পহেলা সেপ্টেম্বর উপলক্ষে সুনামগঞ্জের জগন্নাথপুর উপজেলার রানীগঞ্জে গণহত্যা দিবস পালন করেছেন স্থানীয় বাসিন্দারা। ১৯৭১’র ওইদিনে উপজেলার রানীগঞ্জে সাধারণ মানুষদের ওপর নৃংশস হত্যাযজ্ঞ চালায় পাক হানাদার বাহিনী। এরপর থেকেই নানা কর্মসূচীর মাধ্যমে প্রতিবছর ওইদিনটি পালন করে আসছেন স্থানীয়রা।
জানা যায়, ১৯৭১ সালের পহেলা সেপ্টেম্বর পাক হানাদার বাহিনীর স্থানীয় দোসরদের সহযোগিতায় প্রাচীনতম নৌর বন্দর হিসেবে খ্যাত কুশিয়ারা নদীর তীরে অবস্থিত রানীগঞ্জ বাজারে গণহত্যা চালায়। কুশিয়ারা নদীর স্রোতে ভেসে যায় লাশ আর লাশ। নদীর পানি রক্ত গঙ্গায় পরিণত হয়। নিরীহ মানুষজনকে হত্যার পর পেট্রোল দিয়ে জ্বালিয়ে দেয় পুরো রানীগঞ্জ বাজার।
ইতিহাস থেকে জানা যায়, ১৯৭১ সালের এই দিনে শান্তি কমিটি গঠনের কথা বলে স্থানীয় রাজাকাররা বাজার ব্যবসায়ী, বিভিন্ন গ্রাম থেকে আসা লোকজন, বড় বড় নৌকার মাঝি সহ ক্রেতা বিক্রেতাদের বাজারের একটি বড় দোকানে জমায়েত করে। সেদিন সেখানে প্রায় দুই শতাধিক মানুষকে জড়ো করে কোন কিছু বুঝে উঠার আগেই সকলকে রশি দিয়ে বেঁধে ফেলা হয়। পরে তাদেরকে নিয়ে যাওয়া হয় কুশিয়ারা নদীর তীরে। সেখানে সারিবদ্ধভাবে দাঁড় করিয়ে পেছন দিক থেকে নির্বিচারে গুলি চালিয়ে হত্যা করে লাশ নদীতে ভাসিয়ে দেওয়া হয়। ইতিহাসের বর্বর এই নারকীয় তাণ্ডবে প্রায় দেড় শতাধিক লোক শহিদ হলেও হত্যাযজ্ঞের পর ৩৪ জনের নাম পরিচয় পাওয়া যায়। অন্যদের পরিচয় এখনো পাওয়া যায়নি। বর্বরোচিত এ হত্যাকাণ্ড এখনো কাঁদায় রানীগঞ্জবাসীকে।
রোববার দুপুরে প্রশাসনের উদ্যোগে শ্রদ্ধা নিবেদনের সময় পাইলগাঁও রানীগঞ্জ ভূমি অফিসের সহকারী কর্মকর্তা মোস্তফা কামাল, অফিস সহকারী নজরুল ইসলাম নজির, রানীগঞ্জ উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক রফিকুল ইসলাম আকন্দ, স্থানীয় ইউপি মেম্বার কাউছার আহমদ তালুকদারসহ বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীবৃন্দ এছাড়া প্রশাসনের পক্ষে শ্রদ্ধা নিবেদনের পাশাপাশি বিভিন্ন সামাজিক, রাজনৈতিক সংগঠনের উদ্যোগে শ্রদ্ধা নিবেদনসহ বিভিন্ন কর্মসূচি পালিত হয়।
এদিকে শহিদ গাজী ফাউন্ডেশন নামে একটি সামাজিক সংগঠন ২০০৩ সাল থেকে ও রানীগঞ্জ মডেল সোসাইটি ২০১১ সাল থেকে প্রতি বছর রানীগঞ্জ গনহত্যা দিবসে আলোচনা সভা ও দোয়া মাহফিলের আয়োজন করে আসছে।
এবারও দিবসটি উপলক্ষে দোয়া মাহফিল ও শিন্নি বিতরণ করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন শহীদ গাজী ফাউন্ডেশনের সভাপতি আবুল কাশেম আকমল ও রানীগঞ্জ মডেল সোসাইটি সভাপতি মো.আল আমীন।