কাইয়ুম উল্লাস: সিলেট নগরীর মীরাবাজারে দলীয় প্রভাব খাটিয়ে এক বিএনপি নেতা কোটি টাকার মার্কেট দখলে রেখেছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। বিয়ানীবাজার উপজেলা বিএনপির সভাপতি আহমেদ রেজার বিরুদ্ধে এই অভিযোগ করেছেন ওই মার্কেটের মালিক নগরীর নাইওরপুলের বাসিন্দা ব্যবসায়ী আলহাজ্ব মো. সাইফুল হক বদরুল। এ ঘটনায় সিলেট জেলা বিএনপি তিন সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে অভিযোগ সম্পর্কে তদন্ত করছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ২০২০ সালের ১ মার্চ বিয়ানীবাজার উপজেলা বিএনপির সভাপতি আহমেদ রেজা সিলেট নগরীর মীরাবাজারের বদরুল মার্কেট ফার্ণিচার ব্যবসা করার জন্য মাসিক ১ লাখ ৩০ হাজার টাকায় ভাড়ায় নেন। এরপর থেকে তিনি বদরুল মার্কেটে ফার্ণিচার ব্যবসা করে আসছেন। ২০২৫ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারি ৫ বছরের এই চুক্তির মেয়াদ শেষ হয়েছে। চুক্তি অনুযায়ী, ৫ বছরের মেয়াদ শেষ হলে আর মেয়াদ নবায়ন হবে না।
মালিক চাওয়ামাত্র ভাড়াটে আহমেদ রেজা উচ্ছেদযোগ্য। কিন্তু চুক্তির মেয়াদ শেষ হওয়ার পরও বিএনপি নেতা আহমেদ রেজা এখনও মার্কেটের দখল ছাড়ছেন না। উল্টো তিনি ভাড়া নিয়ন্ত্রক সহকারী জজ আদালতে মামলা করে হয়রানি করছেন বলে মার্কেটের মালিক মো. সাইফুল হক বদরুল অভিযোগ করেছেন।
সরেজমিনে গিয়ে জানা গেছে, নগরীর হোটেল সুপ্রিমের পাশেই বদরুল মার্কেট। ভিতরে বিএনপি নেতা আহমেদ রেজা লোকজন দিয়ে ফার্ণিচার ব্যবসা পরিচালনা করছেন। আশপাশের ব্যবসায়ীরা জানান, বিএনপি নেতা আহমেদ রেজার সঙ্গে মার্কেটের জমিদারের সম্পর্ক ভালো যাচ্ছে না। দুজনের সম্পর্ক অবনতি হওয়ায় মালিক সাইফুল হক বদরুল চুক্তির মেয়াদ শেষে দোকান ছাড়তে বিএনপি নেতা আহমেদ রেজাকে আইনি নোটিশ দিয়েছেন। কিন্তু তিনি মার্কেটের দখল না ছেড়ে জোরপূর্বক আরও থাকার চেষ্টা করছেন। জমিদার কোনো অবস্থাতেই আহমেদ রেজাকে আর ভাড়া দিবেন না। আইনি নোটিশ দেওয়ার ৫ মাস হলেও ওই বিএনপি নেতা মার্কেটের দখল ছাড়ছেন না। এ নিয়ে সাইফুল হক বদরুল সিলেট কোতোয়ালি থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি করেছেন।
মীরাবাজারের বদরুল মার্কেটের জমিদার আলহাজ্ব সাইফুল হক বদরুল বলেন,‘আমি ৫ বছরের জন্য মার্কেট ভাড়া দিয়েছিলাম। চুক্তি অনুসারে মেয়াদ শেষ, তিনি মার্কেট খালি করে চলে যাবেন। কিন্তু বিএনপির প্রভাব দেখিয়ে মার্কেট ছাড়ছে না। চুক্তিতে বলা হয়নি, আহমেদ রেজা ভাড়া নিয়ন্ত্রক আদালতে মামলা করতে পারবেন। বরং চুক্তিতে বলা আছে, মেয়াদ শেষ হলে মালিক না চাইলে আহমেদ রেজা উচ্ছেদ হতে বাধ্য থাকবেন। কিন্তু আহমেদ রেজা বিএনপির দলীয় পরিচয়ে প্রভাব খাটিয়ে জোরপূর্বক আমার মার্কেট দখল করে আছেন। আমি এ বিষয়ে থানায়, বিএনপির জেলা ও মহানগর কমিটির কাছে অভিযোগ করেছি। কোনো সুরাহা পাচ্ছি না।’
এ বিষয়ে জানতে একাধিকবার বিয়ানীবাজার উপজেলা বিএনপির সভাপতি আহমেদ রেজার মোবাইলফোনে কল দিলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি। তবে হোয়াটসঅ্যাপে ক্ষুদেবার্তা পাঠালে তিনি লিখিত বার্তায় বলেন, এটা কোনো রাজনৈতিক ব্যাপার না, ব্যবসায়ীক। বক্তব্য নিতে চাইলে আপনি মহানগর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক ইমদাদ ভাইয়ের বক্তব্য নিতে পারেন। আমার বক্তব্য দিতে দলীয়ভাবে নিষেধ আছে।’
জানতে চাইলে সিলেট মহানগর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মো. ইমদাদ হোসেন চৌধুরী বলেন, আহমেদ রেজা চাচ্ছিলো, সে ওই মার্কেটে আরও দুই বছর থাকবে। মার্কেটের মালিককে আমিও অনুরোধ করেছিলাম, আরও দুই বছর সময় দেওয়ার জন্য। মার্কেটের মালিক আহমেদ রেজাকে সময় দিতে রাজি নন। এ অবস্থায় আহমেদ রেজা ভাড়া নিয়ন্ত্রক আদালতে মামলা করেছেন।’ এক প্রশ্নের জবাবে ইমদাদ হোসেন চৌধুরী বলেন, এটা আহমেদ রেজার ব্যক্তিগত বিষয়, এই ঝামেলায় দল তাকে কোনো শেল্টার দেওয়ার প্রশ্নই আসে না।’
সিলেট জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক এমরান আহমদ চৌধুরী বলেন,‘আহমেদ রেজার বিরুদ্ধে ওই মার্কেটের মালিকের লিখিত অভিযোগ পেয়েছি। এ বিষয়ে ৩ সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটির সদস্যরা হলেন এডভোকেট আল আছলা মুমিন, এডিশনাল পিপি ওবায়দুর রহমান ফাহমি ও পিপি বদরুল আহমদ চৌধুরী। অভিযোগের বিষয়টি তারা তদন্ত করবেন