বুধবার, ১৯ ফেব্রুয়ারী ২০২৫, ০৮:০৫ পূর্বাহ্ন

ঐতিহ্যবাহী মাছের মেলায় ভীড়

  • প্রকাশের সময় : ১৪/০১/২০২৫ ০১:১১:১৯
এই শীতে ভাঙন আতঙ্কে দিন কাটছে তাদের
Share
23

পৌষ সংক্রান্তির শেষ দিনে মৌলভীবাজারের শেরপুরে শতবর্ষের ঐতিহ্যবাহী মাছের মেলা জমে উঠেছে। মেলায় দেশের নানা প্রান্ত থেকে এসেছেন ক্রেতা-বিক্রেতারা। বিক্রেতারা বিশাল আকৃতির কয়েক ধরনের মাছ নিয়ে অপেক্ষা করছেন। আর ক্রেতারা নিজের পছন্দের মাছ ক্রয় করছেন দামদর করে। কেউবা আবার বড় বড় মাছ দেখে নিজের মনকে করছেন তৃপ্ত। শতবর্ষী এই মাছের মেলা হয়ে উঠেছে মানুষের ঐতিহ্যের অংশ। মৌলভীবাজার জেলা সদর থেকে ২২ কিলোমিটার পশ্চিমে শেরপুরে ব্যতিক্রমী এই মাছের মেলার আয়োজন করা হয়েছে। 


মেলার আয়োজকরা জানান, রোববার (১২ জানুয়ারি) বিকেল থেকে বিক্রেতারা আসতে শুরু করেন এ মেলায়। সন্ধ্যা থেকে শুরু হয় পাইকারী মাছ বিক্রি। দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসা পাইকারী ক্রেতারা নিলামে অংশ নিয়ে মাছ কিনেছেন। এসব মাছ গাড়িবোঝাই করে নিয়ে যাচ্ছেন দেশের দূর-দূরান্তে। সোমবার সকাল থেকে শুরু হয় খুচরা বিক্রি। চলবে মঙ্গলবার সকাল পর্যন্ত। শেষ দিনের ক্রেতারা মূলত মৌলভীবাজারসহ আশপাশের জেলাগুলো থেকে আসা মানুষজন। কয়েক হাজার থেকে লাখ টাকার মাছ নিয়ে বসেছেন বেপারীরা।


সোমবার রাতে সরেজমিনে মেলায় গিয়ে দেখা যায়, একপাশে পাইকারি বিক্রেতারা বড় বড় মাছ দিয়ে আড়ত সাজাচ্ছেন। রাজশাহী, খুলনা, বাগেরহাট, কিশোরগঞ্জসহ দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে এসেছেন তারা। খুচরা বিক্রেতারা নিলামে অংশ নিয়ে তাদের মাছ কিনে নিচ্ছেন। অন্য পাশে খুচরা বিক্রেতারা মাছ নিয়ে বসেছেন। সাধারণ ক্রেতারা দরদাম করছেন। কেউ কেউ বাজারের মাছ ঘুরে ঘুরে দেখছেন। নারী ক্রেতাদের উপস্থিতিও দেখা গেছে । বিক্রেতাদের কাছে ছিল দেশের বিভিন্ন নদী, হাওর, বিল ও গাঙের দেশীয় ছোট বড় মাছ। মেলায় আনা হয়েছে বাগাড় মাছ ছাড়াও বিভিন্ন আকৃতির চিতল, বোয়াল, রুই, কাতলা, মহাশোল, পাবদা, আইড়, গ্রাসকার্প, সামুদ্রিক মাছসহ বিভিন্ন প্রজাতির মাছ। মৎস্য ব্যবসায়ীদের দাবি অনুযায়ী দেশের সবচেয়ে বড় মাছের মেলা এটি।


মাছ বিক্রেতা ছমন মিয়া প্রায় দেড় মণ ওজনের বাগাড় মাছ এনেছেন মেলায়। দাম চাইছেন আড়াই লাখ টাকা। তিনি জানান, ক্রেতারা দাম করছেন। কিন্তু কাঙ্ক্ষিত দাম না পাওয়ায় বিক্রি করছেন না।


সিলেট থেকে ময়নুল ইসলাম ও আফাজ মিয়া বড় আকারের দুটি বোয়াল মাছ নিয়ে এসেছেন। তারা জানান, মাছগুলো এনেছেন জগন্নাথপুরের বাদাউড়া গাঙ্গ থেকে। দুটি মাছের ওজন প্রায় এক মণ। দাম চাইছেন ৪৫ হাজার টাকা। কিন্তু ৩০ হাজার পর্যন্ত দাম হয়েছে।


আল্লাহর দান মৎস্য আড়তের মালিক মো. ফজলু মিয়া বলেন, প্রতি বছরই আমরা মেলায় অংশ গ্রহণ করি। আমাদের কাছে কুশিয়ারা ও হাকালুকি হাওরের বড় মাছ রয়েছে। দেশের বিভিন্ন এলাকায় মেলা হলেও এটিই দেশের বড় মেলা।


মাছ কিনতে আসা রাজনগর উপজেলার বাসিন্দা কামরান আহমদ বলেন, এবার মাছের দাম একটু বেশি মনে হচ্ছে। এখনও মাছ ক্রয় করা হয়নি। শেষ দিকে দাম কিছুটা কমলে ১০-১২ হাজার টাকার মধ্যে মাছ কিনবো।


মেলা পরিচালনার দায়িত্বে থাকা মুদ্রত আহমদ মোহন বলেন, আমরা প্রশাসনের অনুমতি নিয়ে মেলার আয়োজন করেছি। এবার ২০টি আড়ত ও দুই শতাধিক খুচরা স্টলে মাছ বিক্রি হচ্ছে। তবে প্রশাসন থেকে অনুমতি পেতে দেরি হওয়ায় রাস্তাঘাট ঠিকঠাক করা যায়নি। অন্তত এক দিন বেশি সময় পেলে ভালো হতো।


মৌলভীবাজার সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. তাজউদ্দিন বলেন, উৎসবমুখর পরিবেশে মাছের মেলায় মানুষ আসছে। মেলা বাবদ ১ লাখ ৬২ হাজার ৫০০ টাকা রাজস্ব আদায় হয়েছে। পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে এবার সময় কম দেওয়া হয়েছে। আগামীতে ২-১ দিন বাড়িয়ে দিতে চেষ্টা করা হবে।


সিলেট প্রতিদিন / এসএএম


Local Ad Space
কমেন্ট বক্স
© All rights reserved © সিলেট প্রতিদিন ২৪
পোর্টাল বাস্তবায়নে : বিডি আইটি ফ্যাক্টরি