রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে ইতিহাসে প্রথমবারের মতো বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর সমাবেশ করছে। সমাবেশ উপলক্ষে জড়ো হচ্ছেন দলের নেতা-কর্মীরা।
গতকাল শুক্রবার রাত থেকেই সেখানে বিভিন্ন জেলা থেকে আসা অনেকে অবস্থান করছেন।
শনিবার (১৯ জুলাই) বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে নেতা-কর্মীরা আসতে শুরু করেছেন।
সকালে দেখা গেছে, সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের আশপাশের সড়কে অবস্থান করছে কয়েক শ বাস। এসব বাসে জামায়াতের নেতা-কর্মীরা দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে সমাবেশে যোগ দিতে এসেছেন।
নেতা-কর্মীদের অনেকে জামায়াতের লোগো সংবলিত টি-শার্ট পরেছেন। কারও কারও মাথায় বাঁধা দলীয় ফিতা। অনেকে এনেছেন দলীয় প্রতীক দাঁড়িপাল্লা নিয়ে।
সমাবেশ সফল করতে জামায়াত ব্যাপক প্রস্তুতি নিয়েছে। সমাবেশে সারা দেশ থেকে প্রায় ১০ লাখ নেতা-কর্মীর সমাগমের আশা করছেন দলটির নেতারা।
নেতা-কর্মীদের আনতে চার জোড়া বিশেষ ট্রেন ভাড়া করেছে দলটি।
সকাল ১০টা থেকে সমাবেশের আনুষ্ঠানিকতা শুরুর কথা রয়েছে।
মূল অনুষ্ঠান শুরু হবে দুপুর ২টায়। সমাবেশস্থলে ২০টি পয়েন্টে প্রায় ৬ হাজার স্বেচ্ছাসেবক দায়িত্ব পালন করছেন।
দলের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতা-কর্মীরা বলছেন, শনিবারের সমাবেশ হচ্ছে ফ্যাসিবাদমুক্ত বাংলাদেশ গড়ার ঐতিহাসিক মহড়া। নির্বাচনের আগে এ সমাবেশ হবে দেশের রাজনীতির টার্নিং পয়েন্ট।
দলটির কেন্দ্রীয় সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল অ্যাডভোকেট এহসানুল মাহবুব জুবায়ের বলেন, সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে এটাই দলীয় ইতিহাসের প্রথম সমাবেশ। আগে পুরানা পল্টন, বায়তুল মোকাররম, পল্টন ময়দানসহ রাজধানীর বিভিন্ন জায়গায় অসংখ্য রাজনৈতিক কর্মসূচি করেছে জামায়াতে ইসলামী। কিন্তু ১৯ জুলাই রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে প্রথম ‘জাতীয় সমাবেশ’ করতে যাচ্ছি আমরা।
জামায়াতকর্মীদের প্রতি নির্দেশনা
বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল ও জাতীয় সমাবেশ বাস্তবায়ন কমিটির আহ্বায়ক মিয়া গোলাম পরওয়ার সমাবেশে সফল করতে নেতা-কর্মীদের প্রতি কিছু নির্দেশনা দিয়েছেন। শুক্রবার (১৮ জুলাই) তার স্বাক্ষর করা এক বিজ্ঞপ্তিতে এই নির্দেশনা দেওয়া হয়।
নির্দেশনার মধ্যে রয়েছে-
১) সবাইকে সমাবেশস্থল সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে পৌঁছানোর চেষ্টা করা ও মাঠ কানায় কানায় পূর্ণ করা।
২) আমিরে জামায়াতের বক্তব্য শেষ না হওয়া পর্যন্ত কোনো ব্যক্তি নিজস্ব স্থান থেকে সরবেন না।
৩) বৃষ্টি হলেও যার যার অবস্থানে বসে থাকতে হবে।
৪) জাতীয় পতাকা ব্যতীত ভিন্ন কোনো পতাকা প্রদর্শন করা যাবে না।
৫) মিছিল নিয়ে আসার ক্ষেত্রে ক্রিয়াশীল কোনো রাজনৈতিক দল বা ব্যক্তির বিরুদ্ধে স্লোগান দেওয়া যাবে না।
৬) যাতায়াত ও সমাবেশস্থলে বয়স্ক ও শিশুদের (যদি আসে) অগ্রাধিকার দেওয়া।
৭) সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের চারপাশে ১৫টি মেডিকেল বুথ ও প্রয়োজনীয় সংখ্যক ডাক্তার থাকবেন। কোনো ব্যক্তি অসুস্থ হলে পার্শ্ববর্তী মেডিকেল বুথ থেকে চিকিৎসাসেবা গ্রহণ করতে পারবেন।
৮) অভ্যর্থনা কেন্দ্র ও সমাবেশস্থলে আমাদের পোশাকধারী স্বেচ্ছাসেবক থাকবে। শৃঙ্খলার স্বার্থে তাদের নির্দেশনা অনুসরণ করতে হবে।
৯) প্রত্যেকে সম্ভব হলে চাহিদামতো খাবার পানির বোতল সংগ্রহে রাখবেন।
১০) সমাবেশের কার্যক্রম শেষ হলে দ্রুত সময়ে সভাস্থল ত্যাগ করা।
আগত গাড়িসংক্রান্ত নির্দেশনা-
১) প্রত্যেক গাড়ির সামনের দিকে নির্দিষ্ট তথ্যসহ স্টিকার লাগানো। যেখানে অঞ্চলের নাম, ড্রপিং পয়েন্ট, পার্কিং প্লেস, ড্রাইভারের নাম ও মোবাইল নম্বর, সংশ্লিষ্ট গাড়ির দায়িত্বশীলের নাম ও মোবাইল নম্বর লেখা থাকবে।
২) প্রত্যেক শাখা থেকে আগত গাড়িগুলো যতদূর সম্ভব একসঙ্গে রওনা করবে।
৩) ঢাকার ফ্লাইওভারে কোনো গাড়ি উঠবে না।
৪) গাড়িগুলো নির্দিষ্ট ড্রপিং পয়েন্টে ড্রপ করা এবং নির্ধারিত পার্কিং এরিয়ায় পার্কিং নিশ্চিত করা।
৫) সকাল ১০টার মধ্যে সব গাড়ি ঢাকায় নির্দিষ্ট ড্রপিং পয়েন্টে পৌঁছানোর চেষ্টা করা।
৬) কোনো গাড়ি নির্ধারিত ড্রপিং পয়েন্টে আসতে বা পৌঁছানো অসম্ভব হলে, যেখানে সম্ভব সেখানে গাড়ি অবস্থান করবে এবং প্রোগ্রাম শেষে সবাইকে সেখান থেকেই গাড়িতে উঠতে বলতে হবে।
৭) লাইনের গাড়িগুলো যথাসম্ভব নিজস্ব পার্কিংয়ে রাখার উদ্যোগ নেওয়া।
৮) গাড়ি পার্কিংয়ের সময় সিঙ্গেল লাইন পার্কিং করা এবং অন্য গাড়ির প্রবেশ ও বের হওয়ার জায়গা রাখা।
৯) ড্রপিং পয়েন্ট ও পার্কিং এরিয়ায় দায়িত্বপ্রাপ্ত ট্রাফিক এবং স্বেচ্ছাসেবকদের নির্দেশনা মেনে চলা।
১০) সায়েদাবাদ, পোস্তগোলা, কদমতলী, মাতুয়াইল, কমলাপুর রেলস্টেশন, গাবতলী, মহাখালী, মানিক মিয়া অ্যাভিনিউ, উত্তরা আজমপুর এবং সদরঘাটে ১০টি স্থানে অভ্যর্থনাকেন্দ্র থাকবে। প্রয়োজনে অভ্যর্থনাকেন্দ্র থেকে সহযোগিতা নেওয়া যাবে।
সমাবেশে বিএনপিসহ সব দলকে আমন্ত্রণ
জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে ৭ দফা দাবিতে ঢাকার সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে সমাবেশের আয়োজন করেছে জামায়াতে ইসলামী। সমাবেশ উপলক্ষে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি), এনসিপি সহ ফ্যাসিবাদবিরোধী সব রাজনৈতিক দলকে আমন্ত্রণ করেছে দলটি। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন দলটির ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সহকারী প্রচার সম্পাদক আব্দুস সাত্তার সুমন।