মঙ্গলবার, ১৫ জুলাই ২০২৫, ১২:৪৮ অপরাহ্ন

জাউয়াবাজারে যুবলীগ নেতার বাড়িতে সেনাবাহিনীর অভিযান : অ'স্ত্র উদ্ধার

  • প্রকাশের সময় : ০৪/০৭/২০২৫ ১১:০৮:৪৬
এই শীতে ভাঙন আতঙ্কে দিন কাটছে তাদের
Share
136

 সুনামগঞ্জের ছাতক উপজেলার ঐতিহ্যবাহী বাণিজ্যকেন্দ্র জাউয়াবাজারে প্রবাসী পরিবারের মালিকানাধীন ব্যবসা প্রতিষ্ঠান জবরদখলের অভিযোগে অভিযুক্ত আওয়ামী যুবলীগ নেতা আলমগীর হোসেনের বাড়িতে সেনাবাহিনী অভিযান চালিয়ে অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার করেছে। উদ্ধারকৃত অস্ত্রের মধ্যে রয়েছে দু’টি দেশী পাইপগান ও দু’টি বিদেশী চাবুক। গত গত বুধবার (২ জুলাই) গভীর রাতে সেনাবাহিনী এ অভিযান চালায়। সেনাবাহিনীর অভিযানের ঘটনা টের পেয়ে মৃত আরশদ আলীর ছেলে অভিযুক্ত আলমগীর হোসেন বাড়ির পিছন দিকে পালিয়ে যান। অভিযানের খবর পেয়ে আলমগীরের সাঙ্গপাঙ্গরাও নিজ নিজ অবস্থান থেকে সটকে পড়ে। 


অভিযুক্ত আলমগীর হোসেনের বাড়ি স্থানীয় বাজার সংলগ্ন জাউয়া গ্রামে এবং জাউয়াবাজার পুলিশ তদন্ত কেন্দ্র থেকে মাত্র ৫শ’গজের মধ্যে। অথচ অবৈধ অস্ত্র উদ্ধারে পুলিশের গাফিলতি নিয়ে জনমনে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। বৃহস্পতিবার (৩ জুলাই) সকালে সেনাবাহিনী উদ্ধারকৃত অস্ত্রগুলো জাউয়াবাজার পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রে জমা দিয়েছে বলে পুলিশ জানিয়েছে।


অনুসন্ধানে জানা গেছে, জাউয়া গ্রাম নিবাসী মৃত ওয়াশিদ আলীর বড় ছেলে যুক্তরাজ্য প্রবাসী জাহাঙ্গীর হোসেন নিজেদের পারিবারিক ব্যবসার খোঁজ-খবর নিতে তাঁর ছোট ভাই যুক্তরাজ্য প্রবাসী শাহজাহান হোসেনকে গত ১৩ মার্চ দেশে পাঠান। দেশে এসে শাহজাহান হোসেন কর্মচারিদের নিকট প্রতিষ্ঠানসমুহের আয়-ব্যয়ের হিসেব চাইলে নিযুক্ত কর্মচারি আলমগীর হোসেন তার কুকর্মের প্রধান সহযোগী উপজেলা বিএনপি নেতা এনাম উদ্দিন ওরফে এনামুল হকের যোগসাজশে সহযোগী সাঙ্গপাঙ্গদের নিয়ে শাহজাহান হোসেনের উপর চড়াও হয়। তারা শাহজাহান হোসেনকে মারপিট করে ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান থেকে জোরপূর্বক তাড়িয়ে দেয়। ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে শাহজাহান হোসেন বাদী হয়ে গত ২৬ এপ্রিল সুনামগঞ্জ জেলা ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে একটি মামলা দায়ের করেন। মামলা দায়েরের পর অভিযুক্ত আলমগীর হোসেন ও তার সাঙ্গপাঙ্গ জবরদখলদার চক্র শাহজাহান হোসেনকে নানা রকমের হুমকি দিতে থাকে এবং তাঁকে হত্যার অভিপ্রায়ে অপতৎপরতা শুরু করে। চরম নিরাপত্তাহীন অবস্থা পরিলক্ষিত হওয়ায় প্রবাসী পরিবার শাহজাহান হোসেনকে যুক্তরাজ্যে ফিরিয়ে নেন।


