নিত্যপণ্যের দাম প্রতিনিয়ত বেড়েই চলেছে। শুল্ক কমানোর পরও চাল, তেল, আলু, পিয়াজ ও চিনির দাম আকাশচুম্বী। নাগালের বাইরে সবজির দামও। এতে করে বিপাকে পড়েছেন সাধারণ মানুষ। এমন প্রেক্ষাপটে কিছুটা কম টাকায় পণ্য কিনতে নিম্নবিত্তরা তো বটেই, সংকোচ নিয়ে টিসিবি’র লাইনে দাঁড়াচ্ছেন মধ্যবিত্তরাও। এ ছাড়া লজ্জায় লাইনে দাঁড়াতে না পেরে কেউ কেউ টাকার বিনিময়ে নিম্নবিত্তদের মাধ্যমে পণ্য কিনছেন। বৃহস্পতিবার রাজধানীর ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) ভ্রাম্যমাণ ট্রাকসেল ঘুরে এমন চিত্র দেখা যায়।
দুপুর ২টা। আগারগাঁও বাংলাদেশ বেতারের বিপরীতে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকা টিসিবি’র ভ্রাম্যমাণ ট্রাকসেলের সামনে দীর্ঘ লাইন। সেখানে কয়েকজন নারীকে দেখা গেল ভদ্রোচিত পোশাকে। এ সময় কথা হয় মুখ ঢেকে টিসিবি’র লাইনে দাঁড়িয়ে থাকা আসমা খাতুনের সঙ্গে। তার স্বামী বেসরকারি একটি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করেন। নিত্যপণ্যের দাম অসহনীয় পর্যায়ে পৌঁছানোয় বেতন দিয়ে সংসার চালানো কঠিন হয়ে পড়েছে। এজন্য টিসিবি’র লাইনে দাঁড়াতে বাধ্য হয়েছেন আসমা।
তিনি বলেন, প্রতিটি জিনিসের দাম অনেক বেড়েছে। এমনকি ৫০ টাকার নিচে কোনো সবজিও কেনা যাচ্ছে না। এক আঁটি লাল শাকের দাম ২৫ থেকে ৩০ টাকা। বর্তমানে আমার স্বামীর আয় দিয়ে সংসার চালানো কঠিন হয়ে পড়েছে। আর পেরে উঠছি না। এজন্য লজ্জা লাগলেও টিসিবি’র লাইনে দাঁড়াতে হচ্ছে।
পারুল খাতুন। বয়স ৬৫ বছর। বৃদ্ধ এই নারীকে টিসিবি’র লাইনে ঢুকতে দিচ্ছিলেন না ডিলারের সহকারী। কারণ হিসেবে সহকারী জানান, উনি কিছুক্ষণ আগেই একবার পণ্য কিনেছেন। আবারো পণ্য কিনতে লাইনে দাঁড়াচ্ছেন। একজনকে দুইবার করে পণ্য দিতে গেলে অনেকে পণ্য না পেয়ে ফিরে যাবেন। কিছু মানুষ দুইবার করে পণ্য নিয়ে বেশি দামে দোকানে বিক্রি করে দেয় বলেও জানান তিনি।
পারুল খাতুন বলেন, একজন মহিলা লজ্জায় লাইনে দাঁড়াতে পারছিলেন না। আমি লাইনে দাঁড়িয়ে তাকে জিনিস কিনে দিয়েছি। এজন্য উনি আমাকে ২০ টাকা দিয়েছেন। এখন নিজের জন্য পণ্য কিনতে লাইনে দাঁড়াতে গেলে তারা দাঁড়াতে দিচ্ছে না। আমি গরিব মানুষ। কম টাকায় পণ্য কিনতে না পারলে তো না খেয়ে থাকা লাগবে।
টিসিবি’র এই ট্রাকসেলে পণ্য কিনতে লাইনে দাঁড়িয়েছিলেন সরকারি এক চাকরিজীবী। তিনি বলেন, ছোট পদে সরকারি চাকরি করি। জিনিসের দাম বাড়ার কারণে বেতনের টাকা দিয়ে সংসার চালাতে কষ্ট হচ্ছে। এজন্য মাঝে মাঝেই টিসিবি থেকে সাশ্রয়ী মূল্যে পণ্য কিনি। তিনি বলেন, টিসিবি’র লাইনে দাঁড়াতে অনেকে সংকোচ বোধ করে। এজন্য বিভিন্ন এলাকার স্থায়ী কিছু দোকানে সাশ্রয়ী মূল্যে টিসিবি’র পণ্য বিক্রি করা উচিত। বেসরকারি একটি আইটি ফার্মে কর্মরত আশিকুর রহমান বলেন, লাইনে দাঁড়াতে লজ্জা লাগে। টিসিবি থেকে অনেক কম পরিমাণ পণ্য দেয়া হয়। আরেকটু বেশি পণ্য দেয়া হলে ভালো হতো। বারবার লাইনে দাঁড়ানো লাগতো না।
এদিকে দেশে নিত্যপণ্যের দাম বেড়েই চলেছে। পণ্যের দাম কিছুটা কমাতে বা স্থিতিশীল রাখতে বেশ কয়েকটি পণ্যের উপর শুল্ক ছাড় দিয়েছে অন্তর্বর্তী সরকার। কিন্তু শুল্ক ছাড়ের সেই সুবিধা বাজারে পাওয়া যাচ্ছে না। বরং দাম উল্টো বাড়ছে। খাদ্য মূল্যস্ফীতি বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১২.৬৬ শতাংশে। এতে চাপে পড়েছে সাধারণ মানুষ। এমন প্রেক্ষাপটে মানুষকে কিছুটা স্বস্তি দিতে নিম্ন আয়ের ১ কোটি উপকারভোগী কার্ডধারী পরিবারের মাঝে সাশ্রয়ী মূল্যে টিসিবি’র পণ্য বিক্রি করছে সরকার। পাশাপাশি সাধারণ ভোক্তার কাছে ঢাকা মহানগরীতে ৫০ ও চট্টগ্রাম মহানগরীতে ২০টি ট্রাকের মাধ্যমে ৫ কেজি চাল, ২ কেজি মসুর ডাল ও ২ লিটার সয়াবিন তেল বিক্রি করা হচ্ছে।