এনামুল কবীর :: সিলেটের গোলাপগঞ্জ- বিয়ানীবাজার উপজেলায় অবস্থিত আছিরগঞ্জে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের গেইটে উপজেলার নাম সংযোজন- বিয়োজন নিয়ে চরম অষন্তোষ বিরাজ করছে। অবস্থা এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে যে, যখন-তখন যেকোনো অপ্রীতিকর ঘটনার আশঙ্কা করছেন সচেতন মহল।
এ বিতর্ক শুরু হয়েছে আছিরগঞ্জ ও উচ্চ বিদ্যালয় ও কলেজের নবনির্মিত গেইটে উপজেলার নাম 'বিয়ানীবাজার' সংযোজন নিয়ে।
জানা গেছে, আছিরগঞ্জ উচ্চ বিদ্যালয় ও কলেজের পুরানো জীর্ন-শীর্ন গেইট ভেঙে একটি নতুন গেইট নির্মাণ করা হয় প্রবাসীদের উদ্যোগে।
সম্পূর্ন নির্মাণকাজ তদারকি করতে এলাকাবাসীদের মধ্য থেকে কয়েকজনকে নিয়ে একটি প্রজেক্ট কমিটি গঠন করা হয়। এই প্রজেক্ট কমিটির তত্ত্বাবধানে গেইটের নির্মাণ কাজও শেষ হয়।
আছিরগঞ্জ উচ্চ বিদ্যালয় ও কলেজের অবস্থান গোলাপগঞ্জ-বিয়ানীবাজার, এ দুই উপজেলায় হলেও এর রেজিস্ট্রেশনসহ যাবতীয় প্রশাসনিক কাজ চলছে বিয়ানীবাজার উপজেলা থেকে।
এ অবস্থায় নতুন গেইট নির্মাণ শেষে উপজেলার নাম ছাড়া কেবল 'আছিরগঞ্জ উচ্চ বিদ্যালয় ও কলেজ, সিলেট' লেখা হলেও পরে বিয়ানীবাজার উপজেলার কয়েকজন অধিবাসির দাবির মুখে এবং বিয়ানীবাজার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার পরামর্শে প্রজেক্ট কমিটি উপজেলার নাম হিসাবে 'বিয়ানীবাজার' শব্দটি সংযুক্ত করে।
এর পরপরই উত্তপ্ত হয়ে উঠে আছিরগঞ্জ এলাকা। বিশেষ করে, গোলাপগঞ্জ উপজেলার অধিবাসীরা প্রতিবাদমুখর হয়ে উঠেন। কয়েকটি হোয়াটস অ্যাপ গ্রুপ এবং বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও উত্তাপ ছড়ায়। এমনি কি, বিষয়টি নিয়ে পরোক্ষে হুমকি ধমকিও চলতে থাকে।
এরপর কে বা কারা রাতের আঁধারে গেইট থেকে 'বিয়ানীবাজার' শব্দটি অপসারণ করে।
এর প্রতিবাদে ফুঁসে উঠেন বিয়ানীবাজারের ৮নং তিলপাড়া ইউনিয়নের দেবারাই ও হলিমপুর গ্রামবাসি। ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে বিয়ানীবাজার থানা পুলিশও।
প্রতিবাদ হিসাবে বিয়ানীবাজার এলাকার বিভিন্ন গ্রামের অধিবাসী,স্কুলটির সাবেক শিক্ষার্থী ও জনপ্রতিনিধির উদ্যোগে অনুষ্টিত হয় মানববন্ধন। স্কুল গেইটে অনুষ্টিত এ কর্মসূচি থেকে রাতের আঁধারে স্কুল গেইট থেকে বিয়ানীবাজার শব্দটি অপসারণ করায় তীব্র ক্ষোভ, নিন্দা ও প্রতিবাদ জানানো হয়। এরসঙ্গে জড়িতদের গ্রেফতারেরও দাবি উঠে।
এ পর্যায়ে এলাকার যুক্তরাজ্য ও ফ্রান্স প্রবাসীদের উদ্যোগে গত ৭ নভেম্বর বিষয়টি নিয়ে আলাপ-আলোচনার জন্য স্কুলে একটি সভা অনুষ্টিত হয়।
সভায় প্রবাসীদের পরামর্শ তুলে ধরেন উত্তর বাদেপাশা ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান ও যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী শাহাব উদ্দিন।
তারা তাদের পরামর্শে আছিরগঞ্জের কোনো প্রতিষ্টানের গেইটে উপজেলার নাম না রাখার বিষয়ে নিজেদের অবস্থানের কথা জানালে এক পর্যায়ে এই সিদ্ধান্ত সর্বসম্মতভাবে গ্রহন করা হয়।
তবে আছিরগঞ্জের অপর বৃহৎ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান আছিরগঞ্জ আলিম মাদরাসার গেইট থেকে গোলাপগঞ্জ শব্দটি অপসারণে ম্যানেজিং কমিটিসহ সংশ্লিষ্ট দায়িত্বশীলদের সাথে কথা বলে দেখার আশ্বাস দেয়া হয়। সিদ্ধান্ত হয়, দিশারী প্রি-ক্যাডেট স্কুলের নামের সাথেও কোনো উপজেলার নাম সংযুক্ত করা হবেনা। ‘গোলাপগঞ্জ' লেখাটিও বাদ দেয়ার সিদ্ধান্ত হয়।
সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, এর দু’একদিন পরই ‘আছিরগঞ্জ উচ্চ বিদ্যালয় ও কলেজ আছিরগঞ্জ সিলেট' লেখা হয় এবং দিশারী প্রিক্যাডেট স্কুলের নাম লেখা অংশ থেকে ‘গোলাপগঞ্জ’ শব্দটিও বাদ দেয়া হয়।
কিন্তু আছিরগঞ্জ আলিম মাদরাসার গেইটে ‘গোলাপগঞ্জ’ থেকেই যায়। গত প্রায় একমাস ধরে গোটা এলাকায় এ নিয়ে চলছে তুমুল আলোচনা সমালোচনা। সমালোচকদের কঠোর বক্তব্য, যেহেতু এলাকার সব প্রতিষ্ঠান থেকে উপজেলার নাম অপসারণের সিদ্ধান্ত হয়েছে এলাকাবাসীর ঐক্য ধরে রাখার স্বার্থে- তাহলে কেন মাদরাসায় এখনো গোলাপগঞ্জ বহাল থাকবে?
