বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক শফিউল আলম চৌধুরী নাদেল বলেছেন, মার্চের মধ্যেই সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বাংলাদেশ ফিরবেন।তিনি (৯ জানুয়ারী) এক ভিডিও বার্তায় এ কথা বলেন।তবে কোন প্রক্রিয়ায় শেখ হাসিনা ভার থেকে বাংলাদেশ থেকে ফিরবেন সে বিষয়টি তিনি তার ভিডিও বার্তায় পরিস্কার করেননি।
তিনি ইউনুস সরকারের নানা সমালোচনা করে আরও বলেন,আগামী ১ মাসের মধ্যে বাংলাদেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে অনেক পরিবর্তন আসবে এ পর্যন্ত দেশের মানুষ ও দলীয় নেতাকর্মীদের ধৈর্য্য ধরে পরিস্থিতি মোকাবেলা করার জন্য অনুরোধ করন। এসময় দেশের সাধারণ জনগনকে আওয়ামী লীগের পাশে থাকার আহবান জানান নাদেল।
৮ মিনিট ৫০ সেকেন্ড দীর্ঘ ভিডিও বার্তায় তিনি বলেন, ‘এ দেশ আমাদের অহংকার।
একটি জঙ্গিবাদী রাষ্ট্র বা জাতি হিসেবে আমরা বিশ্বে পরিচিত হতে চাই না। গতব ছর আমরা জানুয়ারিতে বই উৎসব করেছিলাম। কিন্তু ড. ইউনূস সরকার শিশুদের এই উৎসব থেকে বঞ্চিত করেছে। শুধু শিশুদের নয়, এ দেশের সকল মানুষের আশা-আকাঙ্ক্ষার বিপরীতে তারা অবস্থান নিয়েছে।
আওয়ামী লীগকে ছোট করা জন্য বাঙালি জাতির অহংকার, সর্বশ্রেষ্ঠ ইতিহাস মুক্তিযুদ্ধকে অপদস্থ করছে।’
তিনি বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের নানা সমালোচনা করে বলেন, ‘আগামী ১ মাসের মধ্যে বাংলাদেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে অনেক পরিবর্তন আসবে।’ এ পর্যন্ত দেশের মানুষ ও দলীয় নেতাকর্মীদের ধৈর্য ধরে পরিস্থিতি মোকাবেলা করার জন্য অনুরোধ করেন তিনি।
দেশের সাধারণ জনগণকে আওয়ামী লীগের পাশে থাকার আহ্বান জানিয়ে নাদেল বলেন, ‘আওয়ামী লীগ দীর্ঘদিন দেশ পরিচালনা করেছে।
দেশের উন্নয়নের চিত্র সারা বিশ্বের মানুষ দেখেছে। দেশ পরিচালনা করতে গিয়ে আমাদেরও অনেক ভুল ছিল, আমরা এ জন্য ক্ষমাপ্রার্থী।’
দলীয় নেতাকর্মীদের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘আপনাদের ওপর অনেক নির্যাতন হয়েছে। অনেককে হত্যা করা হয়েছে। অনেককে বিকলাঙ্গ করে দেওয়া হয়েছে।
অনেকের বাসা বাড়িতে আক্রমণ করা হয়েছে। আমাদের অনেক কর্মী নানাবিধ বিপদের মধ্যে আছে। আমরা আমাদের কর্মীদের খবর ঠিকমতো নিতে পারিনি। আপনারা ধৈর্য ধরুন, আগামী মার্চের পূর্বেই নেত্রী দেশে ফিরবেন।’
এ দিকে ভারতে অবস্থান করা সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভিসার মেয়াদ বাড়িয়েছে মোদি সরকার। বিষয়টির সঙ্গে সম্পৃক্ত কয়েকজন কর্মকর্তার বরাত দিয়ে এ তথ্য জানিয়েছে ভারতীয় সংবাদমাধ্যম হিন্দুস্তান টাইমস।
ভারত সরকার এমন এক সময়ে শেখ হাসিনার ভিসার মেয়াদ বাড়াল যখন মোদি সরকারের কাছে শেখ হাসিনাকে ফেরত চেয়ে ‘কূটনৈতিক নোট’ পাঠিয়েছে বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকার।
গত ২৩ ডিসেম্বর ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকারের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় শেখ হাসিনাকে ফেরত চেয়ে ভারতের কাছে একটি কূটনৈতিক নোট পাঠিয়েছে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে কয়েকজন ভারতীয় কর্মকর্তা হিন্দুস্তান টাইমসকে বলেন, ‘ভারতে থাকার সুবিধার্থে বাংলাদেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রীর ভিসার মেয়াদ বাড়ানো হয়েছে।’ তাঁর ভারতে আশ্রয়ের বিষয়টি মোকাবিলার জন্য ‘সুনির্দিষ্ট আইন নেই’ বলেও জানান তাঁরা।
ওই কর্মকর্তারা আরও বলেন, ‘শেখ হাসিনার ভিসার মেয়ার বাড়ানোর বিষয়টি ভারতের কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন।’
হিন্দুস্তান টাইমস গত ৩ ডিসেম্বর প্রকাশিত আরেকটি প্রতিবেদনে বলেছে, শেখ হাসিনাকে প্রত্যার্পণের জন্য বাংলাদেশ সরকার যে অনুরোধ করেছে, তাতে ভারত সরকারের সাড়া দেওয়ার সম্ভাবনা খুবই কম। কারণ এই জাতীয় সমস্যা সমাধান করার জন্য প্রয়োজনীয় আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন করেনি ঢাকা।
ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণায়ের একটি সূত্র বলেছে, বাংলাদেশের কূটনৈতিক নোটের সমস্ত দিক খতিয়ে দেখে জবাব দিতে কয়েক মাসও লেগে যেতে পারে। আর সে কারণেই হাসিনার ভারতে থাকার মেয়াদ বাড়ানো হয়েছে।
সূত্রটি আরও জানিয়েছে, দিল্লির ‘ফরেন রিজিয়নাল রেজিস্ট্রেশন অফিসের’ (এফআরআরও) মাধ্যমে আবেদন করিয়ে শেখ হাসিনার ভারতে থাকার কাগজ বৈধ করে নেওয়া হয়েছে। কারণ ভারতে কোনো উদ্বাস্তু আইন নেই। তাই এফআরআরও–র মাধ্যমে বাংলাদেশের নাগরিক শেখ হাসিনাকে ভারতে বসবাসের বৈধতা দেওয়া হয়েছে। তবে কত দিনের জন্য এই ছাড়পত্র দেওয়া হয়েছে, তা এখনো স্পষ্ট নয়।
গত ৫ আগস্ট থেকে ভারতে বাস করছেন ৭৭ বছর বয়সী শেখ হাসিনা। তাঁর অবস্থান সুনির্দিষ্টভাবে জানা না গেলেও দিল্লির একটি নিরাপদ স্থানে তিনি আছেন বলে ভারতীয় গণমাধ্যমগুলো জানিয়েছে।