সরকারি নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করে ইউপি চেয়ারম্যানের সহযোগিতায় ইউপি কার্যালয়ে ঢুকে সভা করেছেন সুনামগঞ্জের ছাতক উপজেলার জাউয়াবাজার ইউনিয়নের কয়েকজন বিএনপি ও আওয়ামী লীগ নেতা। বুধবার (১১ জুন) রাতে এ ঘটনা ঘটে। এ নিয়ে এলাকায় ব্যাপক আলোচনা চলছে।
স্থানীয় সুত্রে জানা গেছে, সম্প্রতি জাউয়াবাজার ইউনিয়ন বিএনপি’র সাবেক সভাপতি, ছাতক উপজেলা বিএনপি’র বর্তমান আহবায়ক কমিটির সদস্য এনাম উদ্দিন ওরফে এনামুল হক, জাউয়াবাজার ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের একাংশের সভাপতি রেজা মিয়া তালুকদার, ইউনিয়ন যুবলীগ নেতা আলমগীর হোসেনসহ কয়েকজনের বিরুদ্ধে এক প্রবাসী পরিবারের মার্কেট ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান জবরদখলের অভিযোগ উঠে। এর পাশাপাশি বিএনপি নেতা এনাম উদ্দিন ওরফে এনামুল হকের বিরুদ্ধে সরকারি অর্থায়নে হাওর রক্ষা বাঁধ সংস্কার ও মেরামত কাজের কমিটিতে নিজের বড় ছেলে এহসানুল হককে সদস্য সচিব এবং তৃতীয় ছেলে রিদওয়ানুল হক ফাহিমকে মসজিদের ইমাম দেখিয়ে অর্থ আত্মসাৎ এবং নিজের বাড়ির আঙিনায় বড় ছেলে এহসানুল হকের নামে সরকারি ডিপ টিউবওয়েল স্থাপনসহ দলের নাম ভাঙ্গিয়ে নানা দূর্নীতির অভিযোগ উঠেছে। এ নিয়ে বিভিন্ন পত্রপত্রিকায় ইদানিং বেশ লেখালেখি হচ্ছে।
এর প্রতিবাদে গত বুধবার রাতে দূর্নীতির সহযোগী আওয়ামী লীগের দোসরদের নিয়ে তিনি এক প্রতিবাদ সমাবেশ আহবান করেন। স্থান নির্ধারণ করা হয় জাউয়াবাজার ইউপি কার্যালয়ে। তবে সরকারি প্রতিষ্ঠানে প্রতিবাদ সমাবেশের ব্যাপারে অনুমতি না থাকায় এবং উপজেলা নির্বাহী অফিসারের সাথে যোগাযোগ করতে না পারায় আয়োজকরা কিন্তু দমে যাননি।
ব্যক্তির প্রয়োজনে সরকারি প্রতিষ্ঠান ব্যবহারের ব্যাপারে নিষেধাজ্ঞা থাকা স্বত্বেও যে কোন উপায়ে আয়োজকরা চাবি সংগ্রহ করে প্রতিবাদ সমাবেশের আয়োজন করেন।
দক্ষিণ ছাতক অঞ্চলে সন্ত্রাসের চিহ্নিত গডফাদার, ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ সভাপতি রেজা মিয়া তালুকদারের সভাপতিত্বে এবং জাউয়াবাজার কলেজ ছাত্রদল নেতা আশিকুর রহমানের পরিচালনায় এতে অন্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি আকবর আলী, অন্যতম নেতা ফয়জুল করিম, যুগ্ম সম্পাদক নূর মিয়া ও গোলাম মুক্তাদির, ইউনিয়ন যুবলীগ নেতা হিরক মিয়া তালুকদার, আলমগীর হোসেন, সুজন রানাসহ আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতা-কর্মী।
এছাড়া প্রতিবাদ সমাবেশে জাউয়াবাজার ইউনিয়ন বিএনপি'র সাবেক সভাপতি ও উপজেলা বিএনপি'র বর্তমান আহবায়ক কমিটির সদস্য এনাম উদ্দিন ওরফে এনামুল হকসহ বিএনপি’রও ইউনিয়ন এবং ওয়ার্ডপর্যায়ের কয়েকজন নেতাকর্মী উপস্থিত ছিলেন বলে জানা গেছে।
সরকারি একটি প্রতিষ্ঠানে রাতের আঁধারে এভাবে সমাবেশ করার বিষয়ে জাউয়াবাজার ইউপি চেয়ারম্যান মোঃ আব্দুল হকের কাছে জানতে চাওয়া হলে তিনি বলেন, আমি আজ কয়েকদিন থেকে অসুস্থ। এছাড়া আমার ইউনিয়ন অফিসে সংস্কার কাজ চলতেছে। কোন মিটিং হয়েছে কিনা আমি জানিনা।
এ ব্যাপারে বৃহস্পতিবার রাত পৌণে ৮টায় ছাতক উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা তরিকুল ইসলামের সরকারি মোবাইল নম্বরে কল করা হলে তিনি বলেন, আসলে এখন সরকারি ছুটি চলছে। তাই আমি অফিসে নেই। এছাড়া এ রকম কোন সভা হয়েছে কিনা আমার জানা নেই।
এ ব্যাপারে জাউয়াবাজার ইউপি সদস্য আমতর আলী বলেন, সরকারিভাবে কোন সভা হয়েছে মর্মে আমরা জানি না। তবে প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, কে বা কারা আমাদের অফিসে সভা করেছে। আমাদের ইউপি কার্যালয়ে সিসিটিভি রয়েছে। ফুটেজ চেক করলে আমার বক্তব্যের সত্যতা পেয়ে যাবেন। তবে সিসিটিভি’র পাসওয়ার্ড আমার কাছে নেই, চেয়ারম্যান সাহেবের কাছে রয়েছে।
ঘটনার বিষয়ে জানতে ইউপি সদস্য আব্দুল কুদ্দুছকে কল করা হলে তিনি বলেন, গতরাতে কোন সরকারি সভা হয়নি। তবে শুনেছি, ইউপি কার্যালয়ে কে বা কারা সভা করেছে। এ ব্যাপারে আমি আপাতত আর বেশী কিছু জানি না।
সভায় অংশ নিয়েছেন এমন একজন ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি আকবর আলী। তাকে দু’বার কল দিলেও তিনি তা রিসিভ করেননি।