দু’জনের নাম ও স্বাক্ষর জাল করে সরকারি হাওররক্ষা বাঁধ প্রকল্পের পৌণে ১৬ লাখ টাকা কারসাজি করে আত্মসাত করেছেন উপজেলা বিএনপি নেতা এনাম উদ্দিন ওরফে এনামুল হক। সুনামগঞ্জের ছাতক উপজেলার জাউয়াবাজার ইউনিয়নের চাউলির হাওররক্ষা বাঁধ প্রকল্পে এমন ঘটনা ঘটেছে। গত ১৫ জুন রোববার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে এ ব্যাপারে অভিযোগ পেশ করেছেন কথিত বাঁধ প্রকল্পের দু’জন সদস্য। অভিযোগকারীরা হলেন, ১৭ নম্বর প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটি (পিআইসি) সদস্য, উপজেলার জাউয়াবাজার ইউনিয়নের জাউয়া গ্রামের মৃত আইয়ুব আলীর ছেলে আবুল খায়ের ও মৃত সাজুর আলীর ছেলে শোয়েব আহমদ।
অভিযোগসুত্রে জানা গেছে, ২০২৪-২৫ অর্থবছরে বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো-২)’র তত্বাবধানে কাজের বিনিময়ে টাকা (কাবিটা)’র অনুকূলে ছাতক উপজেলার চাউলির হাওরের বিনন্দপুর, কোনাপাড়া, বড়বিল এলাকায় প্রায় ১৫ লাখ ৭৫ হাজার টাকা ব্যয়ে ৯৭১ মিটার ডুবন্ত বাঁধ সংস্কার ও মেরামত প্রকল্পের কাজ শুরু হয়।
আবুল খায়ের ও শোয়েব আহমদ পৃথকভাবে লিখিত অভিযোগপত্রে উল্লেখ করেন, ‘প্রকল্প সম্পর্কে আমরা মোটেও অবগত নই এবং এ সংক্রান্ত কোন কাগজপত্রেও আমরা স্বাক্ষর করিনি। উপজেলা বিএনপি নেতা নিজ স্বার্থ হাসিলের অসৎ উদ্দেশ্যে আমাদের অজ্ঞাতসারে ১৭নং প্রকল্প কমিটিতে ৪ ও ৫নং সদস্য হিসেবে আমাদের নাম দেখিয়েছেন। এ প্রকল্পের কোন বৈঠকেও আমরা অংশ নেইনি অথবা কোন প্রকারের বিল-ভাউচারেও আমরা স্বাক্ষর করিনি। এ ব্যাপারে আমরা সম্পূর্ণ অজ্ঞ। অথচ ইদানিং বিভিন্ন পত্র-পত্রিকায় উক্ত প্রকল্পে দূর্নীতির সাথে আমাদের নাম দেখে আমরা বিস্মিত হয়েছি।’
তারা বলেন, ‘এ প্রকল্পের কমিটিতে সভাপতির দায়িত্বে রয়েছেন এনাম উদ্দিনের নিকটাত্মীয় কয়েছ আহমদ পীর এবং সদস্য সচিব হিসেবে কৃষক পরিচয়ে দেখানো হয়েছে উপজেলা বিএনপি নেতা এনাম উদ্দিন ওরফে এনামুল হকের ফার্মেসী ব্যবসায়ী ছেলে এহসানুল হককে। ৭ সদস্য বিশিষ্ট কমিটির ইমাম কৌটায় ৬নং সদস্য হিসেবে নাম রয়েছে উপরোক্ত বিএনপি নেতা এনাম উদ্দিন ওরফে এনামুল হকের তৃতীয় ছেলে রেদওয়ানুল হক ফাহিমকে। বাস্তবে কোনদিনও তিনি কোন মসজিদের ইমামতি করেননি। অন্য ৪ জন সদস্যের মধ্যে আমরা দু’জন ছাড়াও রয়েছেন সুমন জাকারিয়া পীর ও ইউপি সদস্য আমতর আলী। এদের প্রত্যেকের বাড়ি স্থানীয় জাউয়া গ্রামে।’
অভিযোগপত্রে তারা আরো উল্লেখ করেন, ‘বাস্তবে প্রকল্পের কোন কাজ হয়েছে কি না, তা আমাদের জানা নেই। তাছাড়া প্রকল্পটি যেহেতু আমাদের গ্রাম এলাকায়, তাই কোথাও কোন মাটিভরাটের দৃশ্যও আমাদের চোখে পড়েনি।’
এ বিষয়ে প্রকল্প সভাপতি কয়েছ আহমদ পীর সদস্যদের অভিযোগ সত্য নয় দাবি করে বলেন, ‘কি অভিযোগ করা হয়েছে জানি না। আমার জানামতে যারা অভিযোগ করেছেন তারা সবকিছু জানেন এবং সকল কাগজপত্রে স্বাক্ষর করেছেন।’
ছাতক উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. তরিকুল ইসলাম বলেন, ‘রোববার সরকারি কাজে আমি সুনামগঞ্জে ছিলাম। তাই অভিযোগগুলো দেখা হয়নি। দাখিলকৃত অভিযোগ দেখে তদন্তসাপেক্ষ যদি কেউ দোষী হয়, তবে তার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে।’
উপজেলা বিএনপি নেতা এনাম উদ্দিন ওরফে এনামুল হকের বিরুদ্ধে সরকারি হাওররক্ষা বাঁধ প্রকল্পের অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ সম্পর্কে জেলা বিএনপি নেতা অ্যাডভোকেট আব্দুল হকের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘পত্র-পত্রিকায় বিষয়টি আমরাও দেখেছি। অভিযোগের বিষয়টি যদি সত্য হয়, তবে অভিযুক্তের বিরুদ্ধে আমরা সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেবো। এ ব্যাপারে গঠনতান্ত্রিক প্রক্রিয়া অনুসরণ করা হবে।’
উপজেলা বিএনপির আহবায়ক ফরিদ উদ্দিন বলেন, ‘কারো বিরুদ্ধে অভিযোগ দিলেই তো আমরা ব্যবস্থা নিতে পারি না। আগে তদন্ত হউক, তারপর দোষী প্রমাণিত হলে আমরা দলীয়ভাবে সিদ্ধান্ত নেবো। আমি এককভাবে কোন সিদ্ধান্ত নিতে পারি না।’
প্রকল্প সদস্য ইউপি মেম্বার আমতর আলী জানান, ‘প্রকল্প কমিটির শুরুতে উপজেলা বিএনপি নেতা এনাম উদ্দিন ওরফে এনামুল হক আমার নিকট থেকে আমার জাতীয় পরিচয়পত্রের ফটোকপি নিয়েছিলেন। পরে আর কিছু জানি না। কথিত প্রকল্পটি আমাদের ওয়ার্ড এলাকায় বিধায় বাধ্যতামুলক প্রকল্পে একজন ইউপি সদস্য রাখতে হয়, এজন্য আমার নাম সংযুক্ত করা হয়েছে।’
অভিযোগ সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘এসব অভিযোগ হলেও অভিযুক্তদের কিছুই হবে না। কারণ তারা উচ্চপর্যায়ের সরকারি কর্মকর্তাদের ‘ম্যানেজ’ করে সকল অভিযোগ থেকে নির্দোষ প্রমাণিত হয়ে যাবেন। অতীতেও এমন ঘটনার অহরহ প্রমাণ রয়েছে।’