শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ০৪:৪৯ অপরাহ্ন

বুলবুলের হত্যাকান্ড: শাবিতে শোক প্রকাশ, ১০ দিন ক্লাস-পরীক্ষা স্থগিত

  • প্রকাশের সময় : ২৯/০৭/২০২২ ০৪:২২:৪৬
এই শীতে ভাঙন আতঙ্কে দিন কাটছে তাদের
Share
4

শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের লোকপ্রশাসন বিভাগের শিক্ষার্থী মো. বুলবুল আহমেদ হত্যাকাণ্ডে তার বিভাগে নেমেছে শোকের ছায়া। এ অবস্থায় ১০ দিনের জন্য ক্লাস পরীক্ষা স্থগিত করেছে ওই বিভাগ। শুক্রবার জুমার নামাযের পর বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় মসজিদে বুলবুলের আত্মার শান্তি কামনায় দোয়া ও মিলাদ মাহফিল অনুষ্ঠিত হয়েছে।

শুক্রবার (২৯ জুলাই) সকাল ১০টায় লোকপ্রশাসন বিভাগের ভারপ্রাপ্ত বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক শামীমা তাসনিম বলেন, বুলবুলের এই অকাল মৃত্যুতে আমরা সবাই শোকাহত। বুলবুলের এভাবে মৃত্যু ঘটবে আমরা সেটা ভাবতেও পারিনি। বুলবুলের মৃত্যুতে তার সহপাঠীরা মানসিকভাবে ভেঙে পরেছে।

এ অবস্থায় বিভাগের শিক্ষার্থীরা বিভাগীয় প্রধানকে জানায় যে, তারা (শিক্ষার্থীরা) এই অবস্থায় ক্লাস ও পরীক্ষা দিতে মানসিকভাবে প্রস্তুত না। মানসিকভাবে প্রস্তুত হতে তাদের কিছুদিন সময় লাগবে। তারপর ১০দিনের জন্য ক্লাস ও পরীক্ষা বন্ধ রাখার জন্য তারা আবেদন করে। আবেদনের ভিত্তিতে গত ২৬ জুলাই থেকে ৪ আগস্ট পর্যন্ত ক্লাস ও পরীক্ষা স্থগিত রাখা হয়েছে।

শামীমা তাসনিম বলেন, বুলবুলের মৃত্যু দিনের পরের দিন তাদের বর্ষের ভাইবার সময়সূচী নির্ধারিত ছিল। তার আর ভাইবা দেওয়া হল না। ২৫ জুলাই রাতে ঘটনার পর, ২৬ তারিখ থেকে বিভাগে কোনো ক্লাস, পরীক্ষা বা ভাইবা নেওয়া হয়নি। তবে বিভিন্ন বর্ষের পরীক্ষার শিডিউল ছিল। সবাই এখন মানসিকভাবে ভেঙে পরেছে।

বুলবুলের সহপাঠী অমিত ভৌমিক বলেন, বুলবুলের মৃত্যুতে আমাদের সবাই বন্ধু শূন্যতা অনুভব করছি। আমাদের সেমিস্টার ফাইনাল পরীক্ষা চলছিল। যেদিন বুলবুল মারা গেছে এর আগের দিন আমাদের পরীক্ষার ‘একটি সেমিনার’ ছিল। বুলবুল এতে অংশ নেয়। আর যেদিন মারা গেছে এর পরের দিন আমাদের ভাইবা ছিল।

এরপর তৃতীয় বর্ষের দ্বিতীয় সেমিস্টারের ক্লাস রুটিন পেয়ে যেতাম। কিন্তু বুলবুলের আর ভাইবা দেওয়া হলো না। ছিনতাইকারীরা তাকে বাঁচতে দেয়নি। আমরা সবাই শোকাহত। সে খুব মেধাবী ছাত্র ছিল। ও থাকলে আমরা আরও অনেক দূর আগাইতে পারতাম। অনেক ভালো পড়াশোনা করতাম। বিশ্ববিদ্যালয়ে দোয়া ও মিলাদ মাহফিল এদিকে- শুক্রবার নামাযের পর বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় মসজিদে বুলবুলের আত্মার শান্তি কামনায় দোয়া ও মিলাদ মাহফিলের আয়োজন করা হয়।

এতে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিন আহমেদ, শিক্ষক-শিক্ষার্থী, কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা উপস্থিত ছিলেন। আগামী রোববার বুলবুলের বিভাগে দোয়া ও মিলাদ মাহফিলের আয়োজন করা হয়েছে।

গত ২৫ জুলাই সন্ধ্যায় ক্যাম্পাসের ভেতরে ‘ছিনতাইকারীদের’ ছুরিকাঘাতে প্রাণ হারান বিশ্ববিদ্যালয়ের লোকপ্রশাসন বিভাগের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী বুলবুল আহমেদ। সঙ্গে থাকা এক ছাত্রীর ভাষ্য, তিনজন মাস্ক পরা লোক এসে বুলবুলকে ছুরিকাঘাত করে। তাকে হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন। খুনের ঘটনায় তদন্তে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ কমিটি গঠন করে। এর আগেই বুলবুলের সহপাঠীরা আন্দোলনে নেমে খুনিদের ২৪ ঘণ্টার মধ্যে গ্রেপ্তারের আল্টিমেটাম দেয়।

হত্যার ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার মুহাম্মদ ইশফাকুল হোসেন বাদী হয়ে জালালাবাদ থানায় সোমবার রাতে অজ্ঞাতদের বিরুদ্ধে মামলা করেন।

এখন পর্যন্ত তিনজনকে গ্রেপ্তার ও দুজনকে আটক দেখিয়েছে পুলিশ। এরমধ্যে রয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ের পাশের টিলারগাঁও এলাকার বাসিন্দা আনিছ আলীর ছেলে আবুল হোসেন (১৯)। বাকি দুজন হলেন- একই এলাকার মো. গোলাব আহমেদের ছেলে কামরুল ইসলাম (২৯) এবং তছির আলীর ছেলে মোহাম্মদ হাসান (১৯)। পেশায় তারা রাজমিস্ত্রি। আদালতে ১৬৪ ধরায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছে তারা সবাই। এরপর আদালত তাদেরকে কারাগারে প্রেরণ করে। ছুরিকাঘাতে নিহত বুলবুল নরসিংদী সদরের চিনিসপুর ইউনিয়নের মো. ওহাব মিয়ার ছেলে। সে শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে লোকপ্রশাসন বিভাগের ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষের ছাত্র ছিলেন।


সিলেট প্রতিদিন / এসএ


Local Ad Space
কমেন্ট বক্স
© All rights reserved © সিলেট প্রতিদিন ২৪
পোর্টাল বাস্তবায়নে : বিডি আইটি ফ্যাক্টরি