বৃহস্পতিবার, ১১ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ০৫:০৮ অপরাহ্ন

সিলেট যেতে ভোগান্তি-বানিয়াচংয়ে বিআরটিসি বাস চালুর জোর দাবি

  • প্রকাশের সময় : ১০/০৯/২০২৫ ২২:২০:০৬
এই শীতে ভাঙন আতঙ্কে দিন কাটছে তাদের সংগৃহীত
Share
17

মো. আব্দাল মিয়া : বিশ্বের বৃহত্তম গ্রাম বানিয়াচংয়ে—ঐতিহ্য, জনসংখ্যা আর সম্ভাবনায় ভরপুর এই জনপদ আজ যেন পথহীনতার শৃঙ্খলে বন্দি। শিক্ষা, চিকিৎসা আর ব্যবসা–বাণিজ্যের প্রাণকেন্দ্র সিলেটের সঙ্গে প্রতিদিন হাজারো মানুষের পথচলা থাকলেও সরাসরি সরকারি বাস সার্ভিসের অভাবে তাদের যাত্রা পরিণত হয়েছে দুর্ভোগের দুঃস্বপ্নে। ভোরে বের হওয়া শিক্ষার্থী থেকে শুরু করে শ্রমজীবী মানুষ কিংবা জরুরি রোগী—সবার কণ্ঠেই একই আর্তি: “আমরা চাই বানিয়াচং–সিলেট রুটে সরাসরি বিআরটিসি বাস।”


উপজেলা সদর থেকে সিলেট যেতে হলে আগে মিশুক বা টমটমে গ্যানিংগঞ্জ বাজার, সেখান থেকে সিএনজি বা মাইক্রোতে নবীগঞ্জ, আবার আউশকান্দি হয়ে পৌঁছাতে হয় সিলেটে। পথে পথে গাড়ি বদল, অতিরিক্ত ভাড়া আর দীর্ঘ সময়—সব মিলিয়ে যাত্রীদের ভোগান্তি অসহনীয় পর্যায়ে পৌঁছেছে। শিক্ষার্থীদের পড়াশোনার খরচ বেড়ে যাচ্ছে কয়েকগুণ, ব্যবসায়ীরা লোকসানে পড়ছেন, আর জরুরি রোগীরা জীবন ঝুঁকিতে পড়ছেন।


শুধু ব্যবসায়ী বা শিক্ষার্থী নয়, অসুস্থ রোগী ও সাধারণ যাত্রীদের দুর্ভোগও ভয়াবহ। চিকিৎসার প্রয়োজনে প্রতিদিন অসংখ্য মানুষ সিলেট ওসমানি মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ও অন্যান্য ক্লিনিকে যেতে বাধ্য হচ্ছেন। সড়ক যোগাযোগে সরাসরি সরকারি বাস না থাকায় সবচেয়ে ভুগছেন গুরুতর অসুস্থ রোগী ও গর্ভবতী নারীরা। 

কোনো দুর্ঘটনা বা হঠাৎ অসুস্থতায় রোগীকে সিলেট মেডিকেলে নিতে হলে পরিবারকে আগে ভাড়ার টাকা জোগাড় করতেই মূল্যবান সময় নষ্ট হয়ে যায়। অনেকে সময়মতো হাসপাতালে পৌঁছাতে না পেরে প্রিয়জনকে হারান।

কলেজ পড়ুয়া এক শিক্ষার্থী তানভীর আহমেদ ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন— “সরাসরি সরকারি বাস থাকলে যাতায়াত খরচ অর্ধেক কমে যেত। আমরা বড় হওয়ার স্বপ্ন দেখি। কিন্তু প্রতিদিন শুধু ভাড়ার পেছনে এত টাকা চলে যায় যে পড়াশোনা চালিয়ে যাওয়া কষ্টকর হয়ে দাঁড়িয়েছে।”

