লন্ডনের উদ্দেশ্যে যাত্রা করার মুহূর্তে তোলা একটি সেলফি। পেছনে দেখা যাচ্ছে বিমানবন্দরের জানালা দিয়ে এক টুকরো আকাশ। ছবিতে প্রতীক জোশী ও তার স্ত্রী ডাঃ কোমি ব্যাস-চোখে একরাশ আশা, আর পাশে তাদের তিন শিশুপুত্র- হাসি মুখে ভবিষ্যতের দিকে পা বাড়াচ্ছে। কিন্তু সেই সেলফিটি আজ একটি স্মরণচিহ্ন, একটি পরিবারের শেষ চিহ্ন।
প্রতীক জোশী ছয় বছর ধরে যুক্তরাজ্যের লন্ডনে বসবাস করছিলেন, পেশায় একজন সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার। কঠোর পরিশ্রম আর অনিঃশেষ ধৈর্যের বিনিময়ে তিনি এক স্বপ্ন বুনেছিলেন- নিজের পরিবারের জন্য এক নিরাপদ, উন্নত ভবিষ্যৎ। তার স্ত্রী, চিকিৎসক কোমি ব্যাস ভারতে সফল ক্যারিয়ার গড়ে তুললেও, স্বামীর স্বপ্নে সঙ্গী হতে সম্প্রতি চাকরি থেকে ইস্তফা দেন।
দু’দিন আগেই সবকিছু গোছানো হয়। ব্যাগে ঠাঁই পায় শাড়ি, বই, খেলার পুতুল। ছোট সন্তানদের স্কুলের স্মৃতিপত্র, প্রিয় পুতুল আর একটি সাদা কাগজে লেখা ‘লন্ডনে নতুন জীবন’- সব যেন সাক্ষ্য দিচ্ছিল একটি রোমাঞ্চকর নতুন অধ্যায়ের সূচনার। পরিবারের পাঁচজন সদস্য শেষবারের মতো একসঙ্গে ‘বিদায়’ বলেছিল পরিচিত শহর, আত্মীয়স্বজন, শৈশব আর অতীতকে।
১২ জুন সকালে তারা উঠেছিলেন এয়ার ইন্ডিয়ার ফ্লাইট ১৭১-এ। গন্তব্য লন্ডন। কিন্তু গন্তব্যে পৌঁছানোর আগেই তাদের জীবনের গল্প থেমে যায়। বিমানটি আকাশ থেকে ভেঙ্গে পড়ে।
খবরটি দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে। আত্মীয়রা, বন্ধুরা- যারা ওই সকালের সেলফি দেখে চোখে জল ফেলেছিল আনন্দে, তারাই বিকেলে ভেঙে পড়ে কান্নায়। যে স্বপ্নে এতদিন ভরসা রেখেছিল একটি পরিবার, সেই স্বপ্নটাই আজ তাদের বিদায়ের কারণ হয়ে দাঁড়ায়।
এই দুর্ঘটনা শুধু একটি পরিবারের সমাপ্তি নয়- এ যেন আমাদের সকলের জন্য এক নির্মম উপলব্ধি: জীবন ভীষণভাবে অনিশ্চিত, ক্ষণস্থায়ী।
যে ভবিষ্যতের জন্য আমরা প্রতিনিয়ত যুদ্ধ করি, যেটির আশায় আজকের দিনটিকে বিসর্জন দিই, সেটি হয়তো আসেই না। কিংবা আসার আগেই সব শেষ হয়ে যায়।
আমরা ব্যস্ত থাকি 'একদিন ভালো থাকবো' ভেবে। কিন্তু সেই 'একদিন' যদি না আসে?এই ঘটনা আমাদের স্মরণ করিয়ে দেয়- বাঁচতে হবে এখনই, ভালোবাসতে হবে আজই।প্রতীক্ষার নয়, বর্তমানের মধ্যে খুঁজে নিতে হবে জীবনের অর্থ, আবেগ, আর শান্তি।
আজ একটি সেলফি হয়ে রইল ইতিহাসের পাতা জুড়ে। আর আমরা শিখে নিলাম, হয়তো কিছু না বলেই, জীবন কতটা ভঙ্গুর, আর ভালোবাসা কতটা জরুরি।