বুধবার, ১৯ ফেব্রুয়ারী ২০২৫, ০৭:৩৬ পূর্বাহ্ন

৬১ বসন্তে সাংবাদিক চঞ্চল মাহমুদ ফুলর

  • প্রকাশের সময় : ০৪/১২/২০২৪ ১০:৪৭:০৪
এই শীতে ভাঙন আতঙ্কে দিন কাটছে তাদের
Share
48

মোহাম্মদ নুরুল ইসলাম


৬০ পেরিয়ে ৬১’র ঘরে পা’ রাখলেন সিনিয়র সাংবাদিক চঞ্চল মাহমুদ ফুলর। ১৯৬৪ খ্রিষ্টাব্দের ৪ ডিসেম্বর শুক্রবার ফজরের আজানের পূর্ব মুহুর্তে সিলেটের সদর দক্ষিণ এলাকার তৎকালীন বরইকান্দি ইউনিয়নের (অধুনা সিলেট সিটি কর্পোরেশনের ২৯ নম্বর ওয়ার্ড) লাউয়াই দালানবাড়ির সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে তিনি জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতা (মরহুম) আব্দুল জব্বার ছিলেন একজন সামাজিক ও মুক্তমনা মানুষ। মাতা (মরহুম) ফুলেছা খাতুন ছিলেন একজন সুগৃহিনী। ৪ ভাই ও ৪ বোনের মধ্যে তিনি চতুর্থ।


প্রগতিশীল, অসাম্প্রদায়িক ও মুক্তচিন্তার অধিকারী চঞ্চল মাহমুদ ফুলর সাংবাদিকতার পাশাপাশি একজন সক্রিয় মানবাধিকার কর্মী, বিশিষ্ট সমাজকর্মী, পেশাজীবী ও ক্রীড়া সংগঠক, সাংস্কৃতিক কর্মী হিসেবে সকল মহলে সুপরিচিত ব্যক্তি। রাজনৈতিক দিক থেকে বাম ঘরাণার মানুষ হলেও তিনি বহুমাত্রিক চিন্তা-চেতনাকে লালন করেন। সাংবাদিক চঞ্চল মাহমুদ ফুলর সাংবাদিকতার পাশাপাশি বিভিন্ন ধরণের লেখালেখিতে যতেষ্ট সময় দিয়ে থাকেন। ইতোমধ্যেই তাঁর সম্পাদনা ও অনুলেখনে ৪টি গ্রন্থ প্রকাশিত হয়েছে। আরো কয়েকটি বই প্রকাশের অপেক্ষায়। 


১৯৯০ খ্রিষ্টাব্দের ২৫ মে থেকে সাংবাদিকতার সাথে যুক্ত হন চঞ্চল মাহমুদ ফুলর। সে সময় তাঁর ঘনিষ্ট বন্ধু নগরির ২৫নং ওয়ার্ডের বারখলাস্থ ইন্সপেক্টর হাউসের বাসিন্দা জামিনুর রশীদ জাহেদ বহুল প্রকাশিত দৈনিক সিলেটের ডাক-এ কাজ করতেন। তিনি ছিলেন পত্রিকার সিনিয়র প্রুফ রিডার। ঘনিষ্ট বন্ধু চঞ্চল মাহমুদ ফুলরের লেখালেখিতে হাত আছে দেখে বন্ধুকে সহকর্মী হিসেবে সম্পৃক্ত করে নেন তিনি। প্রুফ রিডার হিসেবে শুরু হয় চঞ্চল মাহমুদ ফুলরের সাংবাদিকতার অঙ্গনে বিচরণ। এরপর থেকে আর পেছন ফেরে তাকাতে হয়নি তাঁকে। একে একে অধুনালুপ্ত স্থাানীয় দৈনিক আজকের সিলেট, দৈনিক যুগভেরী, দৈনিক জালালাবাদ, দৈনিক মানচিত্র, দৈনিক সবুজ সিলেট, দৈনিক পূণ্যভূমি, দৈনিক সংলাপসহ বেশ কয়েকটি স্থানীয় দৈনিকে কাজ করেছেন। পাশাপাশি তিনি জাতীয় দৈনিক সংবাদ-এর সিলেট অফিসের সহকারী স্টাফ রিপোর্টার এবং স্পোর্টস রিপোর্টার হিসেবে দৈনিক ইত্তেফাকের সিলেট অফিসেও বেশ কিছুদিন কাজ করেন। এ সময় সংবাদ-এর স্টাফ রিপোর্টার ছিলেন সিনিয়র সাংবাদিক আল-আজাদ এবং ইত্তেফাকে সিলেট প্রধান ছিলেন প্রবীণ সাংবাদিক আব্দুল মালিক চৌধুরী। বেশ কিছুদিন ব্যুরো প্রধান হিসেবে কাজ করেছেন জাতীয় দৈনিক মুক্ত খবরেও। ২০০৬ ও ২০০৭ খ্রিস্টাব্দে ব্যুরো প্রধান হিসেবে কাজ করেছেন জাতীয় ইংরেজি সাপ্তাহিক ‘দ্য উইকলি কনফিডেন্স’ এবং মাসিক ‘চিত্রদেশ’ পত্রিকায়। 


