বিএনপি নেতাদের বাধায় পণ্ড সুনামগঞ্জের ঐতিহ্যবাহী দিরাই প্রেসক্লাবের দ্বি বার্ষিক নির্বাচন। গতকাল বুধবার (১১ জুন) ভোটগ্রহণের আগ মুহুর্তে ‘ফ্যাসিবাদের দোসর‘ আখ্যা দিয়ে নির্বাচনের সকল কার্যক্রম বন্ধ করে দেন তারা।
পরে প্রধান নির্বাচন কমিশনার রুদ্র মিজান নির্বাচন স্থগিতের ঘোষণা দিয়ে বের হয় যান। এ ঘটনায় স্থানীয় সাংবাদিকরা ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন।
দিরাই পৌর বিএনপির আহ্বায়ক মিজানুর রহমান মিজান, যুগ্ম আহবায়ক ইকবাল হোসেন চৌধুরী ও জেলা বিএনপির সদস্য আব্দুর রশিদসহ বেশ কয়েকজন বিএনপি নেতার অযাচিত হস্তক্ষেপে এ ঘটনা ঘটেছে বলে জানিয়েছেন সাংবাদিকরা।
এদিকে, প্রেসক্লাব নির্বাচনে স্থানীয় বিএনপি নেতাদের এমন হস্তক্ষেপকে দুঃখজনক বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির কেন্দ্রীয় ও জেলার নেতারা।
জানা গেছে, গতকাল বুধবার (১১ জুন) দিরাই প্রেসক্লাবের দ্বি বার্ষিক নির্বাচনের ভোটগ্রহণের নির্ধারিত দিন ছিল। বেলা দুইটার দিকে ভোটগ্রহণ শুরুর আগ মুহুর্তে দিরাই পৌর বিএনপির আহ্বায়ক মিজানুর রহমান মিজান, যুগ্ম আহ্বায়ক ইকবাল হোসেন চৌধুরী ও জেলা বিএনপির সদস্য আব্দুর রশিদসহ বেশ কয়েকজন বিএনপি নেতা প্রেসক্লাবে এসে ফ্যাসিবাদের দোসর আখ্যা দিয়ে নির্বাচন বন্ধ করতে বলেন। এক পর্যায়ে তাদের চাপে ভোটগ্রহণ বন্ধ করে নির্বাচন স্থগিত ঘোষণা করতে বাধ্য হন প্রধান নির্বাচন কমিশনার রুদ্র মিজান।
পরে এক নোটিশে পরবর্তী নির্বাচন অনুষ্ঠানের আগ পর্যন্ত আহবায়ক কমিটির মাধ্যমে প্রেসক্লাবের কার্যক্রম পরিচালনার কথা জানান প্রধান নির্বাচন কমিশনার।
এদিকে, বিএনপি নেতাদের এমন ন্যাক্কার জনক ঘটনায় ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীসহ সাংবাদিকরা।
সাংবাদিকদের অভিযোগ, পৌর বিএনপির আহ্বায়ক কমিটিতে পদ ভাগিয়ে নেয়ার পর থেকে উপজেলা প্রশাসনের বিভিন্ন দফতরে প্রভাবসৃষ্টি করে অবৈধভাবে সুবিধা নিচ্ছেন নির্বাচনে বাধাদানকারী বিএনপি নেতারা। তাদের এমন কার্যকলাপ স্থানীয় সাংবাদিকরা ভাল চোখে দেখছিলেন না। এছাড়া সাংবাদিকদের একটি অনুষ্ঠানে ইকবাল চৌধুরীকে দাওয়াত না দেয়ায় সাংবাদিকদের উপর চড়াও হয়ে প্রেসক্লাবে অধিপ্তত্য বিস্তারের অপচেষ্টা করছিলেন তিনি।
এ বিষয়ে প্রেসক্লাব নির্বাচনের প্রধান নির্বাচন কমিশনার রুদ্র মিজান জানান, দিরাই প্রেসক্লাবের নির্বাচন সম্পন্ন করার লক্ষ্যে যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণ করেছিলাম। ব্যালট পেপার মাধ্যমে ভোটগ্রহনের আগ মুহুর্তে কয়েকজন বিএনপি নেতা এসে নির্বাচন বাঁধা প্রদান করেন। তাদের বাধার মুখে নির্বাচন স্থগিত করতে বাধ্য হতে হয়েছে। স্বাধীন গণমাধ্যমের বাকস্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ কাম্য ছিল না।
এ বিষয়ে উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক আমীর হোসেনর সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি মন্তব্য করতে অপারগতা প্রকাশ করেন।
উপজেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক মঈনুদ্দিন চৌধুরী মাসুক জানান, সাংবাদিকদের সংগঠন অরাজনৈতিক সংগঠন তাদের নির্বাচন নিয়ে আমার কোনো মন্তব্য নয়।
পৌর বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক মাইদুল ইসলাম চৌধুরী জানান,প্রেসক্লাবের নির্বাচনে যারা এই নগ্ন হস্তক্ষেপ করেছে এই দায় তাদের। এর দায়দায়িত্ব বিএনপি কখনো সমর্থন করেনা। স্বাধীন গণমাধ্যমের বিশ্বাসী দল বিএনপি।
এ বিষয়ে পৌর বিএনপির আহ্বায়ক মিজানুর রহমানের সাথে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে তিনি বলেন, আমি এখন থানায় আছি। এ বিষয়ে পরে কথা বলবো।
নির্বাচনে বাধার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমি বাধা দেইনি। নির্বাচন স্থগিতের অনুরোধ করে আসছি।
পৌর বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক ইকবাল হোসেন চৌধুরী ভোটকেন্দ্রে যাওয়ার বিষয়টি স্বীকার করে বলেন, কয়েকজন বিএনপির নেতাকে নিয়ে ভোটকেন্দ্রে গিয়ে নির্বাচন স্থগিত করার জন্য নির্বাচন কমিশনকে অনুরোধ করেছি।
সুনামগঞ্জ জেলা বিএনপির আহ্বায়ক কলিম উদ্দিন মিলনের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, বিষয়টি খুবই দুঃখজনক। এমন কাজ বিএনপি কখনো সমর্থন করে না। স্বাধীন গণমাধ্যমে হস্তক্ষেপের বিষয়টি খতিয়ে দেখা হবে।
এ বিষয়ে বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক জিকে গউছ বলেন, প্রেসক্লাব নির্বাচনে বিএনপির হস্তক্ষেপ খুবই দুঃখজনক। এ বিষয়ে জেলা বিএনপিকে অবগত করবেন বলে জানান তিনি।