শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ০৩:১৬ পূর্বাহ্ন

সিলেট অঞ্চলে দেড় বছরে ৫৭৬টি বন্য প্রাণী উদ্ধার

  • প্রকাশের সময় : ০৮/০৩/২০২২ ১১:৪২:৩১
এই শীতে ভাঙন আতঙ্কে দিন কাটছে তাদের
Share
11

বন্য প্রাণীর আবাসস্থল আর আগের মতো নেই। বনবাদাড় উজাড় হওয়ায় কমেছে গাছপালা, বাড়িঘর ও জলাভূমির ঝোপঝাড়। এতে বন্য প্রাণীর সংখ্যা কমেছে। যা আছে, তাদেরও নিরাপত্তা হুমকিতে। খাদ্যসংকটসহ নানা কারণে প্রায়ই কিছু প্রাণী বন থেকে বেরিয়ে আসছে। কিছু বাড়িঘরের আশপাশে ধরা পড়ছে। এসব প্রাণী প্রায়ই আক্রান্ত হয়ে আহত ও মারা পড়ছে।

তবে বন্য প্রাণী ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগ, বন্য প্রাণী সুরক্ষায় স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন ও ব্যক্তিদের প্রচারণা, নানা উদ্যোগে মানুষের মধ্যে আগের চেয়ে সচেতনতা বাড়ছে। এখন কোথাও প্রাণী ধরা পড়লেই মেরে ফেলা হচ্ছে না। খবর দেওয়া হচ্ছে বন কর্মকর্তাদের। গত দেড় বছরে (১৯ মাসে) বন্য প্রাণী ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগ বৃহত্তর সিলেটের বিভিন্ন স্থান থেকে বিভিন্ন প্রজাতির ৫৭৬টি বন্য প্রাণী উদ্ধার করেছে।

বন্য প্রাণী ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, মৌলভীবাজারসহ বৃহত্তর সিলেট অঞ্চলে বনবাদাড়ে বৈচিত্র্যময় বন্য প্রাণীর দেখা মেলে। শুধু পাহাড়-জঙ্গলই না। বাড়ি ও জলাভূমির ঝোপঝাড়ও এদের ঠিকানা। কিন্তু জনসংখ্যা বৃদ্ধি, অপরিকল্পিত বসতি নির্মাণসহ বিভিন্ন কারণে ঝোপঝাড় কমে গেছে। এতে মেছো বিড়ালসহ (মেছো বাঘ) অনেক সাপ, পাখি ঠিকানা হারিয়ে পথহারা হচ্ছে। তারা যেখানে সামান্য ঝোপঝাড় পাচ্ছে, সেখানেই বাসা করছে। কিন্তু পর্যাপ্ত আড়াল না থাকায় প্রায়ই মানুষের চোখে পড়ছে। লোকজনের আক্রমণে মারা পড়ছে। আবার খাদ্যের সন্ধানে মেছো বিড়ালসহ কিছু প্রাণী বাড়ি ও খামারের হাঁস-মুরগি শিকার করে বলেও লোকজন ফাঁদ পেতে তাদের ধরে। ক্ষুব্ধ লোকজনের আক্রমণে অনেকটা আহত হয়, পরে মারা যায়। কিছু পেশাদার শিকারি বিষটোপ ও ফাঁদ দিয়ে পরিযায়ী এবং স্থানীয় পাখি শিকার করে। এসব কারণে অনেক বিরল, বিলুপ্তপ্রায় বন্য প্রাণী এখন হারিয়ে যাওয়ার পথে।

তবে বৃহত্তর সিলেটে বন্য প্রাণী ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগ, স্ট্যান্ড ফর আওয়ার এনডেঞ্জার্ড ওয়াইল্ডলাইফ (এসইডব্লিউ/সিউ), সেভ আওয়ার আনপ্রোটেক্টেড লাইফসহ (সোল) কিছু সংগঠন, প্রাণিপ্রেমী ব্যক্তিদের বন্য প্রাণী সুরক্ষায় দীর্ঘদিনের প্রচারণার কিছু সুফল মিলতে শুরু করেছে। মানুষ এখন বন্য প্রাণী ধরলেও চট করে মেরে ফেলছে না। বন্য প্রাণী ধরা, শিকার ও হত্যার ঘটনা বন্য প্রাণী ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগ, বন্য প্রাণী সংরক্ষকদের জানানো হচ্ছে। অনেকে ৯৯৯–এ ফোন দিচ্ছেন।

গত বছরের ২০ ডিসেম্বর মৌলভীবাজার শহরের চুবড়ায় কয়েকটি শিশু একটি তিলানাগ ইগলের ছানা নিয়ে ছোটাছুটি করছিল। বন্য প্রাণী বিভাগের একটি দল ওদিকে যাওয়ার পথে ঘটনাটি দেখতে পায়। আশপাশেই মা ইগল ওড়াউড়ি করছিল। পরে ছানাটিকে উদ্ধার করে প্রাথমিক শুশ্রূষা দিয়ে একটি বাঁশের খুঁটির ওপর বসিয়ে রাখলে মা পাখিটি ছানাটিকে নিয়ে যায়। ছানাটি বাসা থেকে পড়ে গিয়েছিল।

বন্য প্রাণী ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগ জানিয়েছে, ২০২০ সালের জুলাই থেকে চলতি বছরের জানুয়ারি পর্যন্ত ৫৭৬টি বন্য প্রাণী উদ্ধার করা হয়েছে। এর মধ্যে স্তন্যপায়ী ছিল ১৫৫টি, সরীসৃপ ৯৯টি এবং পাখি ৩২২টি। উদ্ধার করা প্রাণীর মধ্যে ৩৮০টি ছিল জীবিত, ১৯৬টি মৃত। জীবিতদের অবমুক্ত করা হয়েছে। এ সময় বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালানো হয়েছে ২২১টি। মামলা হয়েছে ১৯টি। এ ছাড়া ২২টি বাঁশের তৈরি খাঁচা, ১৪ কেজি মায়া হরিণের মাংস, ৩টি তির, ১টি ধনুক, ২৬টি ফাঁদ, ১টি শিয়ালের চামড়া, ১টি এয়ারগান ও এয়ারগানের ২০টি গুলি উদ্ধার করা হয়েছে।

বন্য প্রাণী ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগ সিলেটের বিভাগীয় কর্মকর্তা মো. রেজাউল করিম চৌধুরী জানান, ঝোপঝাড় কমে যাওয়ায় বেশির ভাগ প্রাণীই বাড়িঘরের আশপাশে ধরা পড়ছে। খামারিরা ফাঁদ দিয়ে মেছো বিড়াল ধরে। তবে এ অঞ্চলে মানুষের মধ্যে সচেতনতা অনেক বেড়েছে। ধরলেই কেউ মেরে ফেলছে না।


সিলেট প্রতিদিন / এমএ


Local Ad Space
কমেন্ট বক্স
© All rights reserved © সিলেট প্রতিদিন ২৪
পোর্টাল বাস্তবায়নে : বিডি আইটি ফ্যাক্টরি