বিষয়টি নিয়ে মাদরাসার ম্যানেজিং কমিটির সভায় আলোচনার প্রতিশ্রুতি বা এলাকাবাসী ও প্রবাসীদের প্রস্তাব বা পরামর্শ তুলে ধরার প্রতিশ্রুতি যারা দিয়েছিলেন, গত একমাসে একাধিক সভা হলেও বিষয়টি নিয়ে কোনো আলোচনাই হয়নি বলে জানিয়েছেন ম্যানেজিং কমিটির এক সদস্য। এতে দিনে দিনে ক্ষোভ আরও বৃদ্ধি পাচ্ছে বলেও জানিয়েছে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক সূত্র।
ক্ষুব্ধ পক্ষ বিষয়টি নিয়ে প্রবাসীদের সঙ্গে আলোচনা করলেও তারা ইতিপূর্বে কয়েক ধাপে সময় নিয়েছেন বটে, তবে এখনো বিষয়টির কোনো সমাধান দিতে পারেন নি।
এ অবস্থায় প্রায় সবমহলে চরম অসন্তোষ বিরাজ করছে বলে জানিয়েছেন কয়েকজন এলাকাবাসী। নিরপেক্ষদের মতে, এক প্রতিষ্ঠান থেকে ‘বিয়ানীবাজার' শব্দটি অপসারণ করতে গিয়ে অন্য ২/৩টি প্রতিষ্ঠান থেকে ‘গোলাপগঞ্জ’ শব্দটি অপসারণ কোনো বাস্তবায়নযোগ্য সিদ্ধান্ত নয়। এলাকার সর্বস্থরের মানুষ এমন সিদ্ধান্ত মেনে নিবেন বলেও তারা মনে করছেন না।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে এ ব্যাপারে কয়েকজন এলকাবাসী জানিয়েছেন, এ কাজ করতে গেলে সমস্যার সমাধানতো হবেইনা, বরং আরও নতুন নতুন অসংখ্য সমস্যা বা জটিলতা তৈরি হবে।
বিষয়টি নিয়ে আলাপকালে দেবারাই গ্রামের ক্রীড়ানুরাগী এবাদুল হক বলেন, ৭ নভেম্বর স্কুলে অনুষ্ঠিত সভায় প্রবাসীদের পরামর্শে যে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়েছে তা শতভাগ বাস্তবায়ন না হলে সমস্যা বাড়তেই থাকবে। তরুণ সমাজের অসন্তোষ দিন দিন তীব্র থেকে তীব্রতর হচ্ছে।
তিনিসহ একই গ্রামের বাসিন্দা এবং দিশারী প্রি-ক্যাডেট স্কুল ও আছিরগঞ্জ আলিম মাদরাসার ম্যানেজিং কমিটির সদস্য জয়নাল আবেদীন ও রাজনীতিবিদ আব্দুল খালিক সমস্যা থেকে উত্তরণে দ্রুত প্রবাসীদের হস্তক্ষেপ এবং ৭ নভেম্বরের সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের আহ্বান জানিয়েছেন।
এদিকে, বিষয়টি নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে প্রায়ই বিভিন্ন প্রবাসী এবং দেশে অবস্থানরতদেরও কেউ কেউ পক্ষে বা বিপক্ষে স্ট্যাটাস দিয়ে নিজেদের অবস্থান জানান দিচ্ছেন। কেউ কেউ ৭ নভেম্বর গৃহিত সিদ্ধান্ত দ্রুত বাস্তবায়ন দেখতে চাইছেন।