সিলেটে বর্তমানে আলোচিত ইস্যু ব্যাটারিচালিত রিকশা। অবৈধ এ যানবাহন অতীতে বন্ধ করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে বারবার। কিন্তু ব্যর্থ হয়েছে সকল উদ্যোগ। এবার সিলেটের নতুন পুলিশ কমিশনার ও জেলা প্রশাসক গেছেন হার্ড লাইনে। কিন্তু এতে বাগড়া দিচ্ছেন সিলেট মহানগর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক ইমদাদ হোসেন চৌধুরী।
মহানগর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক ইমদাদ হোসেন চৌধুরীর বিরুদ্ধে অবৈধ ব্যাটারিচালিত রিকশাচালকদের উস্কে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। তিনি তাদের আন্দোলনে শরিক হয়ে তাদের রাজপথে থাকার নির্দেশ পর্যন্ত দিয়েছেন। তাঁর এমন বক্তব্যের ভিডিও ভাইরাল হওয়ার পর উঠেছে সমালোচনার ঝড়। এ অবস্থায় ইমদাদ হোসেন চৌধুরী সিলেট ছেড়েছেন বলে জানা গেছে। তিনি বর্তমানে যুক্তরাজ্যে অবস্থান করছেন।
গত কয়েকদিন ধরে সিলেটে অবৈধ ব্যাটারির রিকশার বিরুদ্ধে অভিযানে নেমেছে প্রশাসন। এ অব্স্থায় গত ২৫ সেপ্টেম্বর ব্যাটারিচালিত রিকশা চলাচলের অনুমোদনের দাবিতে নগরজুড়ে তাণ্ডব চালায় চালক ও মালিকরা। ওই দিন হামলা ও গাড়ি ভাঙচুর করা হয়। এসব নিয়ে মহানগরে বিশৃঙ্খল পরিবেশ তৈরি হয়। প্রশাসন থেকে কঠোর বার্তা দেওয়া হয়- সিলেটে কোনোভাবে এ রিকশা চলতে দেওয়া হবে না।
কিন্তু ব্যাটারিচালিত রিকশাচালকদের পক্ষে অবস্থান নেন মহানগর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক ইমদাদ হোসেন চৌধুরী। বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দলের (বাসদ) ডাকা আন্দোলনে তিনি উপস্থিত হয়ে বক্তব্য রাখেন। এতে বলেন, এ সমাবেশে উপস্থিত থাকা মানে নগর বিএনপি আপনাদের পাশে আছে। আপনাদের যৌক্তিক দাবির সঙ্গে আমরা আছি।
তাঁর এই বক্তব্যের পরপরই প্রশাসন থেকে কঠোর বার্তা দেওয়া হয়। গ্রেপ্তার করা হয় জেলা বাসদের আহ্বায়ক আবু জাফর ও সদস্য সচিব প্রণবজ্যোতি পালকে। রিকশা শ্রমিকদের আন্দোলনে মদদ ও গাড়ি ভাঙচুরের ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়।
এদিকে গতকাল রোববার (২৮ সেপ্টেম্বর) ইমদাদ হোসেন চৌধুরী ব্যক্তিগত কাজে যুক্তরাজ্যে গেছেন বলে জানিয়েছেন মহানগর বিএনপির সভাপতি (ভারপ্রাপ্ত) রেজাউল হাসান কয়েস লোদী। তাঁর অবর্তমানে নগর বিএনপির ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করবেন দলটির যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক নজিবুর রহমান নজিব। বাসদের দুই নেতাকে গ্রেপ্তারের পরপরই ইমদাদ যুক্তরাজ্যে চলে যাওয়ায় চলছে কানাঘুষা। গুঞ্জন উঠেছে- গ্রেফতার এড়াতে ইমদাদ হোসেন চৌধুরী লন্ডনে চলে গেছেন!
এদিকে গত শুক্রবার গণমাধ্যমে লেখা পাঠান পুলিশ কমিশনার আব্দুল কুদ্দুস চৌধুরী। ‘ব্যাটারি রিকশা: নগর জীবনের অদৃশ্য মৃত্যুঘণ্টা’ শিরোনামে তিনি লিখেন, ব্যাটারি রিকশায় নেই মানসম্মত ব্রেক, সিগন্যাল বা ফিটনেস। ফলাফল শিশু, বৃদ্ধ, শিক্ষার্থী, কর্মজীবী কেউ রক্ষা পাচ্ছে না। প্রতিটি দুর্ঘটনা মানে একটি পরিবারে শোক, একটি মায়ের বুক খালি হয়ে যাওয়া, একটি শিশুর ভবিষ্যৎ অন্ধকার হয়ে যাওয়া।
সিলেট শহরে যেখানে তিন লাখ পরিবার বিদ্যুৎ ব্যবহার করে, সেখানে ৪০ হাজার ব্যাটারি রিকশা প্রতিদিন দুই লাখ কিলোওয়াট বিদ্যুৎ খরচ করছে। একটি ব্যাটারি রিকশা চার্জ দিতে লাগে গড়ে ৪৫ কিলোওয়াট বিদ্যুৎ। এই বিদ্যুৎ দিয়ে প্রতিদিন ৫০ হাজার পরিবার আলো জ্বালাতে পারত। আমাদের সন্তানরা যখন পড়ার টেবিলে অন্ধকারে বসে থাকে, তখন সেই বিদ্যুৎ রিকশার চাকায় পুড়ে যাচ্ছে।
লেখায় মানবিক আবেদনের একটি অংশে তিনি উল্লেখ করেন, আজ আমি পুলিশ কমিশনার হিসেবে নয়, একজন বাবা, একজন নাগরিক হিসেবে আপনাদের কাছে আবেদন করছি সন্তানকে ভালোবাসলে, ব্যাটারি রিকশার বিরুদ্ধে দাঁড়ান।
লেখাটির উপসংহারে তিনি উল্লেখ করেন, সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশ এরই মধ্যে ব্যাটারি রিকশা বন্ধের উদ্যোগ নিয়েছে। আমরা চাই না, সিলেটের মানুষ ব্যাটারি রিকশার চাকায় পিষ্ট হোক। এই আন্দোলন আমাদের সবার।
তাঁর এই বক্তব্যের পরপরই সিলেটের রাজনীতিবিদ থেকে শুরু করে সুশীল সমাজের অনেকে মাঠে নামেন। এরই ধারাবাহিকতায় রবিবার দুপুরে নগরবাসীকে সঙ্গে নিয়ে রাস্তায় নামেন বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ও সাবেক মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী। এ সময় কোর্ট পয়েন্টে বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামাজিক ও ধর্মীয় সংগঠনের নেতারা উপস্থিত ছিলেন। ব্যাটারিচালিত রিকশা বন্ধের দাবিসংবলিত বিভিন্ন প্ল্যাকার্ড অনেকের হাতে দেখা যায়। পরে সেখান থেকে একটি পদযাত্রা সিলেট কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে গিয়ে শেষ হয়।