বৃহস্পতিবার, ২৭ মার্চ ২০২৫, ১১:০৬ অপরাহ্ন

ব্যক্তি ও দলের স্বার্থের উর্দ্ধে হোক দেশ, জাতি এবং সংবিধান

  • প্রকাশের সময় : ২৬/০১/২০২৫ ০১:৫৪:৫৭
এই শীতে ভাঙন আতঙ্কে দিন কাটছে তাদের
Share
113

হুসাইন আহমদ


আমি একজন আওয়ামী ঘরোনার মানুষ। আমার রক্তে-মাংসে আওয়ামী লীগ মিশে আছে। তবুও আজ দেশের এই ক্লান্তিলগ্নে নিরোপেক্ষ ভাবনা থেকে একটু লিখতে মন চাইলো, তাই লিখলাম। আমি কোন লেখক, বিশেষজ্ঞ বা বিশ্লেষক নই। আমার মনের ভাবনা থেকে সহজ-সরল ভাষায় আমার চিন্তা-চেতনাটা আপনাদের সাথে একটু শেয়ার করছি। ভুল-ভ্রান্তি হলে ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন। 


ভাবনাটি হচ্ছে- এই যে বার-বার এই দেশে সংবিধান লঙ্গন হচ্ছে এত্থেকে আমরা উত্তরণ হবো কি করে? কেউ লঙ্গন করছি ক্ষমতায় থাকার জন্য, কেউ করছি ক্ষমতায় যাওয়ার জন্য, কেউ করছি ক্ষমতা দখল করার জন্য, আবার কেউ করছি হুজুগে, কেউ করছি গুজবে, কেউ করছি বুঝে-নাবুঝে। সবাই আমরা সংবিধান লঙ্গন করেই চলছি। 


ইতিহাস ঘাটলে বা বিশ্লেসন করলে দেখা যাবে বাংলাদেশের প্রতিটি রাজনৈতিক সংকট সৃষ্টর পেছনে সংবিধান লঙ্গনের কারনই সব চেয়ে বেশি। তাই আমি মনে করি একটি দেশে শান্তি-স্থিতিশীলতার জন্য প্রথমেই প্রয়োজন সংবিধান মেনে চলা। এটা সবার ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হতে হেব। সাধারণ নাগরিক থেকে শুরু করে একদম সরকার প্রধান এবং রাস্ট প্রধান পর্যন্ত। 


২০২৪ সালের আগস্টে যে রাজনৈতিক সংকট সৃষ্টি হলো, তার পুরুটাই সংবিধান লঙ্গনের মাধ্যমে। সেনাবাহিনীসহ যারা শেখ হাসিনাকে দেশ ত্যাগ করতে বাধ্য করেছেন, তারা চাইলে সংবিধানের ভেতরে থেকে শেখ হাসিনাকে নিরবিচ্ছিন্ন ভাবে ক্ষমতাচ্যুত করতে পারতেন, কিন্তু তা তারা করেননি। সংবিধান লঙ্গন করে শেখ হাসিনাকে যেভাবে ক্ষমতাচ্যুত করেছেন, অনুরূপ সংবিধান লঙ্গন করে অন্য একজনকে ক্ষমতায় বসিয়েছেন।


অথচ তারা চাইলে চলমান পরিস্থিতির প্রেক্ষিতে শেখ হাসিনাকে মৃত্যুর ভয় দেখিয়ে দেশ ত্যাগে বাধ্য না করে, সংবিধানের ভেতরে থেকে ভিন্ন ভাবে কাজটি করতে পারতেন, তাতে করে দেশের এতসব ক্ষতিও হতো না, এতসব প্রতিহিংসার রাজনীতির বীজও বপন হতো না।


যেমন, শেখ হাসিনা ৫ আগস্ট যে পরিস্থিতির শিকার হয়েছিলেন, তখন যদি তাঁকে দেশ ত্যাগ না করিয়ে, এই দেশে রেখে, সেনাবাহিনীসহ সব বাহিনী শেখ হাসিনাকে মৃত্যুর ভয় দেখিয়ে, তাকে দিয়ে ঐদিন জাতির উদ্দেশ্যে ভাষন দেওয়াতেন এবং সেই ভাষনে শেখ হাসিনা প্রতিশ্রুতি দিতেন এই বলে- ‘আমি পার্লামেন্ট ডেকে আগামী ৩ মাসের মধ্যে সংবিধান সংশোধন করবো, সংবিধানে তত্তাবধায়ক সরকারে বিধান অন্তর্ভুক্ত করবো এবং সাথে সাথে তত্তাবধায়ক সরকারের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তরের মাধ্যমে পদত্যাগ করবো’।


আমার মনে হয় এই বক্তব্যের পরে দেশে শান্তি ফিরে আসতো এবং সংবিধান ও রাস্ট সমুন্নত থাকতো। পাশাপাশি তত্তাবধায়ক সরকার কর্তৃক ভালো একটা নির্বাচন জাতি উপহার পেতো। দেশে আবার নতুন করে জঙ্গীবাদের উত্থান হতো না, হতো না মবজাস্টিস।


এখন যে প্রক্রিয়াতে দেশ চলছে বা আগাচ্ছে সবকিছু ধোয়ায় অন্ধকার। পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে এখন যা করলে দেশে শান্তি ফিরতে পারে এবং সংবিধান রক্ষার একটি দৃষ্টান্ত স্থাপন হতে পারে সেই বিষয়ে একটু আলোকপাত করতে চাই।


