বুধবার, ১৯ ফেব্রুয়ারী ২০২৫, ০৯:০২ পূর্বাহ্ন
ওসমানীনগরে সড়ক দুর্ঘটনা

হাসপাতালে পাশাপাশি বেডে দুই শিশু, জানে না তাদের মা–বাবা বেঁচে নেই

  • প্রকাশের সময় : ০৩/০২/২০২৫ ১১:৪০:৪৬
এই শীতে ভাঙন আতঙ্কে দিন কাটছে তাদের
Share
49

সিলেট এম এ জি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ক্যাজুয়ালটি ওয়ার্ডে পাশাপাশি বিছানায় চিকিৎসাধীন দুই শিশু। একজন জান্নাত (৩), আরেকজন সোহা (৩)। সম্পর্কে তারা খালাতো বোন। হাসপাতালে তাদের শয্যার পাশে নিশ্চুপ বসে ছিলেন স্বজনেরা। নারায়ণগঞ্জে থেকে সিলেটে বেড়াতে যাওয়ার পথে ট্রাকের সঙ্গে প্রাইভেট কারের মুখোমুখি সংঘর্ষে আহত হয়েছে তারা। দুর্ঘটনায় দুজনের মধ্যে একজন বাবা ও আরেকজন মাকে হারিয়েছে।


রোববার সকাল আটটার দিকে সিলেট-ঢাকা মহাসড়কের ওসমানীনগরের সাতমাইল এলাকায় ট্রাক ও প্রাইভেট কারের মুখোমুখি সংঘর্ষ হলে চারজন নিহত ও পাঁচজন আহত হন।


নিহত ব্যক্তিরা হলেন ঢাকার সাভার উপজেলার আশুলিয়া এলাকার মোছা. সায়মা আক্তার (৩৫), তাঁর ছেলে আয়ান (৬), বোন শামীমা ইয়াসমিন (৩৮) ও তাঁদের খালাতো বোনের স্বামী সোহেল ভূঁইয়া (৩৮)। নিহত সোহেল ভূঁইয়া নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জের মোগড়াপাড়া গ্রামের বাসিন্দা। নিহত ব্যক্তিদের মধ্যে সোহেল ভূঁইয়া আহত সোহার বাবা এবং শামীমা ইয়াসমিন জান্নাতের মা।


হাসপাতালে দুই শিশুর শয্যার পাশে মাথায় হাত দিয়ে বসে ছিলেন নিহত সোহেল ভূঁইয়ার ভায়রা আলম হোসেন। তিনি বলেন, সোহেল ভূঁইয়া ও তিনি আলাদা দুটি গাড়ি চালিয়ে সিলেটে আসছিলেন। সোহেলের গাড়িতে এবং তাঁর গাড়িতে যাঁরা ছিলেন, সবাই নিজেদের স্বজন। এখনো হাসপাতালে চিকিৎসাধীনরা মৃত্যুর বিষয়টি জানে না। তিনি নিজেও একসঙ্গে দুই শ্যালিকা, ভায়রাসহ চার স্বজন নিহত হওয়ায় বাকরুদ্ধ হয়ে পড়েছেন। নিহত স্বজনদের বিষয়ে আহতদের কাছে কী বলবেন, সেটি চিন্তা করতে পারছেন না।


