বুধবার, ১৯ ফেব্রুয়ারী ২০২৫, ০৭:০৩ পূর্বাহ্ন

এসপি’র ডাকে সাড়া না দিয়ে সিলেটের আলেমদের কর্মসূচি

  • প্রকাশের সময় : ০৪/০২/২০২৫ ১২:৩৩:০১
এই শীতে ভাঙন আতঙ্কে দিন কাটছে তাদের
Share
70

সিলেটের এসপি’র ডাকে সাড়া দিলেন না হরিপুর মাদ্রাসার মুহতামিম মাওলানা হেলাল আহমদ। সোমবার হরিপুর মাদ্রাসায় কয়েক হাজার তৌহিদী জনতার সমাবেশে জানিয়ে দিলেন- ‘সিলেটের এসপি ডাকলে আমি একা যেতে পারি না। প্রয়োজনে এসপিকে মুরুব্বিদের কাছে আসতে হবে।’ এক সপ্তাহ ধরে উত্তাল পূর্ব সিলেট। আলেম-ওলামাদের নিয়ে কটূক্তির প্রতিবাদে মুখোর জৈন্তাপুর, কানাইঘাট ও গোয়াইনঘাটের আলেম সমাজ। সঙ্গে তৌহিদী জনতাও। তাদের নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে একের পর এক কটূক্তি করে স্ট্যাটাস। সর্বশেষ তারা সোমবার সকালের মধ্যে ক্ষমা চাওয়ার সময়সীমা বেঁধে দিয়েছিলেন। ওখানেও কটূক্তিকারীরা উপস্থিত না হওয়ায় দুপুরে সিলেটের হরিপুর মাদ্রাসা প্রাঙ্গণে সমাবেশ করে নতুন করে বৃহস্পতিবারের মধ্যে ক্ষমা চাওয়ার আল্টিমেটাম দিয়েছেন। নতুবা বৃহস্পতিবার থেকে বৃহত্তর জৈন্তা অবরোধ করা হবে বলে জানিয়ে দিয়েছেন আলেম সমাজের নেতৃবৃন্দ।


অভিযোগের তীর জামায়াতে ইসলামীর কর্মীদের দিকে। তবে জামায়াতের নীতিনির্ধারক পর্যায় থেকে এখন পর্যন্ত প্রকাশ্য কোনো মন্তব্য আসেনি। ঘটনার সূত্রপাত ৩০শে ডিসেম্বর। এ দিন জামায়াতের কর্মী পরিচয়দানকারী এক ব্যক্তি গাছবাড়ি বড়দেশ উত্তর এলাকার বাসিন্দা জামাল হুসাইন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে হযরত শেখ আব্দুল্লাহ (রহ.) হরিপুরীকে নিয়ে কটূক্তিমূলক মন্তব্য করেন। ওই স্ট্যাটাসে তিনি তার শ্বশুর আল্লামা প্রিন্সিপাল শফিকুল হক বুলবুলকে নিয়ে মন্তব্য করার কড়া সমালোচনা করেন। একইসঙ্গে তিনি সিলেটের প্রখ্যাত আলেম আল্লামা আব্দুল্লাহ হরিপুরী (রহ.) ও তার ছেলে মাদ্রাসার বর্তমান প্রিন্সিপাল মাওলানা হেলাল আহমদকে নিয়ে কটাক্ষ করেন।


এর আগে ২৯শে ডিসেম্বর দারুল উলুম কানাইঘাট মাদ্রাসার ওয়াজ মাহফিলে ‘হুদ মাওলানা’ নাম উল্লেখ করে অতীত কর্মকাণ্ড তুলে ধরে বক্তব্য দিয়েছিলেন মাওলানা হেলাল আহমদ। এর আগে শতবর্ষী এক আলেমের বক্তব্যকে ঘিরে দু’পক্ষ বাকবিতণ্ডায় জড়িয়ে ছিলেন।


এদিকে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে জামাল হুসাইনের মন্তব্যের পর ক্ষোভ দেখা দেয় পূর্ব সিলেটের হরিপুরে। স্ট্যাটাসের প্রতিবাদে হরিপুরের আলেম-ওলামারাসহ স্থানীয় জনতা রাতেই সিলেট-তামাবিল সড়ক অবরোধ করেন। এ সময় কটূক্তিকারীদের দারুল উলুম কানাইঘাট মাদ্রাসায় গিয়ে আলেম-ওলামাদের কাছে ক্ষমা চাওয়ার নিঃশর্ত দাবি জানান। এরপরও হরিপুর মাদ্রাসা ও দারুল উলুম কানাইঘাট মাদ্রাসার আলেম-ওলামাদের উদ্দেশ্য করে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে কয়েকটি স্ট্যাটাস দেয়া হয়। আর এই স্ট্যাটাসে ক্ষুব্ধ আলেম-ওলামাদের মধ্যে আরও ক্ষোভ দেখা দেয়। এই ক্ষোভের অংশ হিসেবে কয়েক দফা হরিপুর মাদ্রাসায় বৈঠক হয়। এ বৈঠকে পূর্ব সিলেটের আলেম-ওলামারা অংশ নেন।

