মুনায়েম মুন্না :: কলেজের জীবনের শেষ দিন। এযেন এক বেদনাভরা স্মরণীয় দিন। শাহপরান সরকারি কলেজের ব্যবসায় বিভাগের একজন ছাত্র আমি।
কলেজ জীবন শুরুর প্রথম দিন সবকিছু অচেনা অজানা। এমনকি আমার পাশে বসা মানুষটাকেও চিনতাম না। সে কেমন, কি তার পরিচয়, মানুষটা ভালো নাকি খারাপ কিছুই জানা নেই। ভিতরে একটু ভয় ভয়ও কাজ করছিল।
শুরু হল আমাদের ক্লাস। ভেবেছিলাম নিয়মিত ক্লাসে না আসলেও চলবে। কারণ, জানতাম কলেজের ক্লাস নিয়মিত করতে হয় না। তাছাড়া কলেজে নাকি রাজনীতি আছে এবং যখন খুশি তখন ক্লাস থেকে বের হওয়া যায়।
আমাদের কলেজ এতটাই সচেতন ও কঠোর এবং শিক্ষার্থীদের পাঠদানে আন্তরিক যে, প্রতিদিন কলেজে আসতেই হত।
প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ক্লাস ওয়ানের একটি বাচ্চাকে যেমন করে নজরদারির মধ্যে রাখা হয়, ঠিক তেমন করে আমাদেরকেও নজরদারির পাশাপাশি যত্নসহকারে পাঠদান শিক্ষকবৃন্দ। নিরাপত্তা নিশ্চিতেরও সর্বোচ্চ চেষ্টা চালিয়ে যেতেন তারা। যদিও আমাদের কলেজ ক্যাম্পাসে রাজনীতি নেই, তার পরও যেন কারো সাথে মারামারি না করি সেজন্য কঠোর নজরদারির মধ্যেই আমাদের থকতে হত।
কিন্তু এ এক আজব কলেজ সারাসপ্তাহ অর্থাৎ ছয় দিনই কলেজে আসতে হবে। তাই কলেজে নিয়মিত আসা শুরু হল। আস্তে আস্তে সবার সাথে পরিচয় হল, বাড়ল বন্ধু বান্ধব। বুকে ভয়ের আবরণ ছিঁড়ে সাহস সঞ্চয় হতে থাকে। শিক্ষক-শিক্ষিকা ও ক্যাম্পাসের প্রতি বাড়তে থাকল অন্যরকম এক ভালোবাসা। তার বন্ধন দিনে দিনে আরও মজবুত হতে থাকে। এভাবেই দেখতে দেখতে কেটে গেল সুখদুখের প্রায় তিন বছর। চলে এলো প্যান্ডামিক সিচুয়েশন।
তারপর এল বিদায়ের পালা। প্রথমে যারা ছিল অচেনা অজানা, যাদের সাথে মিলতে অস্বস্তি হতো একসময়, আজ তাদের ছেড়ে যেতে তার থেকেও অনেক বেশি কষ্ট হচ্ছে। মনে পড়ছে, সেই ক্যাম্পাসে কাটানো সময়গুলোর কথা।
মনে পড়ে সেই দিনগুলো, শিক্ষক-শিক্ষিকার সাথে আমাদের প্রতিদিনই সমবেত হওয়ার কথা। সেই স্মৃতিগুলো আজ আমাদেরকে কাঁদিয়ে তুলছে। কলেজ ক্যাম্পাসের স্মৃতিগুলো আজ যেন বুকের ভেতর শিউরে উঠছে, যা মুখের ভাষায় প্রাকাশ করা অসম্ভব। আজ নিজেকে মনে হচ্ছে যে ক্যাম্পাসের সকল পরিচিত মুখ বন্ধু বান্ধব সাবার কাছে যেন হার মেনে গেলাম। কেন জানিনা মনে হলো, আমি আজ কোথায় হারিয়ে যাচ্ছি। সবশেষে এটাই বস্তবতা। কষ্ট হলেও মানতে হবে।
সবার ভালোবাসা বুকে নিয়ে সামনের দিকে চলতে হবে। সঙ্গে থাকবে শিক্ষক বন্ধু-বান্ধব আর আত্মীয়-স্বজনের শুভকামনা।