শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১১:০৯ পূর্বাহ্ন
জনগণের ভালোবাসা নিয়েই জীবনের বাকি সময়টুকুও পাড়ি দিতে চাই

শুভ জন্মদিন শেখ রেহানা

  • প্রকাশের সময় : ১৩/০৯/২০২২ ০২:২৭:২৯
এই শীতে ভাঙন আতঙ্কে দিন কাটছে তাদের
Share
8

মঞ্চে পাদপ্রদীপের আলো যেখানে পড়ে সে জায়গাটি জ্বলজ্বল করে। পাশেই অন্ধকার। সেই অন্ধকারেও এমন কেউ কেউ থাকেন, যাদের আলোয় মঞ্চ উজ্জ্বল হয়ে ওঠে। সাদা চোখে সে আলোর বিচ্ছুরণ দেখা যায় না, অনুভব করা যায়। তেমনই একজন মানুষ শেখ রেহানা।

১৩ সেপ্টেম্বর তার জন্মদিন। যে পরিবারে তার জন্ম, সেখানে তার ওপরও আলো পড়ার কথা। কিন্তু নিজেকে সে আলো থেকে সযত্নে সরিয়ে রেখেছেন তিনি। কেন? কারণ তাকে স্পর্শ করেনি কোনো মোহ। যেন এক অন্তর্গত মানুষ হিসেবেই নিজেকে গড়ে তুলেছেন তিন।

বাংলাদেশের রাজনীতিতে পঁচাত্তরের পটপরিবর্তন, সপরিবারে বঙ্গবন্ধু হত্যা, বড় বোন শেখ হাসিনার রাজনীতিতে যোগদান, আন্দোলন-সংগ্রামে সক্রিয় অংশগ্রহণ তো তাকেও সমানভাবে আলোড়িত করার কথা। রাজনীতির অন্যরকম টান থাকে। রাজনৈতিক পরিবারের সন্তান হিসেবে রাজনীতির পথটিই তিনি বেছে নিতে দ্বিধা করবেন না-এটাই স্বতঃসিদ্ধ।

কিন্তু এই সরল সমীকরণটি তিনি বিবেচনায় না এনে বেছে নিলেন আটপৌরে গার্হস্থ্য জীবন। আপাতত এ চিত্রটিই উন্মুক্ত সবার সামনে।আমরা যদি একটু আলাদা করে বিশ্লেষণ করি, তাহলে দেখা যাবে, বাংলাদেশের রাজনীতিতে শেখ রেহানার অবদান একেবারে কম তো নয়ই, বরং উপেক্ষা করার মতো নয়। প্রত্যেক রাজনৈতিক নেতৃত্বের নেপথ্যে আরও একজনকে পাওয়া যায়, যার প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ সহযোগিতা ছাড়া সাফল্য লাভ ছিল প্রায় অসম্ভব।

শেখ রেহানা তেমনই একজন, যিনি সবসময় বড় বোনের পাশে থেকেছেন, তাকে সাহস জুগিয়েছেন। প্রবাসে আওয়ামী লীগ নেতৃত্ব সবসময় তাকেই পেয়েছে কান্ডারি হিসেবে।অন্যরকম হওয়ার কথা ছিল তার জীবন। জাতির পিতার কন্যা তিনি। রাজনীতির চরাই-উৎরাই দেখেছেন খুব কাছ থেকে। অথচ জীবনের শুরু থেকেই বলতে গেলে সংগ্রাম করতে হয়েছে তাকে।

সংগ্রামী রাজনৈতিক জীবনে বঙ্গবন্ধুকে বারবার কারাবরণ করতে হয়েছে। এসব সময়ে তার পরিবারকে নানা সমস্যায় পড়তে হয়েছে। শেখ রেহানা খুব কাছ থেকে দেখেছেন কীভাবে তার মা ফজিলাতুন নেছা মুজিব একা সামলেছেন সব ঝড়-ঝাপ্টা। দেশের সবচেয়ে বড় রাজনৈতিক পরিবারের শীর্ষ নেতার পরিবারটিও আর দশটা মধ্যবিত্ত পরিবারের মতোই ছিল।

সেখানে মনের দৈন্য ছিল না।বরং আড়াল থেকে নিজেকে উজাড় করে দেয়ার শিক্ষা তিনি পারিবারিক পরিমণ্ডল থেকেই পেয়েছেন। বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের পর নির্বান্ধব পরবাসে নিজেদের মতো করে জীবন যাপনের অভিজ্ঞতাও তাকে ঋদ্ধ করেছে। অভ্যস্ত করেছে পরিমিত জীবনাচারে। কৈশোর-উত্তীর্ণ বয়সেই অনুভব করতে হয়েছে শূন্যতা। যে শূন্যস্থান পৃথিবীর কোনো সম্পদ দিয়ে পূরণ করা যায় না।

কিন্তু রাজনৈতিক পরিবারের সন্তান হিসেবে কাউকে তা বুঝতে দেননি। বরং বাংলাদেশের মানুষের মধ্যে খুঁজে ফিরেছেন আত্মার আত্মীয়দের।&এক সাক্ষাৎকারেও সে কথা উলে­খ করেন তিনি। মেখ রেহানা বলেন, আমরা মধ্যবিত্ত পরিবারের সন্তান। জনগণের মধ্যে থেকে তৃণমূল থেকে রাজনীতি করে আমার বাবা হয়েছিলেন বঙ্গবন্ধু, বাংলাদেশ নামের রাষ্ট্রের জনক।

