পর্তুগাল ওয়ার্ক পারমিট ভিসায় যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন সুনামগঞ্জ জেলার ছাতক উপজেলার মইনপুর এলাকার মো. জাবেদ হোসেন। ইতিমধ্যে সেদেশ থেকে ওয়ার্ক পারমিটের কাগজও এসেছে। দালাল মারফত এই পারমিট সংগ্রহ করাতে তার ব্যয় হয়েছে কয়েক লাখ টাকা।
পারমিট অনুযায়ী ২৬ সেপ্টেম্বর ভারতের দিল্লিতে পর্তুগাল ভিসা এপ্লিকেশন সেন্টারে ফাইল জমা দেয়ার কথা জাবেদের। এজন্য তিনি ভারতীয় ভিসার জন্য অনলাইনে ফাইল আপলোড করেন। কিন্তু বারবার চেষ্টা করেও অনলাইনে ভিসা ফি দিতে পারেননি। এ কারণে ভারতীয় ভিসা এপ্লিকেশন সেন্টারে ফাইল জমা দেয়ার তারিখও পাননি।
কেবল জাবেদ নয়, এরকম ভোগান্তিতে পড়েছেন সিলেটের অনেক বিদেশগমনেচ্ছু তরুণ ও যুবক। প্রবাসীবহুল সিলেট অঞ্চল থেকে প্রতিবছরই বিপুলক সংখ্যক তরুণ ও যুবক পড়ালেখা ও চাকরির জন্য ইউরোপের বিভিন্ন দেশে পাড়ি জমান। কিন্তু ভারতীয় ভিসা না পাওয়ায় গত একছরে কমে এসেছে এই সংখ্যা। অনেকেই ইউরোপে যাওয়ার সব প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে ভারতীয় ভিসা না পেয়ে মাঝপথে আটকে আছেন।
জানা যায়, ইউরোপের কয়েকটি দেশের হাই কমিশন বাংলাদেশে নেই। এসব দেশে যাওয়ার জন্য ভারতের দিল্লিতে গিয়ে ভিসার আবেদন জমা দিতে হয়। এজন্য ভারতীয় হাই কমিশন থেকে ‘ডাবল এন্ট্রি’ নামে এক ধরণের ভিসা প্রদান করা হয়। তবে গত বছরের ৫ আগস্টের পর থেকে প্রায় একেবারেই বন্ধ রয়েছে ডাবল এন্ট্রি ভিসা। এতে বিপাকে পড়েছেন বিদেশ গশনেচ্ছুরা। কেউ কেউ একাধিকবার আবেদন জমা দিয়ে ভিসা পেতে ব্যর্থ হচ্ছেন। এতে বিশেষ করে ওয়ার্ক পারমিট নিয়ে পোল্যান্ড ও পর্তুগাল যেতে ইচ্ছুকরা মারাত্মক ক্ষতির সম্মুখীন।
এছাড়া মেডিকেল ভিসাও সহজে পাওয়া যাচ্ছে না। এতে বিপাকে পড়েছেন জরুরী চিকিৎসা প্রয়োজনে ভারতে যেতে ইচ্ছুকরা। অভিযোগ রয়েছে, একটি গোষ্টি মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে ভারতীয় মেডিকেল ভিসা পাইয়ে দিচ্ছে।
ভারতীয় হাইকমিশন থেকে সীমিত আকারে মেডিকেল ভিসা ও ডাবল এন্ট্রি ভিসা প্রদান করা হচ্ছে বলে বিভিন্ন সময়ে জানানো হলেও ডাবল এন্ট্রি ভিসা একেবারেই মিলছে না।
ভারতীয় সহকারি হাইকমিশন সূত্রের দাবি, বর্তমান রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট তো রয়েছেই; এর বাইরে হ্যাকাররাও এজন্য দায়ী। এই সূত্র বলছে, ভারতীয় ভিসা পেতে আইভিসি নামের যে ওয়েবসাইটটি রয়েছে সেটি অনেকটাই এখন হ্যাকাররা নিয়ন্ত্রণ করছে। সহকারি হাইকমিশনের পক্ষ থেকে অনানুষ্ঠানিকভাবে কয়েকজন হ্যাকার সম্পর্কে সিলেট মহানগর পুলিশসহ সংশ্লিস্ট দফরকে বিস্তারিত তথ্য দিলেও কোন ফলাফল পাওয়া যায়নি বলে জানিয়েছে হাই কমিশনের একটি সূত্র।