তারা ঘটনার জন্য দায়ী ব্যক্তিদের প্রকাশ্যে আলেম-ওলামাদের কাছে ক্ষমা চাওয়ার আহ্বান জানান। আলেম-ওলামাদের দাবি- যতই তাদের ক্ষমা চাওয়ার আহ্বান জানানো হয়েছে ততই তারা নানাভাবে আলেম-ওলামাদের নিয়ে কটূক্তি অব্যাহত রেখেছে। যারা এসব করেছে তারা কোনো না কোনোভাবে জামায়াতের রাজনৈতিক ধারার ব্যক্তি। বিষয়টি জামায়াত নেতারা অবগত থাকলেও তারা নীরব রয়েছেন। এদিকে- হরিপুরসহ কয়েকটি মাদ্রাসা কয়েক হাজার ছাত্র-শিক্ষক রোববার দুপুরে দারুল উলুম কানাইঘাট মাদ্রাসায় যান। মাদ্রাসা প্রাঙ্গণে আলেম-ওলামারা সমাবেশ করেন। সমাবেশ থেকে তারা ঘোষণা দেন সোমবার সকালের মধ্যে কটূক্তিকারীরা এসে প্রকাশ্যে ক্ষমা প্রার্থনা এবং আলেম সমাজের মাধ্যমে তওবা না করলে আন্দোলন কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে। তাদের এই আল্টিমেটামেও কেউ সাড়া দেয়নি। এর প্রেক্ষিতে সোমবার সকালে দারুল উলুম কানাইঘাট মাদ্রাসাসহ কয়েকটি মাদ্রাসার শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও তৌহিদী জনতা মিছিল সহকারে এসে হরিপুর মাদ্রাসায় উপস্থিত হন। এ সময় তারা কটূক্তিকারীদের সঙ্গে জামায়াতে ইসলামের ইন্ধন রয়েছে দাবি করে স্লোগানও দেন। বেলা ১১টায় দারুল উলুম কানাইঘাট মাদ্রাসার নায়েবে মুহতামিম শায়খুল হাদীস আলিম উদ্দিন দুর্লভপুরী, শায়খুল হাদীস আব্দুল কাদির বাগরখলী ও হরিপুর মাদ্রাসার মুহতামিম মাওলানা হেলাল আহমদের উপস্থিতিতে সমাবেশ শুরু হয়। সমাবেশে হরিপুরের ব্যবসায়ীসহ জৈন্তাপুর এলাকার গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ উপস্থিত ছিলেন।

সমাবেশে বক্তারা বলেন- পূর্বের সময়সীমা পেরিয়ে গেলেও কটূক্তিকারী আলেম-ওলামাদের সামনে এসে হাজির হয়ে ক্ষমা চাননি। উপরন্তু সিলেটের পুলিশ সুপার হরিপুর মাদ্রাসার মুহতামিম মাওলানা হেলাল আহমদকে তার অফিসে ডেকেছেন। এতে পুলিশ সুপার ধৃষ্টতা দেখিয়েছেন বলে জানান তারা।


বক্তারা বলেন- ঘটনার সমাপ্তি আগামী বৃহস্পতিবারের মধ্যে আলেম-ওলামাদের কাছে এসে শেষ করতে হবে। নতুবা বৃহস্পতিবার থেকে বৃহত্তর জৈন্তা অবরোধ কর্মসূচি পালন করা হবে। সমাবেশের খবর পেয়ে সেখানে ছুটে গিয়েছিলেন সিলেটের সাবেক মেয়র ও বিএনপি’র চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আরিফুল হক চৌধুরী।


সমাবেশে বক্তব্য দেয়ার সময় তিনি আলেম- ওলামাদের আন্দোলনের সঙ্গে একাত্মতা পোষণ করেন। একইসঙ্গে তিনি সিলেটের প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলোচনা করবেন বলে জানিয়ে এসেছেন। আরিফুল হক চৌধুরী জানিয়েছেন- বিষয়টি নিয়ে আলোচনা চালাচ্ছেন। প্রশাসনের তরফ থেকে এ ব্যাপারে উদ্যোগ নিলে তিনি সার্বিক সহযোগিতা করবেন।


এ ব্যাপারে  জৈন্তাপুরের হরিপুর মাদ্রাসার মুহতামিম মাওলানা হেলাল আহমদ জানিয়েছেন- আলেম-ওলামাদের নিয়ে কটূক্তি করার কারণে আলেম-ওলামারাসহ বৃহত্তর জৈন্তার মানুষ ক্ষুব্ধ হয়েছে। আমরা মনে করছি বিষয়টির ইন্ধনদাতা জামায়াতের কতিপয় নেতাকর্মী। তারা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এ নিয়ে কুৎসা রটনা করেই যাচ্ছে। যদি কটূক্তিকারীরা এসে প্রকাশ্যে ক্ষমা ও তওবা না করে তাহলে ঘোষিত আন্দোলন কর্মসূচি চালিয়ে যাওয়ার পক্ষে ঐক্যবদ্ধ রয়েছেন আলেম সমাজ ও তৌহিদী জনতা।

তবে ঘটনাটির সঙ্গে জামায়াতে ইসলামীর কোনো সম্পর্ক নেই বলে জানিয়েছেন সিলেট জেলা জামায়াতের সেক্রেটারি জয়নাল আবেদীন। তিনি জানিয়েছেন- জামায়াতের কেউ মন্তব্য করছে না, স্ট্যাটাসও দিচ্ছে না। এ কারণে ঘটনাটি নিয়ে সিলেট জামায়াতে ইসলামী নীরব রয়েছে।

জৈন্তাপুর থানার ওসি আবুল বাশার মো. বদিউজ্জামান জানিয়েছেন- এ ঘটনায় পুলিশের কাছে কেউ কোনো অভিযোগ করেনি। তবে আইনশৃঙ্খলা রক্ষার বিষয়টি পুলিশের তরফ থেকে পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে বলে জানান তিনি।


সিলেট প্রতিদিন / এসএএম


Local Ad Space
কমেন্ট বক্স
© All rights reserved © সিলেট প্রতিদিন ২৪
পোর্টাল বাস্তবায়নে : বিডি আইটি ফ্যাক্টরি