হত্যাচষ্টোর এক মামলায় কিছুদিন কারাগারে থেকে মুক্তি পেলেও এখন আরেকটি মামলায় জড়িয়েছেন সাবেক মন্ত্রী এম এ মান্নান।নতুন মামলাটিতে তার এলাকায় বিএনপি কার্যালয় ভাংচুর ও চুরির অভিযোগ আনা হয়েছে।
এই মামলার খবরে বিস্মিত হওয়ার কথা জানিয়েছেন আওয়ামী লীগের সাবেক সংসদ সদস্য মান্নান।
বিএনপির এক নেতার করা এই মামলায় যাকে ১ নম্বর সাক্ষী করা হয়েছে, নিজের নাম দেখে অবাক হয়েছেন তিনিও।
পুলিশ জানিয়েছে, মামলা গ্রহণ করা হলেও আসলে কী ঘটেছে, তা তদন্তেই বেরিয়ে আসবে।
শেখ হাসিনার ২০১৮-২৩ সরকারের পরিকল্পনামন্ত্রী মান্নান সুনামগঞ্জ-৩ (জগন্নাথপুর-শান্তিগঞ্জ) আসনে আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য ছিলেন।
ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর দলটির নেতা-কর্মীরা পালিয়ে বেড়ালেও মান্নান নিজের এলাকা সুনামগঞ্জেই ছিলেন।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময় সুনামগঞ্জ সদরে বিক্ষোভকারী একজনের ওপর হামলার একটি মামলায় গত ১৯ সেপ্টেম্বর গ্রেফতার করা হয় মান্নানকে।
গত ১০ অক্টোবর ওই মামলায় জামিনে মুক্তি পাওয়ার পর ঢাকায় রয়েছেন তিনি। এর মধ্যেই গত ২০ নভেম্বর তার বিরুদ্ধে নতুন মামলাটি হয়েছে।
কে করেছেন মামলা, কী অভিযোগে
জগন্নাথপুরের মিরপুর ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি মো. আব্দুন নুর বাদী হয়ে জগন্নাথপুর থানায় মামলাটি করেন। তিনি মিরপুর গ্রামের তাহির উল্লাহর ছেলে।
গত ১৭ নভেম্বর রাতে মিরপুর ইউনিয়ন বিএনপি কার্যালয় পুড়িয়ে দেওয়ার অভিযোগে মামলাটি করেন তিনি। এজাহারে তিনি ওই কার্যালয় থেকে ৫০ হাজার টাকার মালামাল চুরির অভিযোগও করেন।
নুরের অভিযোগ, ১৭ নভেম্বর রাত ৯টার দিকে সাবেক পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নানের প্ররোচনায় আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা বিএনপি কার্যালয় ভাংচুর করে ও আগুন লাগিয়ে দেয়।
মামলায় জগন্নাথপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক রেজাউল করিম রিজুসহ আরও ৪৯ জনের নাম আসামির তালিকায় রাখা হয়েছে।
জগন্নাথপুর থানার ওসি মোহাম্মদ মোখলেছুর রহমান আকন্দ বলেন, “বাদীর অভিযোগের ভিত্তিতে পেনাল কোডের ১৪৩, ৪৩৬, ৪৪৮, ৪২৭, ৪৩৬, ৩৮০ ও ১১৪ ধারায় মামলা নথিভূক্ত করা হয়েছে। আসামিদের গ্রেফতারে অভিযান অব্যাহত রয়েছে।”
এদিকে মামলার ৩৯ নম্বর আসামি মিরপুর গ্রামের আব্দুর রহিম খানের ছেলে মো. আব্দুশ শাহীদ সাদেক বছর খানেক ধরে যুক্তরাজ্যে রয়েছেন বলে জানান একই গ্রামের বাসিন্দা সাদিকুর রহমান ।
প্রধান সাক্ষী অবাক
মামলার এজাহারে প্রথম সাক্ষী হিসাবে যার নাম রয়েছে, সেই শফিক উদ্দিন এবিষয়ে কিছু না জানার কথা জানিয়েছেন।
তিনি ফেইসবুকে লিখেছেন, “আমাকে না জানিয়ে উক্ত মামলায় আমাকে সাক্ষী করায় আমি রীতিমতো অবাক হয়েছি। এতে আমাকে ভুল বুঝে বিভ্রান্ত না হওয়ার জন্য সকলের প্রতি বিনীত অনুরোধ করছি।”
সফিক বলেন, “আমি মিরপুর বাজার ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক। বিবেকের তাড়নায় আমি ফেইসবুকে স্ট্যাটাস দিয়েছি।
“এই ঘটনা সম্পর্কে আমি কিছুই জানি না। তাহলে আমি কীভাবে মামলার সাক্ষী হব? প্রয়োজনে আদালতে আমার অবস্থান ব্যাখ্যা করব।”
সাক্ষীর এমন বক্তব্যের পর মামলার বাদী আব্দুন নূরের সঙ্গে কথা বলতে একাধিকবার তার মোবাইল নম্বরে কল করা হলেও তিনি ফোন ধরেননি।
সাক্ষীর অস্বীকৃতি ও একজন আসামির দেশের বাইরে অবস্থানের বিষয়ে জানতে চাইলে ওসি মোখলেছুর রহমান আকন্দ বলেন, “বাদীর লিখিত অভিযোগের প্রেক্ষিতে মামলা রুজু করে তদন্তকারী কর্মকর্তা নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। আমরা তদন্ত করে দেখব, আসল ঘটনা কী? তদন্তের মাধ্যমেই প্রকৃত অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
মান্নান বিস্মিত
সরকারি চাকরি থেকে অবসর নিয়ে দুই দশক আগে রাজনীতিতে আসা মান্নান তার বিরুদ্ধে এমন মামলায় বিস্ময় প্রকাশ করেছেন।
তিনি গণমাধ্যমকে বলেন, “আমি বেশ কিছু দিন থেকে ঢাকায় অবস্থান করছি। শারীরিক অসুস্থতার জন্য কিছুদিন হাসপাতালেও ভর্তি ছিলাম।”
মিরপুরে বিএনপি কার্যালয়ে অগ্নিসংযোগের বিষয়ে কিছুই জানেন না দাবি করে মান্নান বলেন, “আমাকে আসামি করা হয়েছে শুনে আমি বিস্মিত, হতবাক।
“আমি চারবার এমপি, দুইবার মন্ত্রী ছিলাম। কেউ বলতে পারবে না যে কারও বিরুদ্ধে মামলা দায়ের বা কারও ক্ষতি করার চেষ্টা করেছি। এখন আমার প্ররোচনায় বিএনপি অফিসে আগুন লাগানো হয়েছে, এটা কি বিশ্বাসযোগ্য?”
আইনি পথেই মামলা মোকাবেলা করবেন জানিয়ে তিনি বলেন, “আমি পালিয়ে যাইনি, পালাবও না। যেহেতু কোনও অপরাধে সংশ্লিষ্ট নই, তাই আইনের মাধ্যমেই যেকোনও পরিস্থিতি মোকাবেলা করতে আমি প্রস্তুত।”
সরকার বদলের পর মামলা দায়েরের এই চর্চা নিয়ে মান্নান বলেন, “এসব নোংরা মানসিকতা থেকে সব পক্ষকেই বের হয়ে আসতে হবে। প্রতিহিংসার রাজনীতি দেশের অনেক ক্ষতি করেছে। মামলা, হামলা এসব থেকে বের হয়ে দেশে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা করতে হবে।”