মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জ উপজেলার মাধবপুর মৌজায় ধলাই নদীর তিনটি স্থানে অবৈধভাবে উত্তোলিত বালুসহ সরঞ্জামাদি জব্দ করা হয়েছে। দীর্ঘদিন ধরে স্থানীয় প্রভাবশালী মহল বালু উত্তোলনে ধলাই পাড় এলাকায় নদীর বাঁধ ভেঙ্গে হুমকির মুখে পড়েছে বসতবাড়ি।
রোববার উত্তোলিত বালু জব্দ করেন উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) ডি.এম.সাদিক আল শাফিন।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, প্রভাবশালী মহল সকল বাঁধা উপেক্ষা করে সিন্ডিকেটের মাধ্যমে দীর্ঘ সময় ধরে ধলাইপাড় এলাকার কয়েকটি স্থান থেকে বালু উত্তোলন করে বাণিজ্য করে আসছেন। তাদের বালু উত্তোলনের কারণে মেশিনের উচ্চ শব্দ, নদীর বাঁধ ভেঙ্গে পড়ে স্থানীয় বসতিদের বাড়িঘর হুমকির মুখে পড়ে। অতিরিক্ত বহনকারী ভারী যানবাহনের কারনে ধ্বসে পড়েছে সড়কপথ। ধলাইর পার থেকে দীর্ঘদিন ধরে কোনো রকমের লিজ ছাড়াই অবৈধভাবে বালু উত্তোলন চলছে। ড্রেজার মেশিনে বালু উত্তোলনে ধ্বসে পড়ছে নদীর প্রতিরক্ষা বাঁধ। হুমকির মুখে রয়েছে নদী তীরের অর্ধশতাধিক বসতঘর। মেশিনের উচ্চ শব্দে অতিষ্ঠ স্থানীয় বাসিন্দারা। ভারী যানবাহনে বালু পরিবহনে ধ্বসে পড়ছে সড়কপথ। স্থানীয় রাজনৈতিক প্রভাবশালী মহল অবৈধ বাণিজ্য চালিয়ে গেলেও পরিবেশ অধিদপ্তর এবং স্থানীয় প্রশাসন নিরব ভূমিকা পালন করছে। অন্যদিকে সরকার হারাচ্ছে লক্ষ লক্ষ টাকার রাজস্ব।
জানা যায়, উপজেলার মাধবপুর ইউনিয়নের ধলাইপাড়, আলীনগর ইউনিয়নের সুনছড়া ও রহিমপুর ইউনিয়নের ধর্মপুর, চৈত্রঘাট এলাকা থেকে দীর্ঘদিন ধরে বিগত সরকার দলীয় একটি প্রভাবশালী সিন্ডিকেট অবৈধভাবে ড্রেজার মেশিন দিয়ে বালু উত্তোলন করে আসছে। অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করে বিক্রি করে লাভবান হচ্ছে প্রভাবশালী এই সিন্ডিকেট।এতে সরকার হারাচ্ছে কোটি টাকার রাজস্ব।
এছাড়া বালু উত্তোলনের ফলে ধলাই নদীর তীর ধসে পড়াসহ অনেক বাড়ি ঘর নদীগর্ভে বিলীন হওয়ার পথে। তাছাড়া বড় বড় ট্রাকে অতিরিক্ত বোঝাই করে বালু পরিবহনের ফলে ভানুগাছ-মাধবপুর আঞ্চলিক সড়ক ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে, কোথাও কোথাও দেড় থেকে দুই ফুট পর্যন্ত দেবে গেছে।
স্থানীয়রা অভিযোগ করে বলেন, এসব বিষয়ে কথা বললে তাদেরকে হুমকি, ধামকি দেওয়া হয়। অবৈধভাবে বালু উত্তোলন নিয়ে বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশিত হলে রোববার দুপুরে কমলগঞ্জ থানা পুলিশের সহযোগিতায় পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তাসহ উপজেলা সহকারি কমিশনার (ভূমি) এসব অবৈধ বালু জব্দ করেন। অভিযানে তিনটি স্পটে উত্তোলিত বালু ও বালু উত্তোলনের কিছু পাইপও জব্দ করা হয়।
কমলগঞ্জ উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) ডি.এম.সাদিক আল শাফিন বালু জব্দের সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, মাধবপুর মৌজায় ধলাই নদী থেকে অবৈধভাবে উত্তোলিত বালু ও পাইপ জব্দ করা হয়েছে। এখানে কাউকে পাওয়া যায়নি। তবে জব্দকৃত বালু শীঘ্রই নিলাম দেয়া হবে।
কমলগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জয়নাল আবেদীন জানান, জব্দকৃত বালু বিধিমোতাবেক দ্রুতসময়ে প্রকাশ্য নিলামের মাধ্যমে বিক্রি করা হবে। পরবর্তীতে অবৈধভাবে কেউ বালু উত্তোলন করতে চাইলে তার বিরুদ্ধে আইনী পদক্ষেপ নেওয়া হবে।