আমি মনে করি এমন একটা দৃষ্টন্ত স্থাপন করা দরকার যাতে করে কেউ আর ভবিষ্যতে সংবিধান লঙ্গনের সাহস না পায়। এর জন্য এখন সেনাবাহিনীকে একটা অগ্রনী ভূমিকা নিতে হবে।


সেনাবাহিনীকে এই মুহুর্তে দেশের দায়িত্ব তার হাতে নিতে হবে। ইউনুস সাহেব ও অন্য উপদেষ্ঠাসহ সমন্বয়কদের সেফ করতে হবে। জেলে থাকা, বিদেশে থাকা সব নেতাদের মুক্তিসহ দেশে আসার সুযোগ করে দিতে হবে। এসব কাজের মাধ্যমে দেশকে প্রতিহিংসার রাজনীতি থেকে মুক্ত করতে হবরে।


একই সাথে শেখ হাসিনাকে দেশে ফেরাতে হবে। তাঁর সরকারকে ৬ মাস সময় দিতে হবে, সেই ৬ মাসের মধ্যে তিনি পার্লামেন্ট আহবান করে সংবিধানে তত্তাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা অন্তর্ভুক্ত করবেন, তত্তাবধায়ক সরকার গঠন করে তাদের হাতে দায়িত্ব দিয়ে শেখ হাসিনা ক্ষমতা ত্যাগ করবেন এবং সকল দলের অংশগ্রহনে তত্তাবধায়ক সরকারের অধীনে একটি ভালো নির্বাচন হবে। একটি সাংবিধানিক সরকার গঠনের মাধ্যমে প্রতিহিংসার রাজনীতি এখানেই বিলুপ্ত হবে। সরকারের সপথ কালে সকল দলের উপস্থিতি নিশ্চিত করতে হবে।  


প্রশ্ন আসতে পারে শেখ হাসিনাকে কেনো দেশে এনে আবার সরকারে বসাতে হবে? এর জবাব একটাই- সংবিধানকে মানার দৃষ্টান্ত স্থাপন করা। যতক্ষন পর্যন্ত সংবিধান পুরুপুরি প্রতিষ্ঠিত না হবে, ততক্ষন পর্যন্ত আমরা ভবিষ্যৎ সেফটি সৃষ্টি করতে পারবো না। 


এই দৃষ্টান্ত স্থাপন হলে ভবিষ্যতে সংবিধান লঙ্গন করে কাউকে ক্ষমতাচ্যুত করা হবে না বা লঙ্গন করে কেউ ক্ষমতা দখলও করবে না। কারন ভবিষ্যতে যখনই কেউ সংবিধান লঙ্গন করতে যাবে, তখনই শেখ হাসিনাকে দেশে ফিরিয়ে আনার দৃষ্টান্ত সামনে চলে আসবে। আর এটাই হবে বাংলাদেশের জন্য একটি যুগান্তকারী উদ্যোগ। 


পাশাপাশি অতীতের সব রাজনৈতিক পরিস্থিতির কারনে সংঘঠিত অপরাধকে সাধারণ ক্ষমার মধ্যে আনতে হবে। সবার অপরাধ ক্ষমা করে দিয়ে নতুন করে সম্প্রীতির রাজনীতি শুরু করতে হবে। ক্ষমতার অপব্যবহার পরিহার করতে হবে, দলমত নির্বিশেষে সবার জন্য সমান অধিকার প্রতিষ্ঠা করতে হবে। সাধারণ মানুষসহ রাজনৈতিক নেতা-কর্মীরা যেনো স্বার্থের জন্য নিজ নিজ এলাকায় বিবেদ সৃষ্টিতে লিপ্ত না হয়, সে বিষয় নিশ্চিত হওয়ার জন্য যুগপোযুগী পদক্ষেপ গ্রহন করতে হবে। ব্যবসায়ী ও আমলাদেরকে ঠিক হতে হবে, কোন ক্ষেত্রই দুর্নীতি সহ্য করা যাবে না মর্মে জোর পদক্ষেপ নিতে হবে। যথা সময়ে নিরপেক্ষ নির্বাচন করতে হবে। সকল নির্বাচনকে কালো টাকা মুক্ত করে যোগ্যতা সম্পন্ন ব্যক্তিকে যথাস্থানে নির্বাচিত করতে হবে। এক কথায় সবাই মিলে দেশ জাতি ও মানুষের কল্যাণের কথা চিন্তা করতে হবে। দেশ জাতি ও মানুষের অকল্যাণ হয় এমন কোন কাজ যারা করবে তারা যতই শক্তিশালী হোক তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে। এসব পদক্ষেপের সামষ্টিক একটি বাক্য সকল ক্ষেত্র সবাইকে নিঃশর্ত ভাবে মানতে হবে, আর সেটি হচ্ছ- ‘ব্যক্তি ও দলের স্বার্থের উর্দ্ধে হোক দেশ, জাতি এবং সংবিধান’।


সিলেট প্রতিদিন / এমএনআই


Local Ad Space
কমেন্ট বক্স
© All rights reserved © সিলেট প্রতিদিন ২৪
পোর্টাল বাস্তবায়নে : বিডি আইটি ফ্যাক্টরি