মঙ্গলবার, ১৫ জুলাই ২০২৫, ১২:৫৭ অপরাহ্ন

ডিসি প্রত্যাহারের দাবি থেকে সরে এলেন শ্রমিক নেতারা, আরিফের অবস্থান কী?

  • প্রকাশের সময় : ০৬/০৭/২০২৫ ০২:০৭:৩২
এই শীতে ভাঙন আতঙ্কে দিন কাটছে তাদের সিলেটের সাবেক মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী ও সিলেটের জেলা প্রশাসক (ডিসি) মোহাম্মদ শের মাহবুব মুরাদ
Share
23

৫ জুলাইয়ের মধ্যে সিলেটের জেলা প্রশাসক (ডিসি) মোহাম্মদ শের মাহবুব মুরাদের অপসারণ দাবি করেছিলেন সিলেটের পরিবহন ও পাথর-সংশ্লিস্ট মালিক শ্রমিকরা। এই দাবির সাথে সংহতি জানিয়েছিলেন সিলেট সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র ও বিএনপির চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা আরিফুল হক চৌধুরী।


গত ২ জুন নগরের কোর্ট পয়েন্টে এক সভায় আরিফুল হক চৌধুরী ডিসির প্রত্যাহার দাবি করে বলেছিলেন, ‘আজকে শুধু বলে গেলাম। ৫ তারিখের পরে কিন্তু তুমি জেলা প্রশাসকের সঙ্গে আর কোন আলোচনা হবে না। এই জেলা প্রশাসককে প্রত্যাহার করা না হলে ৫ তারিখের পরে আরও কঠোর আন্দোলন কর্মসূচী ঘোষণা করা হবে’।

শনিবার ছিলো ৫ জুন। শনিবার থেকে পূর্ব ঘোষিত পণ্য পরিবহন ধর্মঘট শুরু করেছেন শ্রমিকরা। আর জেলা প্রশাসক  মোহাম্মদ শের মাহবুব মুরাদ স্বপদেই আছেন। বরং জেলা প্রশাসকের অপসারণ দাবি থেকে সরে এসেছেন জেলা পণ্য পরিবহন মালিক-শ্রমিক ঐক্য পরিষদের নেতারা।

এখন তাহলে আরিফুল হক চৌধুরীর অবস্থান কী হবে? তিনি কি নিজের পূর্ব ঘোষিত ‘৫ তারিখের পর কঠোর কর্মসূচী’ ঘোষণা করবেন- এমন প্রশ্ন দেখা
পাথর কোয়ারি সচলসহ পাঁচ দফা দাবি পুরণে বেঁধে দেওয়া সময়সীমা শেষ হওয়ায় শনিবার থেকে সিলেটে শুরু হয়েছে পণ্য পরিবহন ধর্মঘট। তবে ধর্মঘট নিয়ে শ্রমিকদের দুটি পক্ষের মধ্যে মতবিরোধ দেখা দিয়েছে। একারণে প্রথম দিনে ধর্মঘটে দেখা যায় ঢিলেঢালাভাব।

সিলেট জেলা পণ্য পরিবহন মালিক-শ্রমিক ঐক্য পরিষদ এই ধর্মঘট আহ্বান করে। তাদের ৫ দফা দাবির মধ্যে রয়েছে- সিলেটের সব পাথর কোয়ারি চালু করা, ক্রাশার মেশিন ধ্বংস অভিযান বন্ধ করা, পাথর পরিবহনকারী ট্রাক আটকানো বন্ধ, চালকদের হয়রানি ও নির্যাতন বন্ধ এবং বিআরটিএ অফিসে শ্রমিক হয়রানি বন্ধ।

জানা যায়, শনি ও রবিবার সরকারি ছুটি ও ছুটি ও পবিত্র আশুরা থাকায় শ্রমিকদের একটি পক্ষ এই দুদিন ধর্মঘট পালনের বিরুদ্ধে মত দেন। এই নিয়ে তাদের মধ্যে মতবিরোধ দেখা দেয়। যদিও সংগঠনের নেতারা ধর্মঘট চালিয়ে যাওয়ার পক্ষে অবস্থান নেন।

জানা যায়, আন্দোলনকারীদের দাবির মধ্যে অন্যতম ছিলা সিলেটের জেলা প্রশাসকের অপসারণ। তবে শেষ মূহূর্তে এই দাবি থেকে সরে এসেছেন তারা।

এ তথ্য জানিয়ে সিলেট জেলা শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি মো. দিলু মিয়া জানান, দাবিনামায় পরিবর্তন করে বিআরটিএ অফিসে শ্রমিক হয়রানি বন্ধের বিষয়টি অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। তবে কেন জেলা প্রশাকে অপসারণের দাবি থেকে সরে এসেছেন তা নিয়ে মন্তব্য করতে চাননি তিনি।

