রুশ বাহিনীর বিরুদ্ধে পাল্টা আক্রমণ শুরু করতে কিয়েভ প্রস্তুত বলে মন্তব্য করেছেন ইউক্রেনের শীর্ষ নিরাপত্তা কর্মকর্তা ওলেকসি দানিলভ। ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসিকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি এমন দাবি করেন। যদিও এ আক্রমণ কবে করা হবে তা নির্দিষ্ট করে উল্লেখ করেননি দানিলভ।
ইউক্রেনের জাতীয় নিরাপত্তা ও প্রতিরক্ষা কাউন্সিলের সেক্রেটারি হিসেবে দানিলভ প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কির যুদ্ধ মন্ত্রিসভার কেন্দ্রবিন্দুতে অবস্থান করছেন। তাই স্বাভাবিকভাবেই তার মতামত বা সিদ্ধান্তের যথেষ্ট গুরুত্ব রয়েছে।
বিবিসির সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, পুতিন বাহিনীর নিয়ন্ত্রণ থেকে ইউক্রেনীয় ভূখণ্ড পুনরুদ্ধারে শিগগিরই বড়সড় আক্রমণ শুরু করবো আমরা। এটা কাল, পরশু বা সপ্তাহখানেকের মধ্যেই শুরু হতে পারে।
দানিলভ জানিয়েছেন, যখন কমান্ডাররা মনে করবেন, যুদ্ধের এই পর্যায়ে সবচেয়ে ভালো ফল করার সম্ভাবনা রয়েছে, আমাদের সশস্ত্র বাহিনী তখনই আক্রমণ শুরু করবে।
দানিলভ আরও বলেন, পাল্টা-আক্রমণের এ সিদ্ধান্ত নিয়ে ইউক্রেন সরকারের ভুল করার কোনো অধিকার নেই। কারণ এটি একটি ঐতিহাসিক সুযোগ, যা কোনোভাবেই হারানো যাবে না।
সাক্ষাৎকারে তিনি বাখমুত শহর থেকে ওয়াগনারের কিছু যোদ্ধাকে সরিয়ে নেওয়া হচ্ছে বলেও নিশ্চিত করেন। বলেন, রাশিয়ার ওই ভাড়াটে বাহিনীকে অন্য তিনটি স্থানে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। তবে তার মানে এই না যে, তারা আমাদের সঙ্গে যুদ্ধ থামিয়ে দিচ্ছে।
বেলারুশে রাশিয়ার পারমাণবিক অস্ত্র মোতায়েন শুরু নিয়ে খুব একটা চিন্তিত না জানিয়ে দানিলভ বলেন, এটা আমাদের জন্য তেমন কোনো বিপজ্জনক খবর না।
ইউক্রেইনের সশস্ত্র বাহিনী পাল্টা-আক্রমণের জন্য প্রস্তুত কি না এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমরা সবসময় প্রস্তুত, যেমনটা আমরা যেকোনো সময়ে আমাদের দেশের প্রতিরক্ষায় প্রস্তুত থাকি। আমাদের বুঝতে হবে যে, ঈশ্বর আমাদের দেশকে সত্যিকারের স্বাধীন, বড় ইউরোপীয় দেশ হওয়ার যে ঐতিহাসিক সুযোগ দিয়েছে, আমরা তা হারাতে পারি না।
ইউক্রেইনের পাল্টা-আক্রমণ এরই মধ্যে শুরু হয়ে গেছে এমন ধারণা উড়িয়ে দিয়ে ইউক্রেনের এই ঊর্ধ্বতন নিরাপত্তা কর্মকর্তা বলেন, রাশিয়ার নিয়ন্ত্রণকেন্দ্র ও সামরিক সরঞ্জাম ধ্বংসের কাজ ইউক্রেন গত বছরের ২৪ ফেব্রুয়ারি থেকেই শুরু করেছে।
দীর্ঘ সময় ধরে ইউক্রেইনীয় বাহিনীর বাখমুত লড়াই চালিয়ে যাওয়ার পক্ষেও অবস্থান নেন তিনি। শহরটি নিয়ন্ত্রণে রাখার চেষ্টায় ইউক্রেইনের বাহিনীর ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে বলেও স্বীকার করে নেন তিনি।
দানিলভ বলেন, বাখমুত আমাদের আমাদের ভূখণ্ড। বাখমুতের সামান্য অংশ আমাদের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। এটিকে অবশ্যই আমাদের রক্ষা করতে হবে। আমরা যদি একটার পর একটা ভূখণ্ড ছাড়তে শুরু করি, তাহলে তা আমদেরকে পশ্চিম সীমান্ত পর্যন্ত নিয়ে যাবে, যা পুতিন যুদ্ধের প্রথম দিন থেকেই চাইছেন।
রুশ ভাড়াটে বাহিনী ওয়াগনার সত্যিই সত্যিই শহরটি ছাড়ছে কিনা, এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, হ্যাঁ, তারা সরে যাচ্ছে। কিন্তু তার মানে এই নয় যে, তারা আমাদের সঙ্গে যুদ্ধ বন্ধ করে দিচ্ছে। তারা অন্যান্য ফ্রন্টে মনোনিবেশ করছে, তিনটি এলাকায় পুনরায় সংগঠিত হচ্ছে।
রুশ বাহিনীর বিরুদ্ধে পাল্টা-আক্রমণ করার পরিকল্পনার কথা ইউক্রেন কয়েক মাস ধরেই বলে আসছে। কিন্তু সেনাদের প্রশিক্ষণ ও পশ্চিমা মিত্রদের কাছ থেকে পর্যাপ্ত সরঞ্জাম পেতে দেরি হওয়ায়, এখন পর্যন্ত সে আক্রমণ দেখা যায়নি। অনেকের দাবি, এ সময়ের মধ্যে রাশিয়াও তাদের প্রতিরক্ষা প্রস্তুতি সেরে নিয়েছে।
বিশ্লেষকরা বলছেন, এ পাল্টা-আক্রমণের ওপর অনেক কিছুই নির্ভর করছে। তাদের মতামত, কিয়েভের উচিত ইউক্রেন ও পশ্চিমা মিত্ররা যে রাশিয়ার প্রতিরক্ষাব্যবস্থা ভাঙতে পারে ও নিজেদের ভূখণ্ড পুনরুদ্ধারে সক্ষম, তা প্রমাণ করা।
সূত্র: বিবিসি