স্বজনেরা জানান, সোহেল ভূঁইয়া ও তাঁর ভায়রা আলম হোসেন একটি প্রাইভেট কার ও একটি মাইক্রোবাসে করে পরিবারের সদস্যদের নিয়ে শনিবার রাতে সিলেটের উদ্দেশে বের হয়েছিলেন। প্রাইভেট কারটি চালাচ্ছিলেন সোহেল ভূঁইয়া এবং মাইক্রোবাসটি আলম হোসেন চালাচ্ছিলেন। প্রাইভেট কারে ৪ শিশুসহ ৯ জন ছিলেন। মাইক্রোবাসটিতে আরও কয়েকজন যাত্রী ছিলেন। মাইক্রোবাসটি সামনে ছিল, পেছনে ছিল প্রাইভেট কারটি। রোববার সকালে প্রাইভেট কারটি সিলেট-ঢাকা মহাসড়কের ওসমানীনগরের সাতমাইল এলাকায় পৌঁছালে সিলেটের দিক থেকে ছেড়ে আসা একটি ট্রাকের সঙ্গে মুখোমুখি সংঘর্ষ হয়। পরে স্থানীয় বাসিন্দারা প্রাইভেট কারে থাকা ৯ জনকে উদ্ধার করে স্থানীয় একটি হাসপাতালে নিয়ে গেলে সায়মা আক্তার ও আয়ানকে মৃত ঘোষণা করেন চিকিৎসক। আহত অন্য সাতজনকে সিলেট এম এ জি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রেরণ করেন। সিলেটে নিয়ে আসার পর সোহেল ভূঁইয়া ও শামীমা ইয়াসমিনকে মৃত ঘোষণা করেন চিকিৎসক। অন্য পাঁচজনকে হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে।


স্বজনেরা আরও জানান, নিহত সোহেল ভূঁইয়ার চার মেয়ের মধ্যে দুই মেয়ে ও স্ত্রী হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। অন্য দুই মেয়ে যমজ। তারা মাইক্রোবাসে থাকায় আহত হয়নি। তারা সিলেটে এক স্বজনের বাড়িতে অবস্থান করছে।


সোহেলের চাচা জাহিদ হাসান বলেন, হাসপাতালে চিকিৎসাধীন শিশুদের অবস্থা নাজুক। চিকিৎসকেরা তাদের চিকিৎসা কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছেন। সোহেলের ছোট মেয়ের অবস্থা কিছুটা ভালো হলেও মেজ মেয়ে এবং স্ত্রীর অবস্থা গুরুতর। তিনি বলেন, হাসপাতালের পাশাপাশি শয্যায় থাকায় শিশু দুটি চুপচাপ থাকছে। অনেক সময় কান্না করছে, তারা তাদের মা-বাবার কাছে যেতে যাচ্ছে। এতটুকু মেয়েদের বিষয়টি কীভাবে বোঝাবেন, এ নিয়ে সংশয়ে আছেন।


জাহিদ হাসান আরও বলেন, মাত্র কয়েক দিনের জন্য সোহেল দুবাই থেকে দেশে এসেছিলেন। এর মধ্যে পরিবার ও স্বজনদের নিয়ে সিলেটে বেড়াতে আসার পথে মর্মান্তিক দুর্ঘটনা ঘটল। ৬ ফেব্রুয়ারি সোহেলের দুবাইয়ে ফিরে যাওয়ার কথা ছিল। কিন্তু এর আগেই না ফেরার দেশে চলে গেলেন তিনি।


সিলেট এম এ জি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের উপপরিচালক সৌমিত্র চক্রবর্তী বলেন, হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ওই নারীর অবস্থা গুরুতর। তবে শিশুদের অবস্থা আশঙ্কামুক্ত।


হাসপাতালের পুলিশ বক্সের ইনচার্জ পলাশ দাশ বলেন, নিহত চারজনের মধ্যে দুজনের মরদেহ হাসপাতালের মর্গে রাখা হয়েছে। অন্য দুজনের মরদেহ ওসমানীনগরের একটি হাসপাতালে আছে। নিহত ব্যক্তিদের পরিবারের পক্ষ থেকে লাশগুলো বিনা ময়নাতদন্তে হস্তান্তরের জন্য আবেদন করা হয়েছে।


সিলেট প্রতিদিন / এমএনআই


Local Ad Space
কমেন্ট বক্স
© All rights reserved © সিলেট প্রতিদিন ২৪
পোর্টাল বাস্তবায়নে : বিডি আইটি ফ্যাক্টরি