১৯৯৬ খ্রিষ্টাব্দে যুক্ত হন সিলেটের বহুল পরিচিত সংবাদমাধ্যম “সেন্টার ফর ইম্প্রুভমেন্ট অব প্রেস (সিআইপি)”-এর সাথে। এ সংস্থাটির প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন সাংবাদিক, মুক্তিযুদ্ধ গবেষক এবং সর্বশেষ সিলেট জেলা প্রেসকাবের সাবেক সভাপতি আল-আজাদ। চঞ্চল মাহমুদ ফুলর সিআইপি’র চিফ রিপোর্টার ছিলেন। সিআইপি’র চিফ ফটোগ্রাফার ছিলেন বর্তমানে যুক্তরাজ্য প্রবাসী ফটো জার্নালিস্ট শুভ্র দাম। সিআইপি-তে তখন তাঁদের সাথে কাজ করেন প্রয়াত সাংবাদিক-ছড়াকার এবং দীর্ঘসময় দৈনিক সিলেটের ডাক-এর তৎকালীন বিশেষ সংবাদদাতা (মরহুম) তাজুল ইসলাম বাঙালি। চঞ্চল মাহমুদ ফুলরের ঘনিষ্ট দু’জন মানুষ জামিনুর রশীদ জাহেদ ও তাজুল ইসলাম বাঙালি আজ আর বেঁচে নেই।


চঞ্চল মাহমুদ ফুলর ২০০০ খ্রিস্টাব্দের আগস্ট মাসে গড়ে তুলেন নিজস্ব প্রতিষ্ঠান সুরমা নিউজ মিডিয়া ও পাবলিকেশন্স। সাহস করে প্রথা ভেঙ্গে উত্তর সুরমার জিন্দাবাজার থেকে অফিস সরিয়ে নিয়ে আসেন দক্ষিণ সুরমার রেলগেইটস্থ রেলওয়ে শপিং কমপ্লেক্সে। সাথে ছিলেন নির্ভরতার প্রতীক বন্ধু জামিনুর রশীদ জাহেদ ও তৎকালিন সময়ের নবীন সাংবাদিক এম আহমদ আলী। তখন এম আহমদ আলী ছিলেন দৈনিক সিলেটের ডাক-এর দক্ষিণ সুরমা প্রতিনিধি হিসেবে কাজ করার পাশাপাশি তিনি কাজ করতেন সিলেট-মৌলভীবাজার বাস-মিনিবাস মালিক সমিতির অফিস ম্যানেজার হিসেবে। সুরমা নিউজ মিডিয়ার মাধ্যমে এম আহমদ আলী সরাসরি সাংবাদিকতার সাথে যুক্ত হন। এই প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলতে চঞ্চল মাহমুদ ফুলর এবং বন্ধুদের সর্বাত্মক সহযোগিতা করেছিলেন কদমতলি নিবাসী সিলেটের প্রথিতযশা রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব, সর্বজন শ্রদ্ধেয় রাজনীতিবিদ (মরহুম) আব্দুল হামিদের তৃতীয় পুত্র, দক্ষিণ সুরমা সমাজ কল্যাণ সমিতির তৎকালীন সভাপতি এমএ মতিন। পরে এমএ মতিন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মিশিগানে প্রবাস থাকাকালে আকস্মিক ইন্তেকাল করেন। এরপর নানা কারণে চঞ্চল মাহমুদ ফুলর সুরমা নিউজ মিডিয়া ও পাবলিকেশন্স একক দায়িত্বে পরিচালনা করছেন এবং বর্তমানেও তিনি এই প্রতিষ্ঠানের কর্ণধার। প্রতিষ্ঠানটি বর্তমান কার্যালয় নগরির স্টেশন রোডের লেইছ সুপার মার্কেটে। এর পাশাপাশি-ই রয়েছে দক্ষিণ সুরমা উপজেলা প্রেসকাব, সিলেট’র অফিসও।