সিলেটস্থ ভারতীয় সহকারি হাই কমিশনের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন কর্মকর্তা বলেন, ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট পরবর্তী সময়ে ভারতীয় টুরিস্ট ভিসা বন্ধ রয়েছে। তবে জরুরি ক্ষেত্রে যেমন মেডিকেল, স্টুডেন্ট ও ডাবল এন্টি ভিসা সীমিত আকারে চালু আছে।
ওই কর্মকর্তা বলেন, একটা পর্যায়ে ভিসা করিয়ে দেওয়ার নামে একটি চক্র হাই কমিশন কর্মকর্তাদের নাম ভাঙ্গিয়ে মানুষের কাছ থেকে হাজার হাজার টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে। বিষয়টি সহকারি হাই কমিশনের দৃষ্টিগোচর হলে অনুসন্ধান শুরু করা হয়।
তিনি বলেন, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে দেখা যায় অনেকে লিখছেন তারা মেডিকেল এবং ডাবল এন্ট্রি ভিসা করিয়ে দেবেন। তিনি প্রশ্ন তুলেন, তারা ভিসা করিয়ে দেয়ার তারা কে!
তিনি বলেন, অনেকে আছেন কম্পিউটারে আবেদন প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে পারেন না। তাই তারা কোন ট্রাভেল এজেন্সি বা কম্পিউটারের দোকানের দারস্থ হন। সেখানেও সহজ সরল অনেক মানুষ প্রতারিত হচ্ছেন। ভারতীয় কোনো হসপিটাল থেকে অ্যাপোয়েন্টমেন্ট এনে দেয়ার নামে আরো কিছু টাকা নেওয়া হচ্ছে। অনেকাংশে কোন কোন দোকানদার পুরনো কারো অ্যাপয়েন্টমেন্ট নাম পরিবর্তন করে তার একটি অ্যাপয়েন্টমেন্ট তৈরি করে দেন। এরকম ক্ষেত্রে ওই ব্যক্তিকে আর ভিসা দেয়া হয় না।
তিনি আরও বলেন, হ্যাকারদের নিয়ন্ত্রণে চলে গেছে ভিসা আবেদনের ওয়েবসাইট। এর ফলে সাধারণ আবেদনকারী নির্দিষ্ট ওয়েবসাইটে ঢুকে অনলাইনের মাধ্যমে ভিসা ফি জমা না দেয়ার পাশাপাশি আবেদনকারীরা ভিসা অ্যাপ্লিকেশন সেন্টারে গিয়ে তাদের ফাইলও জমা করতে পারছেন না।
হাইকমিশন সূত্র জানায়, তারা হ্যাকারদের নিয়ন্ত্রণ করতে পারছেন না। তবে বেশ কয়েকজন হ্যাকার সনাক্ত করতে পেরেছেন। বিষয়টি তারা মহানগর পুলিশসহ বিভিন্ন জনকে অনানুষ্ঠানিক ভাবে অবগত করেছেন। কিন্তু এতে করে কোন ফলাফল পাওয়া যায়নি।
যোগাযোগ করা হলে সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশের কমিশনার মো. রেজাউল করিম বলেন, ভারতীয় ভিসা এপ্লিকেশন সেন্টারের ওয়েবসাইট হ্যাকিং হয়েছে কিনা তা আমার জানা নেই। এটা সহকারি হাইকমিশন ভালো করে বলতে পারবে।
হাই কমিশন থেকে অবগত হয়েছিলেন কি না- এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, না আমাকে কেউ অবগত করেননি। হাইকমিশন সূত্র দাবি করেছে অনানুষ্ঠানিকভাবে হ্যাকারদের একটি তালিকা আপনাকে হোয়াটসঅ্যাপ করা হয়েছিল- এমন প্রশ্নের জবাবে পুলিশ কমিশনার বলেন- না, এটা আমার জানা নেই।