সোমবার, ১৪ অক্টোবর ২০২৪, ০১:১১ পূর্বাহ্ন

বানিয়াচংয়ে পুলিশকে পিটিয়ে হ ত্যা র ঘটনায় মামলা

  • প্রকাশের সময় : ২৪/০৮/২০২৪ ০৬:৪২:০১
এই শীতে ভাঙন আতঙ্কে দিন কাটছে তাদের
Share
39

বানিয়াচংয়ে থানা ঘেরাও করে পুলিশ কর্মকর্তা এসআই সন্তোষ দাশ চৌধুরী হত্যার ঘটনায় মামলা দায়ের করা হয়েছে। 


গত বৃহস্পতিবার বানিয়াচং থানার তদন্ত ওসি আবু হানিফ বাদি হয়ে ৫ থেকে ৬ হাজার অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে এই হত্যা মামলা দায়ের করেন। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (বানিয়াচং সার্কেল) পলাশ রঞ্জন দে।


মামলার এজাহার ও এলাকাবাসী সূত্রে জানা যায় ,গত ৫ আগস্ট দুপুরে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের শিক্ষার্থীদের কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে উপজেলার এল আর সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে জড়ো হন কয়েক হাজার লোক। পরে তাঁরা সেখান থেকে একটি মিছিল নিয়ে নতুনবাজার,বড়বাজার হয়ে বানিয়াচং থানায় রওয়ানা দেয়। এর পূর্বে উপজেলা পরিষদের কয়েকটি ভবন ভাঙচুর চালায় তারা।


পরবর্তীতে মিছিলকারীদের একটি অংশ বানিয়াচং থানার উদ্দেশ্যে রওয়ানা হয়। আন্দোলনকারীদের মিছিলটি থানার সন্নিকটে বানিয়াচং শাহী ঈদগাহ এলাকায় যাওয়া মাত্রই পুলিশ তাদের বাধা প্রদান করে। এ নিয়ে পুলিশের সঙ্গে কথা-কাটাকাটি হয়। এ সময় বিক্ষোভকারীরা পুলিশকে লক্ষ্য করে ইটপাটকেল ছুঁড়লে পুলিশ রাবার বুলেট, কাঁদানে গ্যাসের শেল, সাউন্ড গ্রেনেড ছোড়ে পুলিশ। এতে ঘটনাস্থলেই নিহত হন ৫জন। পরবর্তীতে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান আরো ৩ জন।


পুলিশের গুলিতে মারা যাওয়ার বিষয়টি এলাকায় ছড়িয়ে পড়লে আশপাশের কয়েকটি মহল্লার মসজিদের মাইকে ঘোষণা দিয়ে থানার সামনে একত্রিত হন। কয়েক হাজার মানুষ বানিয়াচং থানা ঘেরাও করে। শুরু হয় ইটপাটকেল নিক্ষেপ। একপর্যায়ে থানা ভবনে আগুন ধরিয়ে দেয় উত্তেজিত জনতা। এ সময় থানার ভেতরে ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি)-সহ পুলিশের ১৫ থেকে ১৬ সদস্য আটকা পড়েন। পাশাপাশি আওয়ামী লীগ-ছাত্রলীগের ১০ থেকে ১৫ জন নেতা-কর্মী আটকা পড়েন। তারা বিক্ষোভকারীদের ধাওয়ায় থানায় আশ্রয় নিয়েছিলেন।


এসময় উত্তেজিত জনতা বানিয়াচং থানায় আগুন ধরিয়ে দিলে ভেতরে থাকা বেশ কিছু গাড়ি, থানায় থাকা গুরুত্বপূর্ণ মামলার আলামত, নথিপত্র ও প্রয়োজনীয় কাগজপত্র ও উপকরণ ভস্মীভূত হয়। এদিকে থানা ঘেরাওয়ের খবর পেয়ে বেলা তিনটার দিকে জেলা সদর থেকে সেনাবাহিনী ঘটনাস্থলে পৌঁছায়। কিন্তু কোনোভাবেই সেনাবাহিনী পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পারেনি। এভাবে সময় গড়িয়ে রাত ১২টা পর্যন্ত উত্তেজিত জনতা থানা ঘেরাও করে রাখেন। এরপর মধ্যরাতে বিএনপির সিলেট বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক জি কে গউছসহ দলটির বেশ কিছু নেতা ঘটনাস্থলে গিয়ে লোকজনকে বোঝানোর চেষ্টা করেন। কিন্তু লোকজন তাও মানতে রাজি হয়নি।


পরে উত্তেজিত জনতা রাত ১টার দিকে সেনাবাহিনীকে প্রস্তাব দেন, আওয়ামী লীগ নেতা ও বানিয়াচং ২নং উত্তর-পশ্চিম ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান হায়দারুজ্জামান খান ধনমিয়া ও থানার এসআই সন্তোষ দাশ চৌধুরীকে তাদের হাতে তোলে দিতে বলে। কিন্তু সেনাবাহিনী তাদের কথায় রাজি হয়নি। পরে সেনাবাহিনী জানায়, থানার ভেতরে ওই নেতাসহ আওয়ামী লীগের কোন নেতা নেই। পরে জেলা বিএনপি ও স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিদের অনুরোধে লোকজন শান্ত হন।

ওই দিন রাত ২টার দিকে থানার দ্বিতীয় তলায় অবরুদ্ধ পুলিশ সদস্য ও নেতাদের উদ্ধার করে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। তাঁদের সেনাবাহিনীর গাড়িতে উঠানোর সময় এসআই সন্তোষ দাশ চৌধুরীকে উপস্থিত লোকজন ছিনিয়ে নিয়ে নেয়। পরে সবার সামনে পিটিয়ে হত্যা করে। হত্যা করার পর লাশ নিয়ে বানিয়াচং বড় বাজার শহীদ মিনারে নেয় তারা। সেখান থেকে ভোর রাতে লাশ থানার সামনে এনে ফেলে রাখা হয়। পর দিন সকাল ১০টার দিকে উত্তেজিত জনতা এসআই সন্তোষ দাশ চৌধুরীর লাশ থানার সামনে একটি গাছে ঝুলিয়ে রাখেন। দিনভর হাজার হাজার মানুষ লাশ দেখতে থানা প্রাঙ্গণে ভিড় করেন।


এদিকে গাছে লাশ ঝুঁলানোর খবর পেয়ে ৬ আগস্ট বেলা ২টার দিকে সেনাবাহিনীর একটি দল ঘটনাস্থলে গিয়ে লাশটি উদ্ধার করে। পরে লাশের ময়নাতদন্ত হবিগঞ্জ ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট জেলা সদর হাসপাতালে সম্পন্ন হয়।



সিলেট প্রতিদিন / টিবি


Local Ad Space
কমেন্ট বক্স
© All rights reserved © সিলেট প্রতিদিন ২৪
পোর্টাল বাস্তবায়নে : বিডি আইটি ফ্যাক্টরি