চঞ্চল মাহমুদ ফুলর বর্তমানে জাতীয় দৈনিক দেশবার্তা ও যুক্তরাজ্যের লন্ডন থেকে প্রকাশিত জনপ্রিয় অনলাইন পোর্টাল দৈনিক সত্যবাণী’র সিলেট ব্যুরো প্রধানের দায়িত্ব পালন করছেন। সিলেট থেকে প্রকাশিত পুরোনো দৈনিক জৈন্তাবার্তার বিশেষ প্রতিনিধি হিসেবে কাজ করছেন। কাজ করছেন যুক্তরাজ্য ও বাংলাদেশে সমভাবে কর্মরত বাংলা টিভিতেও। তিনি দক্ষিণ সুরমা উপজেলা প্রেসকাব সিলেট’র প্রতিষ্ঠাতা কমিটির সভাপতি। প্রেসক্লাবের সাধারণ পরিষদের সদস্যরা সর্বসম্মতিতে বর্তমান কমিটির সভাপতি পদেও তাঁকে নির্বাচিত করেছেন। এর পাশাপাশি তিনি সদর দক্ষিণ এলাকার ন্যায়সংগত দাবি আদায় ও সুষম উন্নয়ন তরান্বিত করার লক্ষ্যে গঠিত অরাজনৈতিক সংগঠন ‘সদর দক্ষিণ নাগরিক কমিটি, সিলেট’র প্রতিষ্ঠাকালীন সদস্য সচিব হিসেবে সাড়ে ৮ বছর দায়িত্ব পালন করে বর্তমানে সহ-সভাপতি পদে রয়েছেন। এছাড়াও তিনি বাংলাদেশ রেডক্রিসেন্ট সোসাইটি সিলেট ইউনিটের আজীবন সদস্য, আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠন এ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল-এর বাংলাদেশ সেকশনের আওতাধীন সিলেট গ্রুপের হয়ে দীর্ঘদিন কাজ করেছেন। বর্তমানে এই সংগঠনের কার্যক্রম বাংলাদেশে বন্ধ রয়েছে। যুক্তরাজ্যের একটি বহুল সমাদৃত সাংস্কৃতিক সংগঠন জেবিএফ কালচারাল এসোসিয়েশন অব ইউকে’র সিলেট ডিভিশনাল কো-অর্ডিনেটর। রয়েছেন সিলেটের জননন্দিত নাট্য সংগঠন নাট্য নিকেতন, সিলেটের জীবন সদস্য হিসেবে। ছিলেন বঙ্গবীর রোডের লাউয়াইস্থ প্রাচীনতম শিক্ষা প্রতিষ্ঠান সাউথ সুরমা উচ্চ বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি। সামাজিক সংগঠন বন্ধন সমাজ উন্নয়ন সংস্থা, সিলেট-এর উপদেষ্টাসহ প্রায় ৫৪ টি সামাজিক-সাংস্কৃতিক-পেশাজীবী-সাহিত্য ও উন্নয়নকামী সংগঠনের সাথে জড়িত রয়েছেন।


