দেবাশীষ দেবু:: ছোট লাল রংয়ের একটা বাইসাইকেল ছিলো শামসুল ভাইয়ের। এখনও আছে নিশ্চয়। তিনি নিজেও ছোটখাটো মানুষ। সাইকেলটি ভাঙ্গা এবং পুরনো। এর পেছনের ক্যারিয়ারে থাকতো একটি কালো মোটা ডায়েরি। এই সাইকেলের প্যাডেল ঘুরতে ঘুরতে শহর সিলেট নগর হয়ে গেছে। তবু তার বাহন বদলায় নি।
সাইকেল নিয়েই তিনি ঘুরে বেড়াতেন নগরময়। আর গায়ে থাকতো পুরনো মলিন একটি স্যুট। কথা বলতেন ভাঙ্গা স্বরে (জ্বর সর্দিতে দুদিন ধরে আমার স্বরও এমন হয়ে গেছে)। জেড এম শামসুল ভাই সিলেটের স্থানীয় একটি পত্রিকায় কাজ করতেন। কবে থেকে জানি না। আমাদের অনেক আগে থেকে তো বটেই। ন্যাপের রাজনীতিও করতেন।
এ দুটোতেই আজকাল পয়সা করি করে ফেলা যাচ্ছে বেশ। শামসুল ভাই করতে পারেননি। নাকি ওই পথে জাননি। অর্থকড়ি কামানোর বুদ্ধিসুদ্ধি তো আর সকলের থাকে না! তেমন সখ্যতা ছিলো না, তবে তাকে আমার কেন যেনো ভালো লাগতো। এই ভালোলাগার সাথে কী শ্রদ্ধা ছিলো? নাকি করুণা -তার দারিদ্রতা নিয়ে? সরলতা নিয়ে?
চারদিকে বিত্তের বিপুল প্রসার আর তার উৎকট প্রদর্শনীর সময়ে, একই ধরণের পেশায় থেকেও অনেকে বড়লোক হয়ে যাওয়া সময়ে, নগরময় নতুন নতুন মডেলের দামি গাড়ি দ্রুত বেড়ে যাওয়া সময়ে শামসুল ভাই আর তার বাইসাইকেল কী বড্ড বেমানান হয়ে পড়েছিলো এখানে?
বড্ড অনাকাঙ্ক্ষিত? নাকি ছিলেন এই একঘেয়ে শহরের বৈচিত্র হয়ে? আজ সকালে ঘুম থেকে উঠেই তার মৃত্যুর খবর পেলাম। নগর সিলেটে ভাঙা বাইসাইকেল চালিয়ে সাংবাদিকতা করে যাওয়া সর্বশেষ লোকটি বোধহয় চলে গেলেন।