প্রতিবছর সৌদি আরবের সঙ্গে মিল রেখে দেশের বিভিন্ন জেলার বিভিন্ন এলাকায় পবিত্র ঈদুল ফিতর উদযাপিত হয়। এবারও শরীয়তপুর, বাগেরহাট, বরিশাল, চট্টগ্রাম এবং দিনাজপুরসহ বিভিন্ন এলাকায় ঈদ উদযাপিত হচ্ছে। আজ শনিবার (৯ জুলাই) সকাল থেকেই সেসব এলাকায় পবিত্র ঈদুল আজহার নামাজ অনুষ্ঠিত হয়। দেখে নেয়া যাক আজ দেশের কোথায় পালিত হচ্ছে পবিত্র ঈদুল আজহা।
শরীয়তপুর: শরীয়তপুরের ৩০ গ্রামের মানুষ পবিত্র ঈদুল আজহা উদযাপন করছেন। এরা সবাই শরীয়তপুরের সুরেশ্বর দরবার শরীফের অনুসারী।
শনিবার (৯ জুলাই) সকাল ৯.৪০ মিনিটে সুরেশ্বর দরবার শরীফের মাঠে ঈদের নামাজ অনুষ্ঠিত হয়েছে। দরবার শরীফের গদিনশীন পীর ছৈয়দ শাহ নুরে কামাল নুরীর ভাই ছৈয়দ শাহ নুরে বেলাল নুরী নামাজে ইমামতি করেন। নামাজ শেষে করা হয় বিশেষ দোয়া-মোনাজাত।
ঈদের নামাজ শেষে পীর ছৈয়দ শাহ নুরে কামাল নুরী বলেন, জিলহজের ৯ তারিখ হজ্জ ও ১০ জিলহজ ঈদুল আজহা। গতকাল হজ পালিত হয়েছে। তাই আজ ঈদুল আজহা পালন করব। নবী বলেছেন হজের পরের দিনই ঈদ হবে। তাই আমরা এই দিনই ঈদ করব। আমরা আরবি তারিখ ও মধ্য প্রাচ্যের সঙ্গে মিল রেখে রোজা ও ঈদ পালন করি।
তিনি আরও বলেন, আজ সকাল ৯.৪০ মিনিটে ঈদুল আজহার নামাজ অনুষ্ঠিত হয়। শরীয়তপুর ছাড়াও দেশের বিভিন্ন স্থানে থাকা দরবার শরীফের মুরিদরা আজ ঈদের নামাজ আদায় করেছেন। নামাজ শেষ বিশ্ব উম্মাহর জন্য দোয়া করা হয়।
জানা গেছে, দরবার শরীফের অনুসারীরা প্রায় ১০০ বছরের বেশি সময় ধরে মধ্যপ্রাচ্যের সঙ্গে মিল রেখে রোজা পালন ও ঈদ উদযাপন করে আসছেন।
বাগেরহাট: বাগেরহাটের মোংলায় ঈদ-উল আজহা পালন করছে কয়েকয়টি গ্রামের শতাধিক পরিবার। শনিবার (৯ জুলাই) সকালে উপজেলার সুন্দরবন ইউনিয়নের চটেরহাট বাজার জামে মসজিদে ঈদ-উল আজহার জামাত অনুষ্ঠিত হয়।
সকাল সাড়ে ৭টায় অনুষ্ঠিত ঈদের নামাজে ইমামতি করেন মসজিদের ইমাম ও খতিব বেল্লাল সরদার। এদিন উপজেলার বিভিন্ন এলাকার দুই শতাধিক মুসল্লি ঈদের নামাজ আদায় করেন। মুসল্লিদের নিরাপত্তা ও স্বাস্থ্যবিধি নিশ্চিত করতে পুলিশ মোতায়েন ছিল মসজিদ এলাকায়।
প্রায় ৪৫ বছর ধরে মোংলা উপজেলার কয়েকটি গ্রামের মানুষ আরব দেশগুলোর সঙ্গে মিল রেখে ঈদ উদযাপন করে থাকেন।