চঞ্চল মাহমুদ ফুলর স্থানীয়ভাবে লাউয়াই পঞ্চায়েত কমিটির বর্তমান কমিটির সিনিয়র যুগ্ন সাধারণ সম্পাদক। নিজের গ্রামের সংগঠন হিসেবে সিলেট সুপরিচিত লাউয়াই স্পোর্টিং ক্লাবের সাথে অঙ্গাঅঙ্গিভাবে জড়িত আছেন সেই ২০০০ খ্রিস্টাব্দ থেকে। প্রথমে ছিলেন প্রচার সম্পাদক, পরে পর্যায়ক্রমে সাংগঠনিক সম্পাদক, সহ-সভাপতি, ২ মেয়াদে সিনিয়র সহ-সভাপতি এবং বর্তমান কমিটির সিনিয়র নির্বাহী সদস্যের দায়িত্ব পালন করছেন। রয়েছেন লাউয়াই কমিউনিটি ক্লিনিক পরিচালনা কমিটির অর্থ সম্পাদকের দায়িত্বে। মরহুম পিতার নামে প্রতিষ্ঠা করেছেন আব্দুল জব্বার স্মৃতি পাঠাগার। নানা কারণে পাঠাগারটি পুরোদমে চালু করতে না পারলেও সংগ্রহে বই আছে ২ হাজারের মতো। তিনি আশাবাদী খুব শিগগির-ই পুরোমাত্রা পাঠাগারটি চালু করতে পারবেন।


১৯৮৯ খ্রিস্টাব্দের ৩১ মার্চ জীবন সঙ্গীনি হিসেবে বেছে নিয়েছেন রোকেয়া মাহমুদ আশার সাহচর্য। এই দম্পত্তির ৩ সন্তানের মধ্যে বড় মেয়ে রেবেকা মাহমুদ দীনা জ্যেষ্ঠ। এসএসসি পরীক্ষার পরে ‘মাইগ্রেন’ সমস্যার কারণে আর লেখাপড়া করতে পারেন নি। বর্তমানে বিবাহিত ২ কন্যা সন্তানের জননী। কনিষ্ট মেয়ে সাবিহা মাহমুদ লীনা দর্শন শাস্ত্রে অনার্স ও মাস্টার্সে প্রথম বিভাগে প্রথম হয়েছেন। তিনি সমাজকর্ম নিয়ে গবেষণা করে পিএইচডি লাভ করতে আগ্রহী। বিবাহিত ১ পুত্র সন্তানের জননী। আর একমাত্র ছেলে আল-মাহমুদ বাপ্পী এমসি কলেজে মাস্টার্সে প্রথমবর্ষ ক্লাস করে ফাইনাল পরীক্ষা না দিয়েই ফ্রান্সে চলে যান। বর্তমানে তিনি সেখানেই বসবাস করছেন।


সাংবাদিক চঞ্চল মাহমুদ ফুলর তাঁর ৬১তম জন্মদিনের পূর্বে গত ১৫ নভেম্বর আকস্মিক হার্ট এ্যাটাকে আক্রান্ত হয়ে দীর্ঘ ৯ দিন হাসপাতালে শয্যাশায়ী ছিলেন। এ সময় পরিচিত সকল মহলের পক্ষ থেকে দোয়া ও ভালোবাসা কামনা করা হয়েছে। আল্লাহর অশেষ রহমতে ও সকলের দোয়ার বরকতে তিনি বর্তমানে কিছুটা সুস্থ। তিনি সকলের দোয়া ও ভালোবাসা প্রার্থী।


লেখক : সাধারণ সম্পাদক- দক্ষিণ সুরমা উপজেলা প্রেসক্লাব, সিলেট।


সিলেট প্রতিদিন / এমএনআই


Local Ad Space
কমেন্ট বক্স
© All rights reserved © সিলেট প্রতিদিন ২৪
পোর্টাল বাস্তবায়নে : বিডি আইটি ফ্যাক্টরি