একাত্তরে ব্রিটেন প্রবাসী বাঙালিরা মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে বহির্বিশ্বে জনমত গঠন ও অর্থ সহায়তা দিয়ে আমাদের বিজয়কে তরান্বিত করেছিলেন। এক্ষেত্রে প্রবাসী সিলেটিদের অবদান ছিল গৌরবোজ্জ্বল। আমাদের জাতীয় ইতিহাসে সেই গৌরবোজ্জ্বল অধ্যায়কে যথাযথভাবে তুলে আনতে হবে।
শনিবার কেন্দ্রীয় মুসলিম সাহিত্য সংসদ আয়োজিত প্রবাসী গবেষক ড. তাসলিম শাকুরের ‘স্টোরিস অব সেভেন্টি ওয়ান’ গ্রন্থের প্রকাশনা অনুষ্ঠানে বক্তারা একথা বলেন।
কেন্দ্রীয় মুসলিম সাহিত্য সংসদের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি আহমেদ নূরের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন লিডিং ইউনিভার্সিটির ভাইস চ্যান্সেলর প্রফেসর ড. কাজী আজিজুল মাওলা।
অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্য দেন শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজ বিজ্ঞান বিভাগের সাবেক বিভাগীয় প্রধান ড. কামাল আহমদ, কেমুসাসের সহ-সভাপতি কবি কালাম আজাদ ও আফতাব চৌধুরী। অনুষ্ঠানে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন কেন্দ্রীয় মুসলিম সাহিত্য সংসদের সাধারণ সম্পাদক গবেষক সৈয়দ মবনু।
অনুষ্ঠানে অন্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন, কেমুসাসের সাবেক সাধারণ সম্পাদক দেওয়ান মাহমুদ রাজা চৌধুরী ও কার্যকরী পরিষদ সদস্য জগলু চৌধুরী এবং বইটির প্রকাশক নলেজিস্টেস উইথাউট বর্ডার-এর সমন্বয়ক ইমামুর হোসেন।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে প্রফেসর ড. কাজী আজিজুল মাওলা বলেন, এ বইটি প্রবাসে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসের একটি খন্ডিত চিত্র। খন্ডিত অংশগুলোই একদিন পূর্ণাঙ্গ ইতিহাস হয়ে উঠবে।
মূল প্রবন্ধে গবেষক সৈয়দ মবনু বলেন, ‘স্টোরিস অব সেভেন্টি ওয়ান’ বইটি মূলত ইংল্যান্ডