বৃহস্পতিবার, ১১ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ০৩:১৯ অপরাহ্ন

বর্তমান সরকারের আমলে সব খু নি রা জামিন পায় কেমনে, রায়হানের মায়ের প্রশ্ন

  • প্রকাশের সময় : ১২/০৮/২০২৫ ০২:০৯:৩৩
এই শীতে ভাঙন আতঙ্কে দিন কাটছে তাদের সংগৃহীত
Share
40

বর্তমান সরকারের আমলে সব খুনিরা জামিন পায় কেমনে?- এমন প্রশ্ন তুলেছেন সিলেটের পুলিশ ফাঁড়িতে নির্যাতনে নিহত রায়হান আহমদের মা সালমা বেগম।


তার অভিযোগ, ‘খুনের আসামিরা জামিন পেয়ে যাওয়ায় দেশে এখন খুন খারাবি বেড়ে গেছে। সিলেটে গত কয়েকদিন অনেকগুলো মার্ডার হইছে।’


রায়হান হত্যা মামলার প্রধান আসামি পুলিশের বহিস্কৃত উপ পরিদর্শক  আকবর হোসেন ভূঁইয়া জামিনে মুক্ত হওয়ার প্রতিক্রিয়ায় সোমবার বিকেলে তিনি এমনটি বলেন।


উচ্চ আদালত থেকে জামিন পেয়ে কারামুক্ত হওয়া আকবর হোসেন দেশ ছেড়ে পালিয়ে যেতে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করে সালমা বেগম বলেন, ঘটনার পরপরই এই মামলার আসামি সংবাদকর্মী আবদুল্লাহ আল নোমান দেশ ছেড়ে পালিয়েছে। কিছুদিন আগে আরেক আসামি সাময়িক বরখাস্ত হওয়া এসআই মো. হাসান উদ্দিন জামিনে বেরিয় পালিয়ে গেছে। এবার প্রধান আসামি আকবর জামিনে ছাড়া পেলো। সেও পালিয়ে যেতে পারে।


২০২০ সালে সিলেটের বন্দর বাজার পুলিশ ফাঁড়িতে খুন হন রায়হান উদ্দিন। এই মামলার মামলার প্রধান আসামি এই ফাঁড়ির তৎকালীন ইনচার্জ আকবর হোসেন ভূঁইয়া প্রায় পাঁচ বছর ধরে কারাগারে ছিলেন।


হাইকোর্ট থেকে জামিনের আদেশ পেয়ে রোববার (১০ আগস্ট) বিকেলে তিনি সিলেট কেন্দ্রীয় কারাগার-২ থেকে ছাড়া পান।


আকবর জামিন পাওয়ার প্রতিক্রিয়ায় সালমা বেগম কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, রায়হান হত্যাকালে এসআই আকবর বন্দরবাজার ফাঁড়ির ইনচার্জের দায়িত্বে ছিলেন। তিনিই রায়হান ধরে আনেন ও অকথ্য নির্যাতন করেন। তার নির্যাতনেই আমার ছেলে মারা। এসবের সাক্ষ্যপ্রমাণও রয়েছে।  এসবের প্রমাণ থাকার পরও কিভাবে হাইকোর্ট তাকে জামিন দেয়? এইটা কেমন বিচার?


সালমা বেগম বলেন, আসামি যদি বেরিয়ে যায় তাহলে বিচার কিভাবে হবে? বিচার মানে তো কিছু কাগজ নয়। অপরাধীর শাস্তি নিশ্চিত করতে না পারলে কিসের বিচার। এতো আলোচিত ঘটনারও যদি বিচার না হয় তাহলে তো আরও রায়হানরা মারা যাবে।


সালমা বেগমপ্রেশান রেখে বলেন, ‘বর্তমান সরকারের আমলে খুনিরা সব জামিন পায় কেমনে?’ তার অভিযোগ, ‘দেশে খুন খারাবি বেড়ে গেছে। সিলেটে গত কয়েকদিন অনেকগুলো মার্ডার হইছে।’


রায়হান হত্যার বিচার নিশ্চিতে ২০২০ সালের মতো সবাইকে মাঠে নামার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, সবাই আগের মওতো আমাদের পাশে না দাঁড়ালে আমরা বিচার পেবো না। রায়হানে মরার সময় তার দুই মাসের একটি মেয়ে ছিলো। বিচার না পেলে এই মেয়ের কাছে আমি কী জবাব দেবো। আমার পুরো পরিবারটা ধ্বংস হয়ে গেছে।


সিলেট কেন্দ্রীয় কারাগার-২ এর ডেপুটি জেলার মনিরুল হাসান বলেন, ‘উচ্চ আদালত থেকে নিম্ন আদালত হয়ে জামিনের কাগজ রোববার আমাদের কাছে পৌঁছায়। পরে আনুষ্ঠানিকতা শেষ করে বিকেলেই আকবরকে মুক্তি দেওয়া হয়।’
২০২০ সালের ১০ অক্টোবর গভীর রাতে সিলেট নগরের বন্দরবাজার পুলিশ ফাঁড়িতে তুলে নিয়ে রায়হান উদ্দিনকে নির্যাতন করা হয়। পরদিন সকালে গুরুতর আহত অবস্থায় সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হলে সেখানে তাঁর মৃত্যু হয়। এ ঘটনায় দেশজুড়ে তীব্র ক্ষোভের সৃষ্টি হয়।


পরিবারের অভিযোগ, পুলিশের নির্যাতনেই তার মৃত্যু হয়েছিল।


এ ঘটনায় পুলিশি হেফাজতে মৃত্যু (নিবারণ) আইনে রায়হানের স্ত্রীর করা মামলার পর মহানগর পুলিশের একটি অনুসন্ধান কমিটি তদন্ত করে। তারা ফাঁড়িতে নিয়ে রায়হানকে নির্যাতনের সত্যতা পায়। ফাঁড়ির ইনচার্জের দায়িত্বে থাকা এসআই আকবর হোসেন ভূঁইয়াসহ চারজনকে ১২ অক্টোবর সাময়িক বরখাস্ত ও তিনজনকে প্রত্যাহার করা হয়। এরপর পুলিশি হেফাজত থেকে কনস্টেবল হারুনসহ তিনজনকে গ্রেপ্তার করে মামলার তদন্ত সংস্থা পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)। আকবরকে ৯ নভেম্বর সিলেটের কানাইঘাট সীমান্ত থেকে গ্রেপ্তার করা হয়।

২০২১ সালের ৫ মে আলোচিত এ মামলার অভিযোগপত্র আদালতে জমা দেয় পিবিআই। অভিযোগপত্রে বন্দরবাজার পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জের দায়িত্বে থাকা এসআই আকবর হোসেন ভূঁইয়াকে (৩২) প্রধান অভিযুক্ত করা হয়। অন্যরা হলেন সহকারী উপপরিদর্শক আশেক এলাহী (৪৩), কনস্টেবল মো. হারুন অর রশিদ (৩২), টিটু চন্দ্র দাস (৩৮), সাময়িক বরখাস্ত এসআই মো. হাসান উদ্দিন (৩২) ও এসআই আকবরের আত্মীয় কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার সংবাদকর্মী আবদুল্লাহ আল নোমান (৩২)।


সিলেট প্রতিদিন / আরজে


Local Ad Space
কমেন্ট বক্স
© All rights reserved © সিলেট প্রতিদিন ২৪
পোর্টাল বাস্তবায়নে : বিডি আইটি ফ্যাক্টরি