অবস্থার প্রেক্ষাপটে গত ৯ জুন জাউয়াবাজারের ব্যবসা প্রতিষ্ঠানসমুহের অন্যতম স্বত্বাধিকারী লন্ডন পুলিশের অন্যতম কর্মকর্তা জাহাঙ্গীর হোসেন তাদের পৈতৃক সম্পত্তি চিহ্নিত সন্ত্রাসী-জবরদখলদারদের হাত থেকে উদ্ধার এবং ছোট ভাইকে অন্যায়ভাবে মারপিটের প্রতিকার চেয়ে বাংলাদেশ হাই কমিশনে এক অভিযোগপত্র দাখিল করেন। অভিযোগপত্রে তিনি দেশের আইন-শৃংখলারক্ষাকারী বাহিনী বিশেষ করে বতর্মানে বিচারিক ক্ষমতাসম্পন্ন সেনাবাহিনীকে অপরাধীদের বিরুদ্ধে বলিষ্ট পদক্ষেপ গ্রহণের অনুরোধ জানান। এ অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে তথ্য পেয়ে সেনাবাহিনীর একটি টিম গত বুধবার রাতে অভিযান চালিয়ে আলমগীর হোসেনের বাড়ি থেকে এসব অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার করে। তবে পলাতক থাকায় অভিযুক্ত কাউকে গ্রেফতার করতে পারেনি।


এ প্রতিবেদকও পলাতক আলমগীর হোসেনের মোবাইল ফোনে বারবার কল দিলেও ফোন বন্ধ থাকায় তার কোন বক্তব্য জানা যায়নি।


এদিকে, লন্ডনস্থ বাংলাদেশ হাই কমিশনে পেশকৃত অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে সেনাবাহিনী অভিযান চালিয়ে প্রধান অভিযুক্ত আলমগীর হোসেনের বাড়ি থেকে অস্ত্র উদ্ধার করায় দরখাস্তকারী জাহাঙ্গীর হোসেন কৃতজ্ঞতা জানিয়েছেন। এ প্রতিবেদকের সাথে আলাপকালে তিনি জানান, ‘এই অস্ত্র উদ্ধারের মাধ্যমেই আমার পেশকৃত অভিযোগের সত্যতা প্রমাণিত হয়েছে। একজন রেমিট্যান্সযোদ্ধা হিসেবে এতে আমি খুশী। আমি আশা করবো পরবর্তী আইনী প্রক্রিয়ার মাধ্যমে দুস্কৃতকারীদের দৃষ্টান্তমুলক শাস্তি দেয়া হবে।’


স্থানীয় কয়েকজন সচেতন ব্যক্তি জাউয়াবাজারের মতো একটি প্রত্যন্ত পল্লীতে সেনাবাহিনী অভিযান চালিয়ে অস্ত্র উদ্ধারের ঘটনা এবং অভিযান অব্যাহত রাখার কথা বলায় সন্তোষ প্রকাশ করেন।  


বিক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করে তারা বলেন, ‘আদতে কুচক্রিরা ভিন্ন রাজনৈতিক প্ল্যাটফরমে অবস্থান করলেও দখলদারি, লুটপাট ও স্বার্থসিদ্ধির বিষয়ে এক কাতারে অবস্থান করে থাকে।’ তারা বলেন, ‘উক্ত আলমগীর হোসেন বিগত ফ্যাসিস্ট আওয়ামী সরকারের ইউনিয়নপর্যায়ের একজন শীর্ষ নেতা হলেও তার প্রধান সহযোগী এনাম উদ্দিন ওরফে এনামুল হক বিএনপি’র আদর্শে বিশ্বাসী এবং উপজেলাপর্যায়ের একজন বড় মাপের নেতা। এছাড়া আলমগীরের বিরুদ্ধে আরো বেশ কয়েকটি মামলা চলমান রয়েছে।’


তারা আরো জানান, ‘অথচ আমাদের নিরিবিলি ও শান্ত এলাকায় ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করতে এই চক্রটি ঐক্যবদ্ধ। বাইরে থেকে বিভিন্ন রকমের অস্ত্রশস্ত্র সংগ্রহ করে আমাদের এলাকায় অশান্তি ও নৈরাজ্য সৃষ্টি করতে তারা নানা অপতৎপরতায় লিপ্ত। আমরা প্রশাসনকে এদের ব্যাপারে সতর্ক ও সচেতন থাকার আহবান জানাচ্ছি।’


সিলেট প্রতিদিন / এএ


Local Ad Space
কমেন্ট বক্স
© All rights reserved © সিলেট প্রতিদিন ২৪
পোর্টাল বাস্তবায়নে : বিডি আইটি ফ্যাক্টরি