সিলেটে ভয়ংকর হয়ে উঠেছে আব্দুল্লাহ থেকে বিউটি বনে যাওয়া ময়মনসিংহের এক পুরুষ। সে আব্দুল্লাহ থেকে বিউটি হয়ে সিলেটে বেপরোয়া হিজড়া নামধারী চাঁদাবাজি করে চলেছে। তার এই চক্রের সদস্যরা দিন দিন ভয়ংকর রূপ ধারণ করছেন। এদের বিরুদ্ধে কোন আইনি ব্যবস্থা না নেওয়ায় প্রকাশ্যে অপরাধ করছে।
সিলেট নগরীর কদমতলী বালুর মাঠে গড়ে তোলেছে ভয়ংকর এক পতিতা পল্লী। যেখানে দৌলতদিয়া যৌনপল্লিকেও হার মানাবে। সারাদিন চলে জুয়া আর সন্ধ্যা হলেই শুরু হয় যৌনতার মতো ভয়াবহ অপরাধ। এই সকল অপরাধ নিয়ন্ত্রণ করছেন বিউটি ডাক নাম কালী হিজড়া। বালুর মাঠের সকল অপরাধের মূলহোতা কালী হিজড়া। তাকে কালী হিজড়া নামে সবাই চিনে। সম্প্রতি সে নিজের লিঙ্গ কর্তন করে আব্দুল্লাহ থেকে বিউটি হয়েছে। তার বিরুদ্ধে কেউ প্রতিবাদ করলেই শুরু হয় নির্যাতন। তার চেহরা দেখতে যেমন তার চেয়ে বেশি ভয়ংকর সে। তার গ্রামের বাড়িতে স্ত্রী ও একাধীক সন্তান রয়েছে। সিলেটের সকল হিজড়াদের দিয়ে শুরু করেছে যৌনকাজ ও চাঁদাবাজি। কেউ তার কথার অবাধ্য হলেই শুরু হয় অমানবিক নির্যাতন। সিলেট জেলার প্রতিটি থানায় তার হিজড়া বাহিনী রয়েছে। এদের মধ্যে বেশি হিজড়াদের লিঙ্গ কর্তন করিয়েছে। এরা যাতে সহজে পুরুষের সামনে উলঙ্গ হয়ে নিজেকে হিজড়া পরিচয় দিতে পারে।
এই আব্দুল্লাহ থেকে বিউটির সাথে রয়েছে একটি ভয়ংকর অপরাধী চক্র। এই চক্রের আস্তানা নগরীর কদমতলী বালুর মাঠে দ্রুত অভিযান দিয়ে এদের উচ্ছেদ করা সময়ের দাবি বলে মনে করছেন সচেতন মহল। এরাই পুরুষাঙ্গ কর্তনের মাধ্যমে হিজড়া তৈরির সাথে জড়িতরা এখনো ধরা-ছোঁয়ার বাইরে। আইনের চোখ ফাঁকি দিয়ে নিজেরা যেমন অসামাজিক কর্মকাণ্ড চালিয়ে যাচ্ছে, তেমনি স্স্থু স্বাভাবিক পুরুষকে প্ররোচনার মাধ্যমে পুরুষাঙ্গ কর্তনের পর নামিয়ে দিচ্ছে হিজড়াবৃত্তিতে। সম্প্রতি সিলেট মহানগর পুলিশের দক্ষিন সুরমা ও কোতোয়ালি থানায় এমন অভিযোগে দুটি সাধারণ ডায়রি (জিডি) দায়ের করেছেন দুই ভুক্তভোগী। তারা হলেন নগরীর সুরমা মার্কেট এলাকার জলফু মিয়ার সন্তান সূচনা ইসলাম ও এয়ারপোর্ট থানার বাদামবাগিচা এলাকার বাসিন্দা পাপু।
সূচনা ইসলাম ও পাপু তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ করায় তারা এই দুইজনকে বাসা থেকে ধরে নিয়ে গেছে। এমনকি তাদেরকে মারধর করে কদমতলী বালুর মাঠে আটকে রেখেছে। ফলে আর কোন হিজড়া নেই তাদের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করবে। এখন তাদের একক রাজত্ব গড়ে উঠেছে। রানা ভূইয়া নামের তৃতীয় লিঙ্গের আরেক লোক তাদের এই অপরাধের প্রতিবাদ করে তিনি এখন তাদের নির্যাতনে আহত হয়ে বাসায় চিকিৎসা নিচ্ছেন। তাদের ভয়ে তিনি কোন হাসপাতালে ভর্তি হতে পারছেন না। তারা তাকে নির্যাতন করে তার মোবাইল টাকা ও মূল্যভান জিনিসপত্র ছিনিয়ে নিয়েছেন।