আমরা সেই বঙ্গবন্ধুর সন্তান, জনগণের মধ্যে এখনও আমরা খুঁজে ফিরি আমাদের মা-বাবা ও পরিবার সদস্যদের, সেই জনগণের ভালোবাসা নিয়েই জীবনের বাকি সময়টুকুও পাড়ি দিতে চাই। আমাদের জীবনে সবচেয়ে বড় পাওয়া আমরা বঙ্গবন্ধুর কন্যা। এ লন্ডনেও যখন রাস্তায় বের হই, তখন দেখি বিভিন্ন বর্ণের অনেকেই বঙ্গবন্ধুর কন্যা হিসেবে সম্মান করছে। একটি ছবি তুলতে চাইছে। এর চেয়ে বড় পাওয়া আর কী হতে পারে আমাদের।

অর্থাৎ অর্থভান্ডারের মূল্যবান কোনো সামগ্রী নয়, স্মৃতিভান্ডারের সম্পদই তার কাছে মহামূল্যবান। তিনি গৃহকোণচারিনী কিন্তু গৃহসীমানার মধ্যে সংকুচিত নয় তার জীবন। ঘরে ও বাইরে সমানভাবে চিরায়ত কল্যাণী তিনি। সর্বক্ষেত্রে তিনি অপরিসীম ধৈর্য্যের পরীক্ষা দিয়েছেন। সত্যিনিষ্ঠায় সুদৃঢ় থেকেছেন। মিথ্যাকে আশ্রয় করেননি।

সত্যের নির্মলতম আদর্শ রক্ষা করেছেন সবসময়। নিজের ছেলেমেয়েদের মানুষ করে তোলার ব্যাপারে আপস করেননি। মিথা সুবিধার ভোগবাদিতায় আকৃষ্ট হননি। প্রতিকূল পরিবেশে লড়াই করেছেন। কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ভাষায় যদি তাকে মূল্যায়ন করি, তাহলে বলতে হয়, অপরিসীম তার ধৈর্য, বীরত্ব তার বিরাট, কিন্তু সবার চেয়ে বড় তার সুদৃঢ় সত্যনিষ্ঠা।

পলিটিক্সের সাধনায় আত্মপ্রবঞ্চনা ও পরপ্রবঞ্চনার পঙ্কিল আবর্তের মধ্যে তিনি নিজেকে কখনও হারিয়ে ফেলেননি। সত্য যেখানে বিপদজনক, সেখানে সত্যকে তিনি ভয় করেননি, মিথ্যা যেখানে সুবিধাজনক সেখানে তিনি সহায় করেননি মিথ্যাকে। মিথ্যার উপচার আশু প্রয়োজনবোধে দেশপূজার যে অর্ঘ্যে অসংকোচে স্বীকৃত হয়ে থাকে, সেখানে তিনি সত্যের নির্মলতম আদর্শকে রক্ষা করেছেন।

তার অসামান্য বুদ্ধি কূটকৌশলের পথে ফললাভের চেষ্টাকে চিরদিন ঘৃণাভরে অবঞ্চা করেছে। দেশের মুক্তি সাধনায় তার এই চরিত্রের দান সবার চেয়ে বড় দান।প্রকৃতিই বোধ করি তাকে আদর্শ এক মানুষে পরিণত করেছে। জীবনের যে সময়ে উচ্ছলতায় ভেসে যাওয়ার কথা, তখনই পেয়েছেন সবচেয়ে বড় আঘাত। এর পর থেকেই তো শুরু হয়েছে জীবন-সংগ্রাম।

যে সংগ্রাম এখানও শেষ হয়নি তার। কষ্ট হয়েছে, কিন্তু সন্তানদের উচ্চশিক্ষায় শিক্ষিত করেছেন। তারা সবাই আজ নিজ নিজ ক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠিত।তাকে রাজনীতিবিমুখ ভাবার কোনো অবকাশও কিন্তু নেই। রাজনীতি যার রন্ধ্রে তাকে কি রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড থেকে সরিয়ে রাখা যায়। তিনি নেপথ্যের একজন হয়ে গেলেন, প্রকাশ্যে না এসেও সম্পৃক্ত হলেন রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে।

তিনিই তো প্রথম মানুষ যিনি প্রবাসে বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের বিচার চেয়েছিলেন ১৯৭৯ সালের ১০ মে। দেশের প্রয়োজনে সবসময় তিনি পাশে থেকেছেন। আজকের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে যখন গ্রেফতার করা হয়, তখন তিনি প্রবাসী নেতৃত্বের সঙ্গে সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রেখেছেন। সাহস জুগিয়েছেন। লন্ডনে স্থায়ীভাবে বসবাস করলেও আমরা জানি, এখনও তিনি আছেন বড়বোনের পাশে, ছায়ার মতো।

জন্মদিনে শুভেচ্ছা জানাই তাকে। শুভ জন্মদিন শেখ রেহানা লেখক: সর্ব ইউরোপিয়ান আওয়ামী লীগের সভাপতি, মানবাধিকারকর্মী ও সাংবাদিক।


সিলেট প্রতিদিন / এসএল


Local Ad Space
কমেন্ট বক্স
© All rights reserved © সিলেট প্রতিদিন ২৪
পোর্টাল বাস্তবায়নে : বিডি আইটি ফ্যাক্টরি