একজন অভিভাবক নাসির উদ্দিন ক্ষোভ প্রকাশ করে জানান, তার ছেলেকে প্রতিদিন সিলেটের কোচিং ক্লাসে পাঠাতে গিয়ে মাসে কয়েক হাজার টাকা শুধু ভাড়ার পেছনে খরচ হয়। “আমরা কৃষক মানুষ, এত খরচ বহন করা কষ্টকর। সরকারি বাস না থাকায় আমাদের সন্তানদের ভবিষ্যৎ ঝুঁকির মুখে।”


এ বিষয়ে মিয়াখানি শায়খ আবু নছর কোরাইশি দাখিল মাদ্রাসার ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি মহিবুর রহমান মিটুর সাথে কথা হলে তিনি বলেন, “বড়বাজার সিএনজি স্টেশন থেকে যদি বিআরটিসি বাস চালু হয়, তবে বানিয়াচং ও আজমিরীগঞ্জ উভয় এলাকার মানুষই উপকৃত হবেন। বর্তমানে শিক্ষার্থী ও ইমারজেন্সী রোগীসহ অন্যান্য যাত্রীদের একাধিকবার বাহন পরিবর্তন করে সিলেটে যেতে হয়, যা সময়সাপেক্ষ ও ব্যয়সাধ্য।”


একইসঙ্গে ব্যবসায়ীরা বলছেন,“ পণ্য সিলেটে পৌঁছাতে গেলে কয়েক দফায় গাড়ি পরিবর্তন করতে হয়, যার ফলে পরিবহন ব্যয় বেড়ে লাভ নামমাত্র থাকে। সরকারি বাস চালু হলে খরচ কমবে, ব্যবসাও বাঁচবে।”


হাসপাতালের এক চিকিৎসক নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন— “রোগীদের সময়মতো চিকিৎসা পাওয়া অনেক সময় সম্ভব হয় না। সরাসরি বিআরটিসি বাস থাকলে অন্তত জরুরি রোগী পরিবহনে গতি আসত।”


সচেতন মহলের মতে, কোনো অঞ্চলের উন্নয়নের অন্যতম শর্ত হলো সহজ যোগাযোগ ব্যবস্থা। বানিয়াচং–সিলেট রুটে সরকারি বাস সার্ভিস না থাকায় শিক্ষার্থী, ব্যবসায়ী ও সাধারণ মানুষ প্রতিদিন ভোগান্তি পোহাচ্ছেন, যার সরাসরি প্রভাব পড়ছে শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও অর্থনীতিতে। এলাকার শিক্ষাবিদরা বলছেন— “যেখানে যোগাযোগ সহজ, সেখানেই উন্নয়ন ত্বরান্বিত হয়। এই রুটে বিআরটিসি বাস চালু হলে পুরো উপজেলাই নতুন প্রাণ ফিরে পাবে।”


বানিয়াচংবাসী মনে করেন, এটি কেবল একটি বাস চালুর দাবি নয়; এটি তাদের জীবনের সঙ্গে জড়িত ন্যায্য অধিকার। তাদের ভাষায়— “আমরা চাই না প্রতিদিন এভাবে ভোগান্তি পোহাতে। এটি শুধু একটি পরিবহন ব্যবস্থা নয়, এটি আমাদের শিক্ষার আলো, চিকিৎসার ভরসা, ব্যবসার শ্বাসপ্রশ্বাস।”


উপজেলা সদরের লক্ষ লক্ষ মানুষের এ আকাঙ্ক্ষা এখন সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণ করছে। তারা আশা করছেন, দ্রুত পদক্ষেপ নিয়ে এই রুটে বিআরটিসি বাস চালু করা হবে। কারণ এই একটি বাস সার্ভিস কেবল মানুষের দুর্ভোগ লাঘবই করবে না, বরং উন্নয়ন, স্বপ্ন আর বেঁচে থাকার সংগ্রামে নতুন দিগন্ত উন্মোচন করবে।


সিলেট প্রতিদিন / আরজে


Local Ad Space
কমেন্ট বক্স
© All rights reserved © সিলেট প্রতিদিন ২৪
পোর্টাল বাস্তবায়নে : বিডি আইটি ফ্যাক্টরি