সিলেটের গোয়াইনঘাটে ৩ দিনের ব্যবধানে ৪ জনের মৃত্যুতে এলাকায় শোকের ছায়া নেমে এসেছে। পরিবারে ও চলছে মাতম। উপজেলার বিছনাকান্দি ইউনিয়নের ভিতরগুল গ্রামে এ দুর্ঘটনা ঘটে।
জানা যায়, দুই দিনে পরিবারের দুই সদস্যের মৃত্যুর কথা জানিয়ে রাতে ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিয়েছিলেন কলেজছাত্র রিফাত আহমদ কিবরিয়া। পরদিন সকালে কলেজে পরীক্ষায় অংশ নিয়ে দুপুরে প্রয়াত চাচির জানাজায় অংশ নিতে যাচ্ছিলেন। মোটরসাইকেলে তাঁর সঙ্গে ছিলেন চাচাত ভাই আবু সুফিয়ানও। কিন্তু বাড়ি পৌঁছানোর আগেই দুজনই সড়ক দুর্ঘটনায় প্রাণ হারিয়েছেন।
বুধবার (২২ জানুয়ারি) দুপুরে সিলেটের গোয়াইনঘাট উপজেলার লেঙ্গুরা সতী গ্রামে এ দুর্ঘটনা ঘটে। নিহত রিফাত আহমদ (১৯) উপজেলার বিছনাকান্দি ইউনিয়নের ভিতরগুল গ্রামের শফিকুর রহমানের ছেলে। আবু সুফিয়ান (১৯) একই গ্রামের ফরিদ আহমদের ছেলে। তাঁরা দুজন সম্পর্কে চাচাত ভাই। তিন দিনের ব্যবধানে একই পরিবারের চার সদস্যের মৃত্যুর ঘটনায় স্বজনদের আর্তনাদে এলাকার পরিবেশ ভারী হয়ে উঠেছে।
স্থানীয় ও পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, রিফাত আহমদ ও আবু সুফিয়ান এইচএসসি নির্বাচনী (টেস্ট) পরীক্ষা দিতে বুধবার কলেজে গিয়েছিলেন। আগের দিন চাচি মারা যাওয়ায় নির্ধারিত সময়ের আগেই তাঁরা নিজেদের পরীক্ষার খাতা জমা দিয়ে দুই ভাই মিলে মোটরসাইকেলে করে বাড়ি ফিরছিলেন। বেলা দেড়টার দিকে গোয়াইনঘাটের লেঙ্গুরা সতী গ্রামে পৌঁছালে ব্যাটারিচালিত অটোরিকশাকে ওভারটেক করতে গিয়ে মোটরসাইকেলটির একটি পিকআপের সঙ্গে সংঘর্ষ হয়। এতে তাঁরা সড়কে ছিটকে পড়েন। এ সময় ব্যাটারিচালিত অটোরিকশাটি দুজনের ওপর দিয়ে চলে যায়।
গোয়াইনঘাট থানার উপপরিদর্শক (এসাআই) জহর লাল দত্ত বলেন, ঘটনাস্থলেই রিফাত আহমদ মারা যান। তাঁর লাশ উদ্ধার করে থানায় আনা হয়েছে। আবু সুফিয়ানকে আহত অবস্থায় সিলেট এম এ জি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়েছিল। কিন্তু হাসপাতালে নেওয়ার পর চিকিৎসক তাঁকেও মৃত ঘোষণা করেছেন। ঘটনাস্থল থেকে মোটরসাইকেল উদ্ধার করে থানায় নেওয়া হয়েছে।
পারিবারিক সূত্রে জানা গেছে, এর আগে গত সোমবার রাতে সিলেটের একটি হাসপাতালে সন্তান জন্ম দিতে গিয়ে মারা যান রিফাতের আরেক চাচাত ভাই কয়েস আমদের স্ত্রী রেফা বেগম (৩৫)। মঙ্গলবার (২১ জানুয়ারি) দুপুরে রেফা বেগমের জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। ওই দিন রাতে রেফা বেগমের শাশুড়ি সহিজুন বেগমের (৭৫) মৃত্যু হয়। সহিজুন বেগম নিজ বাড়িতে হঠাৎই অসুস্থ হয়ে পড়েন। উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তাঁর মৃত্যু হয়।
পরিবারের দুই সদস্যের মৃত্যুর বিষয়টি নিয়ে কলেজছাত্র রিফাত আহমদ মঙ্গলবার রাতে তাঁর ফেসবুকে একটি স্ট্যাটাস দিয়েছিলেন। সেখানে তিনি লিখেছিলেন, ‘ও আল্লাহ গো, এক দিনে দুজনকে হারালাম, ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন, সন্ধ্যায় (রাত) ৮.৫৭ মিনিটের সময় আমার বড় আম্মা এমডি আতিকুর রহমান ভাইয়ের আম্মা ইন্তেকাল করিয়াছেন। বড় ভাবি মা হতে গিয়ে নিজের জীবন দিয়েছেন। আল্লাহ, আমার ফ্যামিলিকে ধৈর্য ধরার তৌফিক দেন।’
এবিষয়ে ভিতরগুল গ্রামের বাসিন্দা আবদুল আজিজ বলেন, তিন দিনের ব্যবধানে একই পরিবারের চার সদস্য মারা গেছেন। এতে পরিবারে শোকের মাতম চলছে। এ ঘটনায় এলাকার বাসিন্দারাও শোকার্ত। তিনি বলেন, সন্তান জন্ম দিতে গিয়ে মারা যাওয়া রেফা বেগমের জানাজা মঙ্গলবার দুপুরে অনুষ্ঠিত হয়েছে। বুধবার দুপুরে রেফা বেগমের শাশুড়ি সহিজুন বেগমের জানাজা অনুষ্ঠিত হয়েছে।