চটেরহাট বাজার জামে মসজিদের ইমাম ও খতিব বেল্লাল সরদার বলেন, সৌদি আরবের সঙ্গে বাংলাদেশের সময়ের পার্থক্য মাত্র তিন থেকে সাড়ে ৩ ঘণ্টার। আর এ সময়টুকুর কারণে পুরো দিনের পাথর্ক্য হতে পারে না। তাই আমরা সৌদি আরবের সঙ্গে মিল রেখে ঈদের নামাজ আদায় করেছি।
বিগত বছরের তুলনায় এবারের জামায়াতে মুসল্লির উপস্থিতি বেশি ছিল। ঈদের নামাজ শেষে যে যার সাধ্যমতো পশু কোরবানি করছেন বলেও জানান তিনি।
বরিশাল: বরিশাল মহানগর ও জেলার কমপক্ষে ২০ গ্রামে আজ ঈদুল আজহা উদযাপিত হচ্ছে। শনিবার (৯ জুলাই) চট্টগ্রামের চন্দনাইশ জাহাগীরিয়া শাহসুফি মমতাজিয়া দরবার শরীফ, সাতকানিয়া মির্জাখালী দরবার শরীফ এবং আহমাদিয়া জামাতের (কাদেরিয়া তরিকার) অনুসারীরা এই ঈদ উদযাপন করছেন। অনুসারী প্রায় পাঁচ হাজারের অধিক পরিবারে চলছে ঈদের আমেজ।
এসব গ্রামে সকাল ৮টা থেকে ৯টার মধ্যে শেষ হয়েছে ঈদের জামাত।
পূর্ব হরিনাফুলিয়া চৌধুরীবাড়ি শাহসুফী মমতাজিয়া জামে মসজিদের সভাপতি মমিন উদ্দিন কালু জানিয়েছেন, বরিশাল নগর ও জেলার বিভিন্ন গ্রামে হাজার হাজার পরিবারে সৌদি আরবের সঙ্গে মিল রেখে ঈদ উদযাপন করছি। আমরা যুগ যুগ ধরে এভাবেই ধর্মীয় আচার পালন করি। আমাদের মসজিদে সকাল ৮টায় ঈদের জামাত অনুষ্ঠিত হয়। এতে ইমামতি করেন মাওলানা আবু জাফর। এ ছাড়া নগরীর ২২, ২৩, ২৪, ২৫ ও ২৬ নম্বর ওয়ার্ডের সহস্রাধিক মানুষ ঈদ উদযাপন করছেন।
২৩ নম্বর ওয়ার্ডের তাজকাঠী হাজিবাড়ির জাহাগীরিয়া শাহসুফি মমতাজিয়া জামে মসজিদ কমিটির সভাপতি আমীর হোসেন জানান, গাজকাঠি, সাগরদী এলাকার প্রায় ৫শ পরিবার ত্যাগের মহিমায় আজ ঈদ উদযাপন করছে। আমাদের মসজিদে সকাল সাড়ে ৮টায় জামাত অনুষ্ঠিত হয়।
বাবুগঞ্জ উপজেলার খানপুরা গ্রামের আব্দুর রশীদ শিকদার স্মৃতি জামে মসজিদের সাধারণ সম্পাদক নজরুল ইসলাম জানিয়েছেন, চন্দনাইশ দরবার শরীফের সবাই সৌদি আরবের সঙ্গে মিল রেখে ঈদ উদযাপন করছে। খানপুরাসহ কেদারপুর, মাধবপাশা এবং আশপাশের আরও ৬/৭টি গ্রামের মানুষ ঈদ উদযাপন করছে।
তিনি জানান, বরিশাল সদর উপজেলার ৫টি গ্রাম এবং মেহেন্দীগঞ্জ, হিজলা, মুলাদী উপজেলায় চন্দনাইশ দরবারের কমপক্ষে আড়াই হাজার মানুষ আজ ঈদ পালন করছেন।
চট্টগ্রাম: চট্টগ্রামের ৭০টি গ্রামে আজ শনিবার (৯ জুলাই) পবিত্র ঈদুল আজহা উদযাপিত হচ্ছে। সাতকানিয়া উপজেলার মির্জাখীল দরবার শরীফের অনুসারীরা এই ঈদ উদযাপন করছেন।
