পদার্থবিজ্ঞানে ২০২৪ সালে নোবেল পুরস্কার পেলেন দুই বিজ্ঞানী। তারা হলেন— জন জে. হপফিল্ড ও জেফরি ই. হিনটন।
কৃত্রিম নিউরাল নেটওয়ার্কের মাধ্যমে মেশিন লার্নিং সম্ভব করে তোলার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ আবিষ্কার ও উদ্ভাবনের জন্য তারা এ পুরস্কার পেলেন।
মঙ্গলবার (৮অক্টোবর) বাংলাদেশ সময় বিকেল ৩টা ৪৫ মিনিটের দিকে রয়্যাল সুইডিশ একাডেমি অব সায়েন্সেস পুরস্কারের জন্য তাদের নাম ঘোষণা করে।
রয়েল সুইডিশ একাডেমি অব সায়েন্সেস এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানায়, এ দুই বিজ্ঞানী পদার্থবিদ্যা ব্যবহার করে কৃত্রিম নিউরাল নেটওয়ার্ককে প্রশিক্ষিত করেছেন।
কৃত্রিম নিউরাল নেটওয়ার্ক হলো মানুষ মস্তিষ্ক থেকে অনুপ্রেরণা নিয়ে তৈরি এক ধরনের কম্পিউটার সিস্টেম।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, এ দুই বিজ্ঞানী (জন জে. হপফিল্ড ও জেফরি ই. হিনটন) পদার্থবিদ্যার কিছু টুলস ব্যবহার করে এমন কয়েকটি পদ্ধতি তৈরি করেছেন, যা আজকের শক্তিশালী মেশিন লার্নিংয়ের ভিত্তি।
জন হপফিল্ড এক অ্যাসোসিয়েটিভ মেমোরি তৈরি করেছেন, যা ডেটাতে ছবি এবং অন্যান্য ধরনের প্যাটার্ন সংরক্ষণ এবং পুনর্গঠন করতে পারে। জিওফ্রে হিন্টন এমন একটি পদ্ধতি আবিষ্কার করেন, যা স্বতন্ত্রভাবে ডেটায় বিভিন্ন বৈশিষ্ট্য খুঁজে পেতে পারে। তা ছবিতে বিভিন্ন বৈশিষ্ট্য বা উপাদান যেমন- মুখ শনাক্ত করতে পারে।
যখন আমরা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার (এআই) কথা বলি, এর মাধ্যমে প্রায়ই আমরা কৃত্রিম নিউরাল নেটওয়ার্ক ব্যবহারের মাধ্যমে মেশিন লার্নিংকেই বুঝিয়ে থাকি।
এই প্রযুক্তি মূলত মানব মস্তিষ্ক থেকে অনুপ্রাণিত। কৃত্রিম নিউরাল নেটওয়ার্কে মস্তিষ্কের নিউরনগুলো উপস্থাপিত হয় নোডের মাধ্যমে, এদের প্রত্যেকটির আলাদা মান রয়েছে। এসব নোড
একটি নিউরাল নেটওয়ার্কে, মস্তিষ্কের নিউরনগুলি নোড নামক ক্ষুদ্র বিন্দুর মতো। প্রতিটি নোডের আলাদা মান রয়েছে, যা কম্পিউটারের তথ্য প্রক্রিয়া করতে সহায়তা করে।
নোডগুলো সংযোগের মাধ্যমে একে অপরকে প্রভাবিত করে, যাকে মস্তিস্কের সিন্যাপসের সঙ্গে তুলনা করা যেতে পারে। এসব সংযোগ শক্তিশালী বা দুর্বল হতে পারে।
নেটওয়ার্কটি প্রশিক্ষিত হতে পারে, উদারহণ হিসেবে বলা যায়, দুটি নোডের মান একই সময়ে বেশি হলে সংযোগ শক্তিশালী হয়, যা সিস্টেমটিকে ভালোভাবে শিখতে সহায়তা করে।
এ বছর পদার্থে নোবেলজয়ী দুই বিজ্ঞানী আশির দশক থেকে কৃত্রিম নিউরাল নেটওয়ার্ক নিয়ে এ পর্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ কাজ করেছেন।
পদার্থবিজ্ঞানের জন্য নিয়োজিত নোবেল কমিটির চেয়ার এলেন মুনস বলেন, এই নোবেলজয়ীর কাজ ইতোমধ্যে বেশ সহায়ক হয়েছে। পদার্থে আমরা বিশাল পরিসরে কৃত্রিম নিউরাল নেটওয়ার্ক ব্যবহার করি। যেমন নির্দিষ্ট বৈশিষ্টসহ নতুন কোনো বস্তু তৈরি।
জন হপফিল্ড ১৯৩৩ সালে যুক্তরাষ্ট্রের শিকাগোতে জন্মগ্রহণ করেন। নিউইয়র্কের করনেল বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ১৯৫৮ সালে পিএইচডি অর্জন করেন। তিনি নিউ জার্সির প্রিন্সটন বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক।
আর জেফরি হিনটনের জন্ম ১৯৪৭ সালে লন্ডনে। তিনি ১৯৭৮ সালে যুক্তরাজ্যের এডিনবার্গ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পিএইচডি ডিগ্রি অর্জন করেন। তিনি কানাডার টরন্টো বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক।
১৮৯৫ সালে সুইডিশ উদ্ভাবক এবং সমাজসেবী আলফ্রেড নোবেলের উইলের মাধ্যমে নোবেল পুরস্কার প্রতিষ্ঠিত হয়। ১৯৬৮ সালে অর্থনীতিকে এ পুরস্কারের অন্তর্ভুক্ত করা হয়। উইলে এটি অন্তর্ভুক্ত ছিল না। বিজয়ীরা একটি সনদ, একটি গোল্ড মেডেল ও চেক পেয়ে থাকেন।