জানা গেছে, সূচনা ইসলাম গত ৩১ অক্টোবর সিলেট মহানগর পুলিশের কোতোয়ালি থানায় দায়েরকৃত সাধারণ ডায়রিতে উল্লেখ করেন, দক্ষিন সুরমার কদমতলী বালুরঘাট এলাকার জামিলা হিজড়া, কালি হিজড়া, আব্দুস সামাদ রাজ, লিপি ও কারিশমা হিজড়া অজ্ঞাতনামা আরও ৪/৫ জনকে নিয়ে সহজ সরল ছেলেদের ফুঁসলিয়ে এবং কৌশলে নানা ভীতি প্রদর্শন করে পুরুষাঙ্গ কর্তনের মাধ্যমে হিজড়া হিসাবে জীবন-যাপনে বাধ্য করছে।
পুরুষাঙ্গ কর্তনের পর তাদের দিয়ে মাদক সেবন, মাদক পরিবহন, মাদক ব্যবসা ও দেহ ব্যবসার মতো জঘন্য কাজে লিপ্ত করে নিজেরা হাজার হাজার টাকা কামাই করছে বলে অনেক হিজড়ার কাছ থেকে তিনি জেনেছেন।
অভিযুক্তরা হিজড়াদের দিয়ে পাড়া-মহল্লা থেকে শুরু করে রাজপথ বা ফুটপাতের দোকান থেকে শুরু করে বাসা-বাড়িতেও চাঁদাবাজীতে নিয়োজিত করছে। এমনকি রাস্তায় বিয়ের গাড়ি থামিয়ে বা বিয়েবাড়ি, কমিউনিটি সেন্টারে হানা দিয়ে বর-কনেকে অপদস্ত করে চাঁদা আদায় করছে তারা।
সূচনা সুরমা মার্কেটস্ত দাওয়াতুল কোরআন তৃতীয় লিঙ্গের মাদ্রাসার একজন শিক্ষার্থী হিসাবে বিপথগামী হিজড়াদের সৎপথে ফিরিয়ে স্বাভাবিক জীবনে পুনর্বাসনের লক্ষ্যে কাজ করছেন জানিয়ে জিডিতে উল্লেখ করেছেন, এসব কাজ করায় ক্ষিপ্ত হয়ে গত ৩১ অক্টোবর রাত সাড়ে ৯টার দিকে রিকাবিবাজার থেকে কিশোর গ্যাং দিয়ে তাকে অপহরনের চেষ্টা করে। স্থানীয়দের সহায়তায় তিনি রক্ষা পেলেও জামিলা, কালি, রাজ, লিপি ও কারিশমা হিজড়া অজ্ঞাতনামাদের নিয়ে যখন তখন তার উপর হামলা বা তাকে অপহরন করতে পারে বলে তিনি শঙ্কা প্রকাশ করে আইনী সহযোগিতা চেয়েছেন। এদিকে দক্ষিণ সুরমা থানায় এরকম একটা অভিযোগ দায়ের করেছেন নগরীর বাদামবাগিচা এলাকার পাপু।
তিনি তার অভিযোগে উল্লেখ করেছেন, কদমতলি বালুরমাঠ এলাকার কালী হিজড়া, লিপি হিজড়া, জমিলা হিজড়া, ইমা হিজড়া (৩০), সানজিদা হিজড়া অজ্ঞাতনামা আরও কয়েকজন হিজড়া ৩ বছর আগে তাকে ফুসলিয়ে এবং নানা প্রলোভনের ফাঁদে ফেলে বিভ্রান্ত করে তার পুরুষাঙ্গ কর্তন করতে বাধ্য করে।
এরপর সাদা কাগজে জোরপূর্বক তার স্বাক্ষর নিয়ে তাকে দিয়ে নানা অপকর্মের মাধ্যমে টাকা রোজগার করে সেগুলো নিজেরাই আত্মসাৎ করতে থাকে। কোনো প্রতিবাদ করলে তার উপর নেমে আসে নির্য্যাতনের খড়গ।
সম্প্রতি তারা তাকে মারধোর ও তার কদমতলির বাসায় লুটপাট করে হত্যার হুমকি দিয়ে তাকে বাসা থেকে তাড়িয়ে দেয় ও জিনিসপত্র লুটপাট করে নিয়ে যায়। তিনি তার নিরাপত্তা নিশ্চিতে এবং তাদের অপকর্ম প্রতিরোধে আইনী ব্যবস্থা নেয়ার অনুরোধ করেছেন।
তার অভিযোগের ব্যাপারে দক্ষিন সুরমা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আবুল হোসেন বলেন, এরকম অভিযোগের জন্য ওসমানী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে একটা মেডিক্যাল বোর্ড আছে। তাদের সার্টিফিকেট নিয়ে অভিযোগ করে থাকলে আমরা বিষয়টা দেখবো। তবে অভিযোগ পাওয়ার বিষয়টি তিনি তাৎক্ষনিক নিশ্চিত করতে পারেন নি।
আর কোতোয়ালি থানায় দায়েরকৃত সূচনা ইসলামের অভিযোগ প্রসঙ্গে কোতোয়ালি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জিয়াউল হক বলেন, বিষয়টি খুবই সেনসিটিভ। গভীরভাবে খতিয়ে দেখা হচ্ছে। তদন্ত প্রায় শেষের দিকে।