তাসলিমা খানম বীথি
হেমন্ত স্নিগ্ধময় সকালে বাসা থেকে বের হয়ে হাঁটতে থাকি। পাড়ার গেইটে সামনে বাদামী বর্ণের কুকুরগুলো এখনো ঘুমাচ্ছে। রাস্তার চারপাশে সুনসান নিরবতা। এসময়টা শিক্ষক শিক্ষার্থী আর সন্তানকে নিয়ে বাবা-মায়েদের ছুটে চলা চোখে পড়ে।
জীবন কখন আনন্দের আর বেদনার হয় তা কেউ জানে না। ছোট জীবনে কত কিছুই না ঘটে চলার পথে। সকালে হেঁটে যাওয়ার পথে হঠাৎ এক রিকশাচালক থেমে বলল- আপা রিকশায় ওঠেন। তাকে বলি, আমি তো রিকশায় যাবো না।
লোকটি আবারও বলল- রিকশায় বসেন নিয়ে যাই।
-বললাম তো যাবো না।
আসলে আমার কাছে গাড়িভাড়া তেমন নেই যা আছে তা দিয়ে এখন চলতে হবে। সামনেই আমার স্কুল। হেঁটে যেতে পারব। রিকশা চালক তার চকচকে সাদা দাঁতগুলো বের করে হাসি দিয়ে বলে, আপা ভাড়া লাগবে না। আপনি তো এখন চা খাবেন, চলেন গাড়িতে আমিও চা খাবো। তার দিকে অবাক চোখে তাকাই। রিকশা ওঠে বসি। স্কুলের পাশে একটা চায়ের টং দোকান রয়েছে। টংয়ের চা এমনিতে আমার ভালো লাগে। খুব সকালে ওঠার কারণে ঘুম ভাব দূর করার জন্য সেখানে প্রায় চা খাই। কখনো একা কখনো টিচারদে নিয়ে।
২.
বানিয়ান বৃটিশ স্কুলে জয়েন পর থেকেই আমার সকালটা শুরু হয় ৭টা থেকে। হেঁটেই স্কুলে যাওয়ায় চেষ্টা করি। মাঝে মধ্যে রিকশা করে যাই। স্কুলের যাবার পথে চা খাই সেখানটায় অটোরিকশা চালকরাও চা খেতে বসে। রাস্তায় তাদের রিকশাগুলো থাকে। কেউ রিকশায় বসে, কেউ রাস্তা ফুটপাতের খালি জায়গাটা কিংবা চা টংয়ের বেঞ্চে বসে। চা খেতে আমি যখন বেঞ্চে বসি খেয়াল করি রিকশাচালকরা সাথে সাথে ওঠে বাইরে গিয়ে বসে চা খায়। বুঝতে পারি তারা চালক হলেও নারীকে সম্মান করতে জানে।
যাই হোক, সেই রিকশাচালক আমাকে চায়ের টংয়ের সামনে নামিয়ে দেয়। আমি ভেতরে বসি। চালকও কিছুটা দূরে বসে একটা কাগুজে মোড়ানো দুটো রুটি বের করে দোকানদারকে একটা দেয় আরেকটা চালক মনের আনন্দে তৃপ্তি করে চায়ে কাপে ভিজিয়ে ভিজিয়ে খায়। আমিও চা খাই আর রিকশা চালকের মানুষের প্রতি মানবিকতা ভালোবাসা উপভোগ করি। এমনি করে হেমন্তের সকালটি আমাকে মুগ্ধ করে।