শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ০২:৫২ অপরাহ্ন

সুনামগঞ্জে আড়াই বছরের কাজ শেষ হয়নি ছয় বছরেও

  • প্রকাশের সময় : ২৭/০৩/২০২৪ ০৪:০৬:২৫
এই শীতে ভাঙন আতঙ্কে দিন কাটছে তাদের
Share
34

সুনামগঞ্জের তাহিরপুর সীমান্ত এলাকায় শাহ্‌আরেফিন (রহ.) ও শ্রীশ্রী অদ্বৈত মহাপ্রভু মৈত্রী সেতু নির্মাণে কোটি টাকা বিল বেশি নিয়েও মন্থর গতিতে কাজ করছে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান।


চার দফায় কাজের সময় বাড়িয়েও এই সেতুর কাজ ঠিকাদারকে দিয়ে সম্পন্ন করতে পারেনি স্থানীয় এলজিইডি। বিষয়টি নিয়ে ক্ষোভ জানিয়েছেন স্থানীয় বাসিন্দারা।


জানা যায়, দরপত্র কার্যক্রম শেষে ২০১৮ সালের মার্চ মাসে রাজধানীর তমা কন্সট্রাকশনকে শাহ্ আরেফিন ও অদ্বৈত মৈত্রী সেতুর নির্মাণকাজের কার্যাদেশ দেওয়া হয়। কার্যাদেশে ৩০ মাসে সেতু দুটির নির্মাণকাজ শেষ করার নির্দেশনা ছিল। কিন্তু ছয় বছরেও কাজটি শেষ করতে পারেনি এই ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান।


ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানটি মেয়াদ শেষ হওয়ার পর প্রথম দফায় নির্বাহী প্রকৌশলী বরাবর আবেদন করে সময় বাড়ায় ১৮২ দিন। দ্বিতীয় দফায় সেতু প্রকল্পের পরিচালক (পিডি) বরাবর আবেদন করে সময় বাড়ানো হয় ২০২২ সালের ৩১ মে পর্যন্ত। একইভাবে তৃতীয় দফায় বাড়ানো হয় ১০ জুন ২০২৩ পর্যন্ত। চতুর্থ দফায় আগামী জুন পর্যন্ত মেয়াদ বাড়ালেও, ওই সময়েও নির্মাণকাজ শেষ হওয়ার সম্ভাবনা নেই।


সরেজমিন দেখা যায়, মাত্র দু’জন নির্মাণকর্মী সেতুর কাজ করছেন। সেতুর পাশে দাঁড়ানো অদ্বৈত জন্মধাম কেন্দ্রীয় পরিচালনা কমিটির সাধারণ সম্পাদক অদ্বৈত রায় বলেন, এলাকাবাসীর দীর্ঘদিনের স্বপ্ন বাস্তবায়নে কাঁটা হয়ে দাঁড়িয়েছে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। তারা কখনও কাজ বন্ধ করে রাখে, কখনও বা দু-চারজন শ্রমিক লাগিয়ে লোকজনকে দেখায়– কাজ চলছে। এ বিষয়ে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপ কামনা করেন তিনি।


সেতুর পাশে দাঁড়ানো ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের নিয়োগপ্রাপ্ত উপঠিকাদার আনোয়ার হোসেন বলেন, তারা সেতুর গার্ডার নির্মাণের কাজ করছেন। ২০টি গার্ডার ও তিনটি স্প্যান নির্মাণের কাজ এখনও বাকি আছে। তাদের ১১ জন শ্রমিক এখানে পালা করে কাজ করছেন। তিনি দাবি করেন, সেতুর চার ভাগের এক ভাগ কাজ বাকি আছে।


ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রকৌশলী নাছির উদ্দিনের ভাষ্য, সেতুর ৭৪ ভাগ কাজ শেষ। কাজ দ্রুত এগিয়ে চলছে। বর্ষায় পানি এলেও কাজ বন্ধ থাকবে না।


স্থানীয় বাদাঘাট ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান নিজাম উদ্দিন বলেন, যাদুকাটা নদী সীমান্তের বিশাল প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের লীলাভূমিকে বিচ্ছিন্ন করে রেখেছে। সেতু নির্মিত হলে মেঘালয় পাহাড় ও বারেক টিলার অপরূপ সৌন্দর্য ছাড়াও সীমান্ত এলাকার শাহ্‌ আরেফিন (রহ.) আস্তানা, শিমুল বাগান, ঐতিহাসিক লাউড় রাজ্যের রাজধানী হলহলিয়ার ধ্বংসাবশেষ, শহীদ সিরাজ লেক ছাড়াও সীমান্তের তিন শুল্ক বন্দর– বড়ছড়া, চারাগাঁও ও বাগলীকে সড়কপথে যুক্ত করবে। এ ছাড়া সড়কপথে টাঙ্গুয়ার হাওরের কাছাকাছিও পৌঁছা যাবে। এতে পর্যটকদের সড়ক ভোগান্তি দূর হবে।


তাহিরপুর উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান করুণা সিন্ধু চৌধুরী বাবুল জানান, সরকারের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করতে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান সেতুটি নির্মাণে এমন টালবাহনা করছে। সংশ্লিষ্ট ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান কাজ করতে অনাগ্রহী হলে, তাদের সঙ্গে চুক্তি বাতিল করে নতুন ঠিকাদার নিয়োগের দাবি জানান তিনি।


নাম না প্রকাশের শর্তে স্থানীয় আরেক জনপ্রতিনিধি বললেন, জনপ্রতিনিধিরা এই বিষয়ে কথা বললে কর্তৃপক্ষ বিরক্ত হয়। এই সেতুতে কাজের চেয়ে বিল বেশি নিয়েছে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান।


জানা যায়, ৮৫ কোটি ৯৯ লাখ ৩০ হাজার ৬৭৮ টাকা ব্যয়ে সেতুটি নির্মাণে তমা কন্সট্রাকশনের সঙ্গে চুক্তি হয়। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তাদের দাবি, তারা ৭৪ শতাংশ কাজ সম্পন্ন করেছে। অথচ তারা বিল নিয়েছেন ৭৮ ভাগেরও বেশি।


এ বিষয়ে এলজিইডির তাহিরপুর উপজেলা প্রকৌশলী আলিফুল্লাহ খান জানান, এত বড় একটি কাজ যে গতিতে হওয়ার কথা, সেভাবে হচ্ছে না।


এলজিইডির নির্বাহী প্রকৌশলী আনোয়ার হোসেনের ভাষ্য, তারা দ্রুত কাজ আদায়ের চেষ্টা করছেন। এ বিষয়ে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে বারবার তাগিদ দেওয়া হচ্ছে।


এবিষয়ে স্থানীয় সংসদ সদস্য অ্যাডভোকেট রণজিত সরকার বলেন, সেতুটির নির্মাণকাজ দ্রুত সম্পন্ন করতে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের ঊর্ধ্বতনদের সঙ্গে তিনি কথা বলেছেন। তারা এই বছরের মধ্যে কাজ শেষ করবে জানিয়েছে।-সমকাল


সিলেট প্রতিদিন / এমএ


Local Ad Space
কমেন্ট বক্স
© All rights reserved © সিলেট প্রতিদিন ২৪
পোর্টাল বাস্তবায়নে : বিডি আইটি ফ্যাক্টরি