সিলেট নগরীতে আকস্মিক বিদ্যুৎ বিপর্যয়ে জনজীবনে নেমে এসেছে চরম দুর্ভোগ। বৃহস্পতিবার (৩১ জুলাই) রাত সাড়ে ১১টা থেকে কোনো ধরনের পূর্ব ঘোষণা ছাড়াই একে একে অন্ধকারে ডুবে যায় নগরীর গুরুত্বপূর্ণ ও জনবহুল এলাকাগুলো।
বিদ্যুৎহীন অবস্থায় রয়েছে পশ্চিম জিন্দাবাজার, জল্লারপাড়, দাড়িয়াপাড়া, জামতলা, মির্জাজাঙ্গাল, মাসুদীঘিরপাড়, রামেরদীঘিরপাড়, লামাবাজার, রিকাবিবাজার, ভাতালিয়া, কাজলশাহ ও শেখঘাট। এসব এলাকায় অসংখ্য ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, হোটেল, ক্লিনিক, ফার্মেসি এবং আবাসিক ভবন থাকায় পরিস্থিতি আরও জটিল হয়ে পড়ে।
হঠাৎ বিদ্যুৎ চলে যাওয়ায় বিকল্প প্রস্তুতি না থাকায় অনেক বাসিন্দা পানি, বিশ্রাম এবং নিরাপত্তা সংক্রান্ত সমস্যার মুখোমুখি হন। ছাড়িয়া পাড়ার স্থানীয় বাসিন্দা শামীম আহমদ বলেন, 'রাতের এই সময়ে বিদ্যুৎ চলে যাওয়া মানে বিশ্রাম, পানি, এমনকি নিরাপত্তা নিয়েও সমস্যা দেখা দেয়া। এই গরমে বৃদ্ধ শিশুদের কষ্টের শেষ থাকে না। কোনো ধরনের বার্তা বা ব্যাখ্যা ছাড়াই এমনভাবে বিদ্যুৎ চলে যাওয়া খুবই দুঃখজনক।'
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানান অনেকে। তারা মন্তব্য করেন, কোনো প্রাকৃতিক দুর্যোগ ছাড়াই শহরের প্রাণকেন্দ্রে এত দীর্ঘ সময় বিদ্যুৎ না থাকা বিদ্যুৎ ব্যবস্থাপনার দুর্বলতাকেই প্রকাশ করে।
সাম্প্রতিক সময়ে বিদ্যুৎ সরবরাহ সংকট নিয়ে যে শঙ্কা দেখা দিয়েছিল, এই ঘটনা যেন তারই বাস্তব রূপ।
সিলেটের কুমারগাঁও ১৩২/৩৩ কেভি গ্রিড উপকেন্দ্রের ২২৫ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ কেন্দ্রটি গত ১৬ জুলাই থেকে যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে বন্ধ রয়েছে।
সংশ্লিষ্টদের দাবি, একটি ট্রান্সফরমার বিকল হয়ে পড়ায় বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ আছে এবং তা সংস্কারে কাজ চলছে। ফলে এই কেন্দ্রটি কবে নাগাদ সচল হবে সে বিষয়ে কোনো নিশ্চয়তা দিতে পারেননি প্রকৌশলীরা।
কুমারগাঁও বিদ্যুৎকেন্দ্রটি সিলেট, মৌলভীবাজার, সুনামগঞ্জ ও হবিগঞ্জে স্থানীয়ভাবে উল্লেখযোগ্য পরিমাণ বিদ্যুৎ সরবরাহ করে থাকে। সেটি বন্ধ থাকায় এখন কেবল জাতীয় গ্রিড থেকে বিদ্যুৎ আনা হচ্ছে, যেখানে চাহিদার তুলনায় সরবরাহ অনেক কম।
ফলে লোডশেডিং বেড়ে গেছে এবং তা আরও তীব্র আকার ধারণ করতে পারে বলে জানিয়েছিলেন বিদ্যুৎ বিতরণ বিভাগ।
অন্যদিকে বৃহস্পতিবার (৩১ জুলাই) সন্ধ্যায় হবিগঞ্জের শাহজীবাজার সরকারি বিদ্যুৎকেন্দ্রে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে শহর থেকে প্রায় ৩০ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত কেন্দ্রটির সিটি ও ব্রেকার অংশে আগুন ধরে যায়। আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে শায়েস্তাগঞ্জ ফায়ার সার্ভিসের একটি ইউনিট কাজ করে। তবে ততক্ষণে পুরো জেলায় পল্লী বিদ্যুতের সরবরাহ বন্ধ হয়ে যায়।
শাহজীবাজার বিদ্যুৎকেন্দ্রটি হবিগঞ্জ শহর ও আশপাশের এলাকার বিদ্যুৎ সরবরাহে একটি গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্র। ফলে এই দুর্ঘটনার পর পুরো জেলায় অন্ধকার নেমে আসে।
সিলেট অঞ্চলে চলমান বিদ্যুৎ সংকট এখন শুধু প্রযুক্তিগত সীমাবদ্ধতা নয়, মানবিক দুর্যোগেও পরিণত হয়েছে। শিশু, বৃদ্ধ ও অসুস্থদের জন্য পরিস্থিতি সবচেয়ে বেশি কষ্টকর হয়ে উঠেছে। বিদ্যুৎ না থাকায় ফ্রিজে খাবার সংরক্ষণ, পানির সংকট, ইলেকট্রনিক যন্ত্রপাতির ব্যবহার, মোবাইল চার্জ এবং মোবাইল নেটওয়ার্কসহ নানা সমস্যায় পড়ছেন মানুষ।
অসহনীয় গরমের মধ্যে ঘনঘন বিদ্যুৎ চলে যাওয়ায় জনজীবন হয়ে উঠেছে অতিষ্ঠ। বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের পক্ষ থেকে এখনো আনুষ্ঠানিক কোনো মন্তব্য না আসায় জনমনে আরও ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। দ্রুত বিদ্যুৎ সরবরাহ পুনরায় চালু করা ও পরিষ্কারভাবে তথ্য জানাতে সরকারের প্রতি জোর দাবি জানিয়েছে নগরবাসী। ভবিষ্যতে এমন পরিস্থিতি এড়াতে আগাম প্রস্তুতি ও বিকল্প ব্যবস্থা গ্রহণ জরুরি হয়ে পড়েছে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।