মতো ছুটতে থাকা বাংলাদেশের সামনে সামাজিক বৈষম্যকে চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেখছেন বিশেষজ্ঞরা।
বাংলার সামগ্রিক সমৃদ্ধিতে তেমন কোনো হতাশা না থাকলেও স্বাধীন বাংলার বুকে আজো রয়ে গেছে স্বাধীনতা বিরোধীদের হুংকার। রয়েছে সাম্প্রদায়িক শক্তির মাথাচাড়া। পাশাপাশি ঘুষ-দুর্নীতিসহ দেশপ্রেমের ক্ষেত্রে তরুণ প্রজন্মের ভূমিকাও প্রশ্নবিদ্ধ বলেও মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।
ইতিহাসবিদ অধ্যাপক ড. মুনতাসীর মামুন বলেন, বঙ্গবন্ধু সোনার বাংলার আশ্বাস দিয়েছিলেন কিন্তু গড়ে যেতে পারেননি। তবে তিনি ভিত্তিটা গেঁথে দিয়েছিলেন। এরপর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গত এক দশকে বাংলাদেশকে যে পর্যায়ে নিয়ে গেছেন সেটি আমাদের ভাবনার মধ্যে ছিল না।
তিনি বলেন, আমরা চেয়েছি মানুষ দুবেলা খাবে, একটু আশ্রয় পাবে, দুটি জামা-কাপড় পাবে। দেশ স্বাধীনের পর দেশে সাত কোটি মানুষ ছিল। তখন এটি সম্ভব হয়নি। কিন্তু এখন দেশে ১৭ কোটি মানুষ, আবাদি জমির পরিমাণ ২৫ শতাংশ কমে গেলেও এখন আমরা এটি পারছি। এর চেয়ে বড় কৃতিত্ব আর কিছু নেই বলেও মনে করেন এ বিশেষজ্ঞ।
এ ইতিহাসবিদ আরও বলেন, এদেশে এখনও ঘুষ-দুর্নীতি, স্বাধীনতা বিরোধী ও সাম্প্রদাযিকতা রয়ে গেছে। এখন যারা দুর্নীতি করছে তারা স্বউল্লাসে দুর্নীতি করছে বলেও মনে করেন তিনি। যারা দুর্নীতি করছে তারা মনে করছে তাদেরকে বলার কেউ নেই।
তবু শত হতাশার ভিড়ে বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সুখী-সমৃদ্ধশালী-অসাম্প্রদায়িক বাংলা প্রতিষ্ঠার দায়িত্ব তরুণদের হাতেই দিতে চান বয়োজ্যেষ্ঠরা। তরুণদের যোগ্য নেতৃত্বে বাংলা এগিয়ে যাবে তার কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যে এটাই তাদের প্রত্যাশা।
একই সঙ্গে ঘুষ-দুর্নীতি ও বৈষম্যমুক্ত বাংলাদেশ বিনির্মাণে নতুন প্রজন্মকেই দায়িত্ব নেয়ার আহ্বান জানান এ ইতিহাস বিশেষজ্ঞ।




প্রতিদিন ডেস্ক



