বৃহস্পতিবার, ১১ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ০৭:২১ অপরাহ্ন

বীর মুক্তিযোদ্ধা, যুক্তরাজ্য আ.লীগের সভাপতি সুলতান মাহমুদ শরীফ আর নেই

  • প্রকাশের সময় : ২৩/০৮/২০২৫ ১১:৩১:৪০
এই শীতে ভাঙন আতঙ্কে দিন কাটছে তাদের সংগৃহীত
Share
78

বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ যুক্তরাজ্য শাখার সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা সুলতান মাহমুদ শরীফ আর নেই।লন্ডনের একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করেন।ইন্না-লিল্লাহ ওয়া ইন্নাইলাইহি রাজিউন। 


শনিবার(২৩ আগস্ট) ভোর ৩টার সময় লন্ডনের একটি  হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৮৫ বছর। 


মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করেন সিলেট সিটি কর্পোরেশনের সাবেক মেয়র ও যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মোঃ আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী। 


সুলতান মাহমুদ শরীফ, ২০১১ সাল থেকে যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগের সভাপতির দায়িত্ব পালন করছেন। মৃত্যুকালে তিনি ২ মেয়ে, নাতি নাতনী অসংখ্য গুনগ্রাহী রেখে গেছেন।


সুলতান মাহমুদ শরীফের জন্ম ১৯৪১ সালের ২৬ শে জানুয়ারী বরিশাল জেলার কতোয়ালী থানার চানপুরা ইউনিয়নের সারুখালী গ্রামে।


বর্ণাঢ্য রাজনৈতিক জীবনের অধীকারী  সুলতান মাহমুদ শরীফ, স্কুল জীবনেই তিনি বাংলাদেশ ছাত্রলীগের রাজনীতিতে সম্পৃক্ত হন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নকালে ইকবাল হল ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন তিনি। ৬২-৬৩ সালে আইয়ুব বিরোধী আন্দোলন, হোসেন সোহরাওয়ার্দীর মুক্তি আন্দোলন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের মুক্তি আন্দোলন, শিক্ষা কমিশনের রিপোর্ট বাতিলের আন্দোলনে যুক্ত ছিলেন সুলতান শরীফ। ১৯৬৩ সালে আইয়ুব বিরোধী আন্দোলনের সময় লন্ডনে একজন ছাত্রনেতা হিসেবে সামনের কাতারে ছিলেন তিনি । ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় প্রবাসে মুক্তিযুদ্ধের একজন দক্ষ সংগঠক হিসেবে তাঁর ভূমিকা ছিল অনন্য। যুক্তরাজ্যপ্রবাসী বাঙালিদের নিয়ে বিশ্ব জনমত গড়ে তুলতে আরও অনেকের সঙ্গে তিনি ছিলেন সামনের কাতারে।১৯৭১ সালের এপ্রিল মাসে লন্ডন থেকে বাংলাদেশে গিয়েও স্বাধীনতা যুদ্ধে তিনি সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করেন। 


বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে তাঁর অবদান অনেক। ব্রিটেনে বাঙালি কমিউনিটির একজন অভিভাবক হিসেবে তাকে সব সময় পাশে পেয়েছে কমিউনিটি। মা–মাটি ও মানুষের জন্য তাঁর সারাটি জীবন উৎসর্গ করেছেন। বাংলাদেশের শ্রেষ্ঠ অর্জনগুলোর সঙ্গে সুলতান মাহমুদ শরীফ ওতপ্রোতভাবে জড়িত। বিলেতে বাঙালি কমিউনটির প্রতিটি আন্দোলন সংগ্রামে তিনি একজন দিক নির্দেশক ও কান্ডারি হিসেবে আলোর পথ দেখিয়েছেন। 


দেশ ও জাতির প্রতিটি আন্দোলনে নিজেকে নিয়োজিত রেখেছেন। ১৯৬৬ সালে ছয় দফা আন্দোলন শুরু হলে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নির্দেশে তৎকালীন পাকিস্তান যুব ফেডারেশনের প্রেসিডেন্ট সুলতান মাহমুদ শরীফ ছয় দফা সম্পর্কিত দলিল ছাপিয়ে সমগ্র যুক্তরাজ্যে প্রচারের ব্যবস্থা করেন। ১৯৬৮ সালে তথাকথিত আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলাকে কেন্দ্র করে প্রবাসী বাঙালিরা পাকিস্তানী শাসকদের বিরুদ্ধে শক্তিশালী আন্দোলন গড়ে তুলেন। যুব ফেডারেশনের উদ্যোগে সে সময় লন্ডনে পাকিস্তান হাইকমিশন অভিমুখে কয়েকটি প্রতিবাদ মিছিল সংগঠিত হয় এবং পাকিস্তান হাইকমিশন ঘেরাও করা হয়। যুব ফেডারেশনের তখনকার প্রেসিডেন্ট সুলতান শরীফের নেতৃত্বে ১৯৬৯ সালের ২রা ফেব্রুয়ারী ৭/৮ হাজার বাঙালি হাইড পার্ক থেকে পাকিস্তান হাইকমিশনে গিয়ে একটি স্মারকলিপি পেশ করেন। ওইদিন সুলতান শরীফ হাইকমিশনে ঢুকে পড়েন এবং হাইকমিশন থেকে পাকিস্তানী পতাকা সরিয়ে ফেলে একটি কালো পতাকা উত্তোলণ করেন। ১৯৬৯ সালের ৩রা ফেব্রুয়ারী লন্ডনের দি টাইমস পত্রিকার প্রথমপৃষ্ঠায় পাকিস্তান হাইকমিশনের উপরে সুলতান শরীফের কালো পতাকা উত্তোলণের ছবিটি প্রকাশ করে ।  


আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলায় লন্ডন থেকে প্রবাসী বাঙালিরা বঙ্গবন্ধু কে মুক্ত করার জন্য কিউসি পাঠানোর সিদ্ধান্ত নেন। স্যার টমাস কিউসি উইলিয়ামকে পাঠাতে সুলতান মাহমুদ শরীফ ও তার স্ত্রী আইরিশ বংশোদ্ভূত ব্যারিষ্টার নোরা শরীফের ভূমিকা ছিলো অনন্য। 


আগরতলা মামলা প্রত্যাহার করার পর ১৯৬৯ সালের ২৬ অক্টোবর বঙ্গবন্ধু লন্ডনে আসেন। সুলতান শরীফ এ সময় বঙ্গবন্ধুর সাথে ছিলেন সার্বক্ষণিক। এর কিছুদিন পর যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগ ও লন্ডন আওয়ামী লীগ গঠিত হলে সুলতান মাহমুদ শরীফ লন্ডন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন।   


১৯৭০ সালের আগস্ট মাসে জেনারেল ইয়াহিয়া খান আমেরিকা যাওয়ার পথে লন্ডনের ক্লারিজস হোটেলে অবস্থান করেন। বঙ্গবন্ধুর নির্দেশে লন্ডন আওয়ামী লীগ ক্লারিজ হোটেলে বিক্ষোভ প্রদর্শন করে। বিক্ষোভকারীরা ইয়াহিয়ার সামরিক শাসনের বিরুদ্ধে ও গণতন্ত্রের পক্ষে স্লোগাণ দেয়। বিক্ষোভের এক পর্যায়ে স্বয়ং ইয়াহিয়া খান বিক্ষোভকারীদের সাথে কথা বলার জন্য আসেন। এসময় ইয়াহিয়ার সাথে কথা কাটাকাটি হয় বিক্ষোভকারীদের। সুলতান শরীফ ইয়াহিয়া খানকে সরাসরি জিজ্ঞাসা করেন আসন্ন নির্বাচনে শেখ মুজিব যদি পার্লামেন্টে সর্ববৃহৎ রাজনৈতিক দলের নেতার মর্যাদা লাভ করেন তাহলে তাকে সরকার গঠণের সুযোগ দেওয়া হবে কি না? এই প্রশ্নের সরাসরি উত্তর না দিয়ে ইয়াহিয়া খান কিছুটা অসংলগ্নভাবে বলে, আমি যে কোন মূল্যে পাকিস্তানকে রক্ষা করবো।পাকিস্তানকে ধ্বংস করার সুযোগ কাউকে দেবো না। পাকিস্তানের জন্য আমি প্রাণ দিতে রাজী আছি। 

সাথে, সাথে সুলতান মাহমুদ শরীফ এ খবরটি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের কাছে পৌছান। বাংলাদেশের সফল প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে সুখী সমৃদ্ধ আধুনিক, উন্নত বাংলাদেশ গড়তে কাজ করেছেন তিনি। জননেত্রী শেখ হাসিনার ও অত্যন্ত কাছের লোক ছিলেন তিনি। 


১৯৭১ সালে বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর জাতির পিতার নির্দেশে সুলতান মাহমুদ শরীফ দেশে চলে আসেন।

১৯৭২ সালের নভেম্বর মাসে যুবলীগের প্রতিষ্ঠা হলে শেখ ফজলুল হক মণি যুবলীগের চেয়ারম্যান হন, সুলতান শরীফ সেই কমিটির সেক্রেটারিয়েটের সদস্য ছিলেন। ১৯৭৩ সালে যুবলীগের পূর্নাঙ্গ কমিটিতে তিনি প্রেসিডিয়াম সদস্যেরও দায়িত্ব পালন করেন। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের অত্যন্ত প্রিয় ও কাছের লোক ছিলেন সুলতান মাহমুদ শরীফ।   


১৯৭৫ সালের ১৫ই আগস্টের পর সুলতান শরীফ জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের হত্যাকান্ডের বিচারের দাবিতে ছিলেন সোচ্চার। তার স্ত্রী ব্যারিস্টার নোরা শরীফও স্বামীর সঙ্গে বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচার ও বাংলাদেশের গণতন্ত্রের উদ্ধারে ঝাপিয়ে পড়েন। সামরিক শাসন বিরোধী আন্দোলন ব্রিটেনের সর্বত্র ছড়িয়ে দেওয়ার জন্য সুলতান শরীফ সমগ্র ইউরোপে ঘুরে ঘুরে বেড়িয়েছেন।


সিলেট প্রতিদিন / আরজে


Local Ad Space
কমেন্ট বক্স
© All rights reserved © সিলেট প্রতিদিন ২৪
পোর্টাল বাস্তবায়নে : বিডি আইটি ফ্যাক্টরি