তবে একটি সূত্র জানিয়েছে, প্রশাসনিক ও রাজনৈতিক চাপে এমন দাবি থেকে সরে এসেছেন শ্রমিক নেতারা।

এ ব্যাপারে শনিবার রাতে সাবেক মেয়র আরিফুল হক চৌধুরীর সাথে মোবাইল ফোনে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তাকে পাওয়া যায়নি।

তবে বুধবার রাতে এ ব্যাপারে মহানগর বিএনপির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি রেজাউল হাসান কয়েস লোদী বলেছিলেন, ‘আরিফুল হক চৌধুরীর জেলা প্রশাসক হটাও কর্মসূচির সঙ্গে বিএনপির কোনো সম্পৃক্ততা নেই। এটা একান্তই তার নিজস্ব কর্মসূচি।

আর বৃহস্পতিবার (৩ জুলাই) রাতে  এ ব্যাপারে আরিফুল হক চৌধুরী সিলেটটুডেকে বলেছিলেন, ‘‘কালকের (বুধবারের) সমাবেশের পর প্রশাসনের উচ্চ পর্যায়ের অনেকেই আমার সাথে যোগাযোগ করছেন। তবে আমি ‘যেটা কইছি, কইছিই’ (যা বলছি, বলছিই)। এই ডিসিকে প্রত্যাহার করতে হবে। তার কারণে সিলেটের সব মানুষ অতিষ্ঠ।

এরআগে বুধবার (২ জুলাই) কোর্ট পয়েন্টের সমাবেশে জেলা প্রশাসকের উদ্দেশ্যে আরিফুল হক চৌধুরী বলেন, জেলা প্রশাসক, আপনি যদি মনে করেন, আমাদের মধ্যে বিভাজন করার পায়তারা যেটা করছেন, দুএকজন নেতাকে বশ করে আপনি মনে করবেন না পার পেয়ে যাবেন। আমাদের স্বার্থের বিরুদ্ধে যারা যাবে তারা জেলা প্রশাসকের দালাল হিসেবে চিহ্নিত হবে।

তিনি বলেন, এই জেলা প্রশাসক বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারকে বিব্রত করার জন্য কাজ করছেন। জনগণকে সরকারের বিরুদ্ধে দাড় করাচ্ছেন। আর না হলে এসব কাজ (স্টোন ক্রাশার মিল ও কিছু স্থাপনার বিরুদ্ধে অভিযান) করার আগে প্রত্যেকটা রাজনৈতিক দলের নেতাদের সাথে বসতেন। তাদের পরামর্শ নিতেন।

আরিফুল হক চৌধুরী বলেন, এই যে জালালাবাদ অন্ধ কল্যাণ হাসপাতালের মার্কেট গুড়িয়ে দেওয়া হলো এটির অনুমোদন তো উনার মতোই একজন জেলা প্রশাসক দিয়েছিলেন। অথচ এই জেলা প্রশাসক কারো সঙ্গে কথা না বলেই মার্কেট গুড়িয়ে দিচ্ছেন।

ডিসিকে উদ্দেশ্য করে তিনি আরও বলেন, আপনি বলেন, আপনি আমাদের লোক। কিসের আপনি আমাদের লোক। আপনি প্রজাতন্ত্রের কর্মচারী। আপনি চোখ রাঙিয়ে জনগণের সঙ্গে কথা বলতে পারেন না। আপনাকে সাবধান করে বলে দিতে চাই, সিলেটের মানুষকে অপমান করবেন না।

গত ১৭ বছর সিলেটে লুটপাট হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, বিগত ১৭ বছর অবৈধ চোরাচালান, পাথর তোলা-বালু তোলা ছিলো। তাদের বিরুদ্ধে কি ব্যবস্থা নিয়েছেন। জেলা প্রশাসক জবাব দিতে হবে। ১৭ বছর যারা লুটপাট করেছে তাদের বিরুদ্ধে কি ব্যবস্থা নিয়েছেন তার সঠিক উত্তর দিতে হবে।

‘জেলা প্রশাসক নাকি বলে, আরিফুল হক এখন আর জনপ্রতিনিধি নয়’ এমনটি উল্লেখ করে সাবেক এই মেয়র বলেন, ‘সিলেটের মানুষ দশ বছর আমাকে জনপ্রতিনিধি করেছেন। তুমি জেলা প্রশাসক, কোথাকার কি, তোমার মতো কয়েকজন জেলা প্রশাসক তো আমার আন্ডারে কাজ করেছেন। কথাবার্তা সাবধান করে বলবা। জনপ্রতিনিধি কে আছেন কে নাই, এটা তোমার নির্ধারণ করার কথা না।’


সিলেট প্রতিদিন / Sl


Local Ad Space
কমেন্ট বক্স
© All rights reserved © সিলেট প্রতিদিন ২৪
পোর্টাল বাস্তবায়নে : বিডি আইটি ফ্যাক্টরি