শনিবার, ১৩ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ০৬:২২ অপরাহ্ন

মা, চাকরি করুম, আর তোকে কষ্ট করতে হবে না

  • প্রকাশের সময় : ১৫/০৭/২০২৫ ০৫:৫০:০৯
এই শীতে ভাঙন আতঙ্কে দিন কাটছে তাদের নিহত ঢাবি ছাত্রের মায়ের আহাজারি। ছবি সংগৃহীত
Share
37

‘আমার ছেলেটা অনেক কষ্ট কইরা পড়তে ছিল। কয়দিন আগে ফোন কইয়া কইল- মা, চাকরি করুম, আর তোকে কষ্ট করতে হবে না। এখন সেই ছেলেটা আইলো না, আইলো লাশ।’

আক্ষেপ নিয়ে কথাগুলো বলছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) জগন্নাথ হলের রবীন্দ্র ভবনের ছাদ থেকে পড়ে নিহত সাঞ্জু বাড়াইকের মা অনিমা বাড়াইক। প্রতিদিন ৮ ঘণ্টা চা-বাগানে কাজ করে সাঞ্জুর পড়াশোনার খরচ চালাচ্ছিলেন তিনি।

সাঞ্জু বাড়াইক ঢাবির নৃবিজ্ঞান বিভাগে ২০২০-২১ বর্ষে পড়তেন। তার বাড়ি হবিগঞ্জের চুনারুঘাট উপজেলায়। চার ভাইয়ের মধ্যে সাঞ্জু ছিল দ্বিতীয়। তার বড় ভাই পেশায় অটোরিকশাচালক। আর বাবা মনিরোদ বাড়াইক 'গ্রাম পুলিশ' হিসেবে কর্মরত।

সোমবার ভোর সাড়ে পাঁচটার দিকে সাঞ্জুর মরদেহ উদ্ধার হয়। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন তাৎক্ষণিক জানায়, হলের ছাদ থেকে পড়ে সাঞ্জুর মৃত্যু হয়েছে।

সোমবার সাঞ্জুর বাবা বলেন, ‘ছেলেটা কোনোদিন মন্দ পথে যায়নি। ওর স্বপ্ন ছিল অফিসার হবে, সমাজ বদলাবে। এখন সব স্বপ্ন শেষ।’

চা শ্রমিক পরিবার থেকে বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া তরুণ সাঞ্জুর মৃত্যুর খবরে মর্মাহত তার সহপাঠী-বন্ধু-শিক্ষকরা।

 স্থানীয় প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক বিজয় হাজরা বলেন, ‘ওই প্রথম আমাদের বাগান থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সুযোগ পেয়েছিল। ছেলেটি ছিল আমাদের অহংকার।’

আরেক শিক্ষক সোহাগ মিয়া বলেন, ‘কোনো মেধাবী তরুণ যখন এভাবে ঝরে যায়, তখন দায় শুধু তার নয়, আমাদের সবার। সময়মতো যদি পাশে কেউ দাঁড়াত, হয়তো এ মৃত্যু দেখতে হতো না।’

বন্ধু শুভ রুদ্র বলেন, ‘কয়েকদিন ধরে সাঞ্জু খুব চুপচাপ ছিল। কারও সঙ্গে ভালোভাবে কথা বলত না। বুঝতে পারছিলাম, ওর ভেতরে কিছু একটা চলছে।’

'সাঞ্জুর মৃত্যু শুধু একটি পরিবারের নয়, পুরো ইউনিয়নের অপূরণীয় ক্ষতি' বলে মনে করছেন আহম্মদাবাদ ইউপি চেয়ারম্যান জাকির হোসেন। চুনারুঘাট সরকারি কলেজের শিক্ষার্থী কামরুল হাসান বলেন, ‘যে ছেলেটি চা-বাগান থেকে ঢাবি পর্যন্ত পৌঁছেছিল, সে হেরে গেলো। সাঞ্জুর মৃত্যু আমাদের মনে করিয়ে দেয়- মানসিক স্বাস্থ্য কোনো একক ব্যক্তির বিষয় নয়, বরং এটি সামাজিক দায়।'

মৃত্যুর আগে রোববার রাত ১২টা ৮ মিনিটে ফেসবুকে একটি পোস্ট দেন সাঞ্জু। তাতে ক্ষমা চান তিনি। ফেসবুকে সাঞ্জু বাড়াইক লিখেন, ‘আমি আমার ভুল বুঝতে পেরেছি, আমি দিনের পর দিন কাউকে ডিস্টার্ব করে গেছি। উল্টো মানুষকে দোষারোপ করা আমার একদম ঠিক হয়নি, আমি সকলের কাছে ক্ষমাপ্রার্থী। আমি দিনের পর দিন অন্যায় করেছি, নিজের দোষ ঢেকে অপরজনকে দোষ দেওয়া আমার ঠিক হয়নি। আমি সকলের কাছে ক্ষমা চাচ্ছি, আমার কারণে কারো কোনো ক্ষতি হলে সে দায় একান্তই আমার, আমি ক্ষমা চাচ্ছি।’

জগন্নাথ হলের প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. দেবাশীষ পাল বলেন, 'সকালে আমাদের পরিচ্ছন্নতাকর্মীরা কাজ করতে এসে বিকট শব্দ পেয়ে এগিয়ে গিয়ে দেখেন এক ছাত্র পড়ে রয়েছে। পরে তাৎক্ষণিক তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজে নেওয়া হয়। সেখানে চিকিৎসকরা তাকে মৃত ঘোষণা করেন।'


সিলেট প্রতিদিন / Sl


Local Ad Space
কমেন্ট বক্স
© All rights reserved © সিলেট প্রতিদিন ২৪
পোর্টাল বাস্তবায়নে : বিডি আইটি ফ্যাক্টরি