শনিবার সকালে চন্দনাইশের জাহাঁগিরিয়া শাহসুফি মমতাজিয়া দরবার শরীফে ঈদের নামাজ আদায় করেন মির্জাখীল দরবার শরীফের অনুসারীরা। নামাজে ইমামতি করেন হযরত শাহছুফি সৈয়্যদ মোহাম্মদ আলী।
জাহাঁগিরিয়া শাহসুফি মমতাজিয়া দরবার শরীফের শাহজাদা মো. মতি মিয়া মনসুর বলেন, আমরা আজ ঈদুল আজহার নামাজ আদায় করেছি। নামাজ শেষে দেশবাসীর শান্তি কামনায় দোয়া করা হয়েছে। চট্টগ্রামের ৭০টি গ্রামে ঈদ উদযাপিত হচ্ছে।
তিনি বলেন, দরবার শরীফের অনুসারীরা হানাফি মাজহাবের মতে বিশ্বের যেকোনো দেশে চাঁদ দেখার ওপর নির্ভর করে ঈদসহ সব মুসলিম ধর্মীয় রীতিনীতি পালন করে। এটি প্রায় ২৫০ বছর আগে থেকে চলে আসছে।
জানা গেছে, চট্টগ্রামের সাতকানিয়ার মির্জাখীল, এওচিয়া, সোনাকানিয়া, গারাঙ্গিয়া, চরতী, বাজালিয়া, ছদাহা, কেওচিয়া ও গাটিয়াডেঙ্গা, লোহাগাড়ার কলাউজান, বড়হাতিয়া, পুটিবিলা, চরম্বা ও চুনতি, চন্দনাইশের পশ্চিম এলাহাবাদ, কাঞ্চননগর, হারালা, সাতবাড়িয়া, বরকল, দোহাজারী, কেশুয়া, জুনিগোনা, আব্বাসপাড়া, বাথুয়া, বাঁশখালীর জালিয়াপাড়া, ছনুয়া, মক্ষিরচর, চাম্বল, শেখেরখীল, গুনাগড়ি, চুনতি, ডোংরা, তৈলারদ্বীপ ও কালিপুর, পটিয়ার হাইদগাঁও, বাহুলী ও ভেল্লাপাড়া এবং বোয়ালখালী ও ফটিকছড়ি, সন্দ্বীপসহ বিভিন্ন এলাকার ৭০টি গ্রামের অনেক মানুষ ঈদ উদযাপন করছেন।
নামাজ শেষে আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের আশায় তারা পশু কোরবানি করেছেন।
দিনাজপুর: দিনাজপুর জেলায় এবার ১৩টি উপজেলায় প্রায় ৪৫টি ঈদের জামাত অনুষ্ঠিত হয়েছে।
আজ শনিবার (৯ জুলাই) দিনাজপুরের শহর, চিরিরবন্দর, বিরল, কাহারোল, বিরামপুর উপজেলাসহ বেশ কিছু এলাকায় সৌদি আরবের সঙ্গে মিল রেখে পবিত্র ঈদুল আজহা উদযাপন করেছে এসব পরিবার।
সকাল ৭টা ৪৫ মিনিটে দিনাজপুর শহরের একটি কমিউনিটি সেন্টারে শহরের ইন্টারন্যাশনাল ফ্যামেলি কেয়ার মাদ্রাসার শিক্ষক আব্দুর রাজ্জাকের ইমামতিতে নারী-পুরুষসহ দুই শতাধিক মুসল্লি সৌদির সঙ্গে মিল রেখে পবিত্র ঈদুল আজহার নামাজ আদায় করেন।
এ ছাড়া শহরের নিউটাউন, ফুলতলা, কাচারির পেছনে ইসলামবাগ,কাহারোল উপজেলার জয়নন্দ ও গড়েয়া, বিরামপুর উপজেলার দুইটি গ্রামে, চিরিরবন্দর উপজেলার সাইতাড়া গ্রাম, বিরল উপজেলার কামদেবপুর ও কাজিপাড়া ঈদের জামাত অনুষ্ঠিত হয়।
ঈদ উদযাপন কমিটির সভাপতি মকবুল হোসেন জানান, এবার জেলার ১৩ থানায় প্রায় ৪৫টি ঈদের জামাত অনুষ্ঠিত হয়েছে।