সরকার বিরোধী আন্দোলনে গত বছরের ৩১ অক্টোবর সিলেটের দক্ষিণ সুরমার লালাবাজার এলাকায় পুলিশের গাড়ি চাপায় নিহত হন যুবদল নেতা জিলু আহমদ দিলু। যদিও সেসময় পুলিশ জানিয়েছিলো তিনি দুর্ঘটনায় মারা গেছেন। এই ঘটনার এক বছর পর আদালতে মামলা দায়ের করা হয়েছে।
সিলেট মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট ১ম আদালতে রোববার (১ সেপ্টেম্বর) মামলাটি দায়ের করেন নিহতের ভাই গোলাপগঞ্জ উপজেলার দক্ষিণ মদন গৌরি গ্রামের ইলিয়াছ আলী এলাইছের ছেলে বুলু মিয়া। আদালতের বিচারক দক্ষিণ সুরমা থানা পুলিশকে এফআইআর করার নির্দেশ দিয়েছেন।
এই মামলায় এসএমপির দক্ষিণ সুরমা থানার তৎকালীন অফিসার ইনচার্জ (ওসি) শামসুদ্দোহাকে ১ নম্বর আসামি করা হয়েছে। ২ নম্বর আসামী করা হয়েছে দক্ষিণ সুরমা থানার তৎকালীন ওসি তদন্ত ও বর্তমান ওসি মো. আবুল হোসেনকে। আর ৩ নম্বর আসামী করা হয়েছে সিলেট রেঞ্জের সদ্য বদলিকৃত উপ-মহাপরিদর্শক (ডিআইজি) ও নাটোরের লালপুরের বাসিন্দা শাহ মিজান শাফিউর রহমানকে।
মামলায় বাকী আসামিরা হলেন- এসআই লোকমান হোসাইন, দক্ষিণ সুরমা উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শামীম আহমদ, গোলাপগঞ্জ ফুলবাড়ি ইউপি ২ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সহ সভাপতি মজির উদ্দিন, উপজেলা আওয়ামী লীগ নেতা নুরুজ্জামান মিয়া, দক্ষিণ সুরমা উপজেলা যুবলীগের আহ্বায়ক কমিটির সদস্য লিটন হোসেন খান, সিলেট জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি নাজমুল ইসলাম ও সাধারণ সম্পাদক রাহেল সিরাজ, দক্ষিণ সুরমা উপজেলা আওয়ামী লীগের ছদরুল ইসলাম, উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগ সভাপতি নিজাম উদ্দিন, সাংগঠনিক সম্পাদক কামাল উদ্দিন রাসেল, ল কলেজ ছাত্রলীগ নেতা আমিনুল ইসলাম, গোলাপগঞ্জ উপজেলা যুবলীগের শিক্ষা ও সংস্কৃতিবিষয়ক সম্পাদক ছমির উদ্দিন, দক্ষিণ সুরমার তেতলী ইউনিয়ন যুবলীগের সভাপতি আসাদুল ইসলাম লাভলু, ও সাধারণ সম্পাদক বেলায়েত হোসেন, উপজেলার লালাবাজার ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মহিদ হোসেন, মহানগর স্বেচ্ছাসেবক লীগের সহ সভাপতি নজরুল ইসলাম শিপার, গোলাপগঞ্জ উপজেলা যুবলীগের প্রচার সম্পাদক আব্দুল মুকিত, দক্ষিণ সুরমা উপজেলা আওয়ামী লীগ নেতা আতিকুর রহমান, মাজেদ আহমদ মিটু, আবু তাহের, সিলেট জেলা সাধারণ সম্পাদক শামীম আহমদ, ফেঞ্চুগঞ্জ উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সহ সভাপতি দীন মো. ফয়ছল, দক্ষিণ সুরমা উপজেলা ছাত্রলীগ সভাপতি লাকী লোকমান ও সাধারণ সম্পাদক জয়নাল আবেদিন ইমন, সিসিক কাউন্সিলর ও মহানগর কৃষক লীগের সাধারণ সম্পাদক আব্দুর রকিব বাবলু, সিলেট জেলা যুবলীগের সভাপতি শামীম আহমদ (ভিপি শামীম), মহানগর কৃষক লীগের যুগ্ম আহবায়ক জিয়াউর রহমান, গোলাপগঞ্জ উপজেলার ফুলবাড়ী ইউনিয়নের ২নং ওয়ার্ডের সুহেল আহমদ (হাসুন), তেতলী ইউনিয়ন যুবলীগ সভাপতি নিজামুর রহমান মনফর, জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য মিসবাউল ইসলাম কয়েস ও সিসিক কাউন্সিলর শান্তনু দত্ত শন্তু।
এছাড়াও মামলায় অজ্ঞাতনামা আরও দেড়শো জনকে আসামি করা হয়েছে।
মামলার এজাহারে বাদী উল্লেখ করেন তার ভাই দিলু গোলাপগঞ্জ উপজেলা যুবদলের আহ্বায়ক কমিটির সদস্য ছিলেন। সিলেটের দক্ষিণ সুরমায় অবেরোধ চলাকালে গত বছরের ৩১ অক্টোবর সিলেট-ঢাকা মহাসড়কের লালাবাজার এলাকায় পুলিশ ও সরকার দলের লোকজন হামলা, গুলি করে। দিলু মোটরসাইকেল নিয়ে স্থান ত্যাগ করার সময় পুলিশের গাড়ি পেছন দিকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেয়। পরে তাকে মারধর করা হয়। সহকর্মীরা তাকে উদ্ধার করে ওসমানী হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।
ঘটনার পর থানায় মামলা করতে গেলে পুলিশ অনিহা প্রকাশ করে। আওয়ামী লীগের কর্মীরা বাড়িতে গিয়ে ভয় দেখায়। মামলার ভয় ও বাড়িঘর দখলের হুমকির কারণে মুখ খুলেননি দাবি করে বাদী এজাহারে উল্লেখ করেন অনুকুল পরিবেশ ফিরে আসায় তিনি মামলা করেন।