বুধবার, ১৯ ফেব্রুয়ারী ২০২৫, ০৮:২৪ পূর্বাহ্ন

মনের টানে লোকগানে শামীম

  • প্রকাশের সময় : ২৬/১১/২০২৪ ০৭:৫৭:৩৪
এই শীতে ভাঙন আতঙ্কে দিন কাটছে তাদের
Share
46

সজল ঘোষ :: গানের মানুষ, প্রাণের মানুষ মো. শামীম আহমদ। লোকগান গাওয়া নিয়েই তার জীবনের সমস্ত চলাচল। দেহ-মন উজাড় করে লোকগানকে সঙ্গী করে ছুটে চলছেন এপ্রান্ত থেকে ওপ্রান্ত। তার মিষ্টি মধুর কণ্ঠের জাদুতে মাতিয়ে রাখছেন দেশ-বিদেশের অগণিত শ্রোতাদের মনপ্রাণ। শ্রোতাদের আনন্দ দিতে মায়াময় সুরের অমিয় ধারার সাগরে সেই ছোট বেলা থেকেই তার বসবাস। আবহমান বাংলার লোকগানের কথা, সুর, সঙ্গীতের খেয়ায় জীবনের বেশিরভাগ সময় কাটিয়ে দিয়েছেন লোকগানের ফেরিওয়ালা শামীম। স্নিগ্ধ সুরের মুগ্ধতায় থাকা সঙ্গীতশিল্পী শামীম আহমদের অদম্য ইচ্ছে আমৃত্যু গান গাওয়া। লোকগানকে ভালোবেসে গান নিয়ে সামনে এগিয়ে যাওয়া। সঙ্গীতপ্রেমী মানুষের ভালোবাসায় সিক্ত হওয়া। লোকগানের সংরক্ষণ ও প্রচার কাজে নিজেকে রাঙিয়ে দেয়া।


সিলেট নগরের এই গুণী সঙ্গীত শিল্পী মাত্র ১০ বছর বয়সে সঙ্গীত জগতে প্রবেশ করেন। স্কুলে পড়াশোনার সময় বিভিন্ন অনুষ্ঠানে গান গাইতে থাকা শামীম সঙ্গীতের হাতেখড়ি নেন শ্রদ্ধেয় প্রয়াত ওস্তাদ হোসেইন আলী ও ওস্তাদ আলী আকবর-এর কাছে। গান গাওয়ার পাশাপাশি তখন বিভিন্ন প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়ে অর্জন করেন অনেক পুরস্কার। মুগ্ধতায় ভাসান সকল মানুষকে। কণ্ঠশিল্পী শামীমের বড় ভাই ও পরিবারের সকল সদস্যের সহযোগিতা, পরামর্শে তিনি গান গাওয়ার ভুবনে এখনো এগিয়ে চলেছেন। 


শামীম জানান- লোকগান গাইতে তার দারুণ ভালো লাগে, লোকগান গাইলে মনপ্রাণ ভালো হয়, সজীব হয়। এজন্য কণ্ঠশিল্পী শামীম লোকগান গাইতে কোনো দ্বিধাবোধ করেন না। কোনো অনুষ্ঠানে গান গাওয়ার আমন্ত্রণ পেলেই আনন্দচিত্তে ছুটে যান সেখানে। অর্থ কিংবা পুরস্কারের আশা না করেই শ্রোতাদের ভালোবাসা পাওয়ার লক্ষ্যে কণ্ঠে সুরের মূর্চ্ছনা তুলেন।


গর্বিত পিতা মো. কাছিম আলী ও মমতাময়ী মাতা মাহবুবা খানমের ঘর আলো করে সবার প্রিয় কণ্ঠশিল্পী শামীম আহমদ সিলেট জেলার গোয়াইনঘাট উপজেলার গোয়াইন গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। কণ্ঠশিল্পী শামীম ৬ ভাই ৩ বোনের মধ্যে ৮ম। মনোবিজ্ঞান বিষয় নিয়ে মাস্টার্স ডিগ্রি অর্জন করা শামীম বর্তমানে সঙ্গীত সাধনার পাশাপাশি সিলেট গ্যাস ফিল্ডস লিমিটেডে কর্মরত আছেন। 


এছাড়া তিনি সিলেট নগরের খ্যাতনামা নাটকের সংগঠন ‘কথাকলি’-তে কাজ করছেন বহু বছর ধরে। ‘লাল দেওয়ান’, ‘মলুয়া’, ‘দূর্ব্বিন শাহ’, প্রভৃতি নাটকেও কাজ করেছেন তিনি। শহর-বন্দর, গ্রাম-গঞ্জ, সরকারি-বেসরকারি নানা অনুষ্ঠানে গান গাইতে ছুটে চলা শামীম গানের সুরারোপও করে থাকেন। সঙ্গীত পরিচালনাও করেছেন তিনি। ৩টি অ্যালবামে গান গেয়েছেন শামীম।  ‘রঙ্গিলা নাইয়া’ ১-২-৩। এই শিল্পীর জনপ্রিয় গান হলো- ‘ঝাঁকে উড়ে আকাশ জুড়ে, জালালী কইতর’, ‘ও রঙ্গিলা নাইয়া’, ‘লাগাইয়া পিরিতের ডুরি’, ‘সাধ করে পরেছি গলে শ্যাম কলঙ্কের মালা’, ‘বন্ধে মায়া লাগাইছে’ ও ‘নিদয়া নিঠুর বন্ধুরে,’।


গানের মানুষ শামীমের মায়াবী কণ্ঠে শিঘ্রই ১০টি গান শ্রোতাদের জন্য আসছে। এসব গানের কাজ চলছে পুরোদমে। বাংলাদেশ বেতার, বাংলাদেশ টেলিভিশনের তালিকাভুক্ত শিল্পী শামীম ১৯৮১ সালে সর্বপ্রথম স্টেজে গান গাইতে উঠেন। এখন দেশ-বিদেশসহ বাংলাদেশের সকল টিভি চ্যানেলে গান গাইছেন আপন মনে। তিনি ভারতের বিভিন্ন স্থানেও গান গেয়ে শ্রোতাদের মুগ্ধ করেছেন। তার মধ্যে কলকাতায় ‘নির্মলেন্দু লোক উৎসব’, ‘ইন্দো বাংলা সিলেট উৎসব’, ‘দুর্গাপূজা উৎসব’ উল্লেখযোগ্য। তিনি ভারতের শিলচর, বর্ধমান, শিলং, গৌহাটিতেও গান গেয়ে সকলের হৃদয়পাড়া জয় করেছেন। স্বপ্নবাজ লোকসঙ্গীত শিল্পী মো: শামীম আহমদ বলেন, ‘আমাদের প্রিয় বাংলাদেশে লোককবি, মরমি কবি, বাউল সাধকসহ গুণী সঙ্গীত ব্যক্তিত্বের কোনো অভাব নেই। তারা অনেক অনেক সৃজনশীল কাজ করেছেন এবং এখনো ভালো কাজের চর্চা চলছে। তাদের প্রতি শ্রদ্ধা, সম্মান ও ভালোবাসা জানাই অবিরাম।’ নতুন প্রজন্মের সঙ্গীত শিল্পীদের প্রতি শিল্পী শামীম পরামর্শ জানিয়ে বলেন, ‘সবার আগে গানকে মন-প্রাণ দিয়ে ভালোবাসতে হবে। সঙ্গীত সাধনার বিষয়। হৃদয় দিয়ে সঙ্গীত সাধনা করলে সফলতা পাওয়া কঠিন কিছু নয়। মনে রাখা দরকার- সঙ্গীত গুরুমুখী বিদ্যা। তাই যত্নবান হওয়া জরুরি।’ ‘গানকে আপন করে নিয়ে ব্যাপক পরিশ্রম করা প্রয়োজন।’


শিল্পী শামীমের গান নিয়ে ভবিষ্যৎ স্বপ্ন ও পরিকল্পনা হলো- প্রায় ৫০০ এর উপরে মরমী সাধকদের গানের ভাণ্ডারের সংরক্ষণ ও প্রচার কাজে নিজেকে সম্পৃক্ত করা। হারিয়ে যাওয়া লোকগানকে নতুন করে  শ্রোতাদের সামনে উপস্থাপন করা’। এই মহতী কাজ করতে পারলে তার আত্মা তৃপ্ত হবে বলে তিনি জানান। স্ত্রী ও ৩ জন ছেলে সন্তানকে নিয়ে তার সংসার জীবন সুখেই চলছে। লোকগানের আলো ছড়ানো কণ্ঠশিল্পী শামীম বলেন, ‘আমি এখনো একজন সফল স্বার্থক সঙ্গীত শিল্পী হতে পারিনি। আমি এখনো গান গাওয়া শিখছি। পরিপূর্ণ সফলতা অনেক বড় একটা বিষয়। সফল হতে হলে আরও অভিজ্ঞতা, চর্চা ও শেখার প্রয়োজন।’ ‘সেই পথেই আমি অবিরত হাঁটছি। এভাবেই গানকে সঙ্গে নিয়ে সুরের মায়াজালে অনন্তকাল থাকবো।’


জননন্দিত লোকসঙ্গীত শিল্পী মো: শামীম আহমদের প্রিয় লেখক হুমায়ুন আহমদ, প্রিয় গান লোকগান, প্রিয় ঋতু বসন্ত। প্রিয় সঙ্গীত শিল্পীর তালিকায় রয়েছেন রথীন্দ্র নাথ রায় ও কিরণ চন্দ্র রায়। তবে সকল গুণী সঙ্গীত শিল্পীদের গান শোনেন তিনি সব প্রহরেই। 

 


সিলেট প্রতিদিন / ইকে


Local Ad Space
কমেন্ট বক্স
© All rights reserved © সিলেট প্রতিদিন ২৪
পোর্টাল বাস্তবায়নে : বিডি আইটি ফ্যাক্টরি