এক রাশেদুলে শুধু তোলপাড়ই নয়, রীতিমতো আতঙ্কিত হয়ে পড়েছেন সিলেটের লিডিং ইউনিভার্সিটির আইন বিভাগের কয়েকজন শিক্ষার্থী। তারা তার বিরুদ্ধে নানা হয়রানীর অভিযোগ তুলেছেন। এরমধ্যে সবচেয়ে গুরুতর অভিযোগটি হচ্ছে পরীক্ষায় অকৃতকার্য রেখে দেয়া। এছাড়া প্রতিক্রিয়াশীল রাজনীতির সাথে সংশ্লিষ্টতা ইত্যাদি।
সিলেটের বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় লিডিং ইউনিভার্সিটির আইন বিভাগের প্রক্টর সহযোগী অধ্যাপক রাশেদুল ইসলামকে নিয়ে মারাত্মক আতঙ্কে ভুগছেন বিভিন্ন ব্যাচের শিক্ষার্থী যারা ছাত্রলীগের রাজনীতির সাথে জড়িত। তাদের ঘাড়ে মার্কবিহীন ভাইবা পরীক্ষা চায়িয়ে দেয়া হয়।ভার্চুয়াল পরিক্ষা শুরুর দিকে কিছু শিক্ষার্থী পরীক্ষায় বসতে অনিচ্ছুক ছিল। পরবর্তীতে ডিপার্টমেন্টের ছাত্রলীগের রাজনীতির সাথে সম্পৃক্ত কিছু শিক্ষার্থীর হস্তক্ষেপে পরীক্ষা বর্জনকারী শিক্ষার্থীদের একাংশ পরীক্ষায় বসতে চান।কিন্তু রাশেদুল ইসলামের চক্ষুশূল হওয়ায় তারা আর বসতে পারেননি।পরবর্তীতে তারা ভিসি বরাবর অভিযোগও করেন।এছাড়াও তার বিরুদ্ধে স্বেচ্ছাচারীতার অভিযোগও আছে।
তাদের নাকি অকৃতকার্য রাখার হুমকি দিয়েছেন বিভাগীয় প্রধান ও সহযোগী অধ্যাপক রাশেদুল ইসলাম। তাদের অপরাধ, তারা ছত্রলীগের রাজনীতির সাথে জড়িত।
বিষয়টি অবগত করে গত ২৫ ফেব্রুয়ারি লিডিং ভাইস চ্যান্সেলরের কাছে লিখিত অভিযোগ দিয়েছিলেন। যদিও তাদের অভিযোগ আমলে নেয়া হয়নি বলেও জানিয়েছেন তারা। উল্টো তাদের মধ্যে কয়েকজনকে ভার্চুয়াল ক্লাসে অনিয়মসহ অন্যান্য অনিয়মের দায়ে অভিযুক্ত করে কঠোর হুঁশিয়ারি দেয়া হয়েছে।
জানা গেছে, লিডিং ইউনিভার্সিটির আইন বিভাগের কায়েকজন ছাত্রছাত্রী ছাত্রলীগের রাজনীতির সাথে জড়িত। নাম প্রকাশ না করার শর্তে তাদের কয়েকজন জানান, বিভাগীয় প্রধান সহযোগী অধ্যাপক রাশেদুল ইসলাম ছাত্র জীবনে শিবির এবং বর্তমানে জামায়াতের রাজনীতির সাথে জড়িত। প্রতিহিংসাপরায়ণ হয়ে তিনি ঐ শিক্ষার্থীদের নানাভাবে পরীক্ষায় অকৃতকার্য রাখার হুমকি দিচ্ছিলেন।
তার এসব হুমকিতে ভীত ১৪ জন শিক্ষার্থী ভিসি বরাবর গত ২৫ ফেব্রুয়ারি সার্বিক বিষয় অবগত করে একটি আবেদন করেন। এতেও কোন প্রতিকার তারা পাননি। বরং বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছে তাদের নামে মিথ্যা তথ্য উপস্থাপন করা হয় এবং তাদের কাযেকজনকে ডিপার্টমেন্টের অফিসিয়াল ফেসবুক গ্রুপ থেকে ব্যান করা হয়। এমনকি পরের সেমিস্টারে তারা ক্লাস শুরু করতে চাইলে রাশেদুল ইসলাম তাদের ‘দেখে নেয়ার’ হুমকি দেয়ার পাশাপাশি গালিগালাজও করেন। তার এইসব গালিগালাজ ও হুমকি ধমকির অডিও রেকর্ডও তাদের কাছে আছে বলেও তারা তাদের আবেদনে উল্লেখ করেন। তাছাড়া পূণরায় ক্লাস শুরু করতে চাইলে তাদের কঠিন শর্ত জারি করে নোটিশ দেয়া হয় যা আগে কখনো কোন ব্যাচের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য ছিলনা। তারা এসব অভিযোগ জানানোর পাশাপাশি ১৮ ক্রেডিট নিয়ে পড়াশোনার সুযোগও চেয়েছিলেন।
অপর একজন ভুক্তভোগী জানান, অভিযোগ দেয়ার পর তাদের আরও বেশি হয়রানি করা হয়। বিশেষ করে তারা মানসিক নির্যাতনের শিকার হন। তাদের কয়েকজনকে কয়েকটি সামাজিক সংগঠন থেকে কারণ দর্শানোর সুযোগ না দিয়েই বহিস্কার করা হয়েছে। আর ১৬ জুন ২০২১ তারিখ তাদের তিনজনকে সতর্ক করে টিঠি দেয়া হয়েছে।
এমনকি আগামী ১৩ আগস্ট থেকে শুরু হওয়া পরীক্ষায়ও তাদের আটকে দেয়ার হুমকি নানা মাধ্যমে পাওয়া যাচ্ছে বলেও অভিযুক্তরা জানান। এমনকি তারা এও উল্লেখ করেন যে, বিশ্বাবিদ্যালয় ট্রাস্টি বোর্ডের চেয়ারম্যানের সাথে পিতাপূত্রের মতো সম্পর্কের কারণে বিশ্ববিদ্যালয়ের সাথে সংশ্লিষ্ট কেউই তার বিরুদ্ধে অবস্থান নিতে পারেন না। আর তিনিও সবার উপরে নির্যাতনের ছড়ি ঘুরিয়েই চলেছেন।
বিষয়টি নিয়ে আলাপকালে সহযোগী অধ্যাপক, প্রক্টর ও আইন বিভাগের প্রধান রাশেদুল ইসলাম সব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। তিনি জানান, কয়েকজন শিক্ষার্থী নিজেরা যেমন ভার্চুয়াল ক্লাসে অংশ নিতে চায়নি তেমনি অন্যান্যদেরও এ থেকে বিরত রাখতে নানাভাবে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করেছিল। তাদের কঠোর শাস্তি দেয়ার কথা থাকলেও তারা আমাদের সন্তানতুল্য হওয়ায় এবং সফলভাবে শিক্ষাজীবন সমাপ্ত করতে আমরা তাদের কেবল সতর্ক করে দিয়েছি মাত্র।
আর তার জামায়াত-শিবির সংশ্লিষ্টতা প্রসঙ্গে তিনি বলেছেন, এটিও ডাহা মিথ্যা অপবাদ। ওরাই ছড়াচ্ছে হয়ত। আমার জঙ্গী বিরোধী তৎপরতা ও অবদান বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষসহ প্রশাসনের সবাই অবগত।