শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (শাবিপ্রবি) গত বছরের ১৪ জুলাই থেকে ৫ আগস্ট পর্যন্ত আন্দোলনকারীদের উপর হামলা ও হলে অস্ত্র এবং মাদক সম্পৃক্ততার ঘটনায় ১৯ জনকে আজীবন ও বিভিন্ন মেয়াদে ৩৫ জনকে বহিষ্কার করেছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। এতে নিরপরাধ কয়েকজন শিক্ষার্থীকে বহিষ্কার করা হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে।
গত বৃহস্পতিবার (২৫ আগস্ট) বিশ্ববিদ্যালয়ের ২৩৭তম সিন্ডিকেট সভায় এই সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়। গতকাল (শনিবার) রেজিস্ট্রার দপ্তর সূত্রে এ তথ্য নিশ্চিত করা হয়।
বহিষ্কারকৃত শিক্ষার্থীদের তালিকা প্রকাশিত হওয়ার পরপরই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ক্ষোভ প্রকাশ ও পুনঃতদন্তের দাবি জানিয়েছেন শিক্ষার্থীরা। শিক্ষার্থীদের মতে, গত বছরে জুলাই আন্দোলনে সক্রিয় থাকা ও নিরপরাধ কয়েকজন আছেন বহিষ্কারের তালিকায়।
হাফিজুর ইসলাম নামের এক শিক্ষার্থী সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে লিখেন, শাবিপ্রবি কি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান নাকি ক্ষমতার দুর্গ? জুলাই আন্দোলনের সময় অস্ত্রধারী ও হামলাকারীদের বিচার দাবি সবারই। কিন্তু বিস্ময়করভাবে দেখা যাচ্ছে, যারা অস্ত্র, হামলা কিংবা সহিংসতার সাথে সম্পৃক্ত ছিল না, কেবল হলে থাকার কারণে বা ছাত্রলীগের মিছিলে অংশ নেওয়ার অভিযোগে তাদেরকেই আজীবন বহিষ্কার কিংবা দীর্ঘ মেয়াদে শাস্তির মুখে ফেলা হয়েছে। নিরপরাধ শিক্ষার্থীদের উপর প্রশাসনের এই দমননীতি অন্যায় ও অন্যায্য।
রিয়াজ হোসেন নামের আরেক শিক্ষার্থী লিখেন, কোনো যদি বা কিন্তু ছাড়াই যাদের প্রতি জুলুম করা হয়েছে নেক্সট সিন্ডিকেট মিটিংয়ে তাদের বহিষ্কার আদেশ প্রত্যাহার করতে হবে। বিশেষ করে পরিসংখ্যান বিভাগের মাহাবুব, পিএমই বিভাগের সাইমুন, বাংলা বিভাগের অজয়, বিবিএ বিভাগের নিপেশসহ এমন যাদের প্রতি অন্যায় করা হয়েছে তাদের বহিষ্কার আদেশ অবশ্যই প্রত্যাহার করতে হবে।
সমাজবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী ফয়সাল হোসেন বলেন, ফরিদ(সাবেক উপাচার্য) যখন অর্থ উপদেষ্টার সাথে পার্টি করে মস্তিতে ব্যস্ত, তখন তদন্ত কমিটির গাফিলতি কিংবা সুষ্ঠু বিচারের ফাঁক-ফোঁকরে দু-একজন শিক্ষার্থীদের প্রতি অন্যায় বিচার করলো প্রশাসন। আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্ররাই সবসময় ভিক্টিম। তাদেরকেই বলি দেওয়া হয়। আমাদের মহান শিক্ষকদের হুকুমে লাশ পড়লেও ওনাদের কলিগরাই ক্ষমতায় বসে হয়তো বিশ্ববিদ্যালয়ে নয়তো মন্ত্রণালয়ে। শিক্ষার্থীদের দাবির প্রেক্ষিতে পুনরায় তদন্ত সাপেক্ষে বিচার দ্রুত রিভিউ করা হোক।
এবিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড. সাজেদুল করিম বলেন, তদন্ত কমিটি গণহারে বহিষ্কার করেনি, গণহারে বহিষ্কার করা হলে যারা অভিযুক্ত ছিল সবাইকেই বহিষ্কার করা হতো। হলে অস্ত্র এবং মাদক যেসব কক্ষে পাওয়া গেছে সেসব কক্ষে অভিযুক্তদের মধ্যে যারা ছিলনা প্রমাণ করতে পেরেছে তাদেরকে খালাস দেয়া হয়েছে। যারা পারেনি তারা সাজাপ্রাপ্ত হয়েছে। তারপরও কেউ যদি মনে করে নিরপরাধ হয়েও বহিষ্কার হয়েছে, তাহলে তারা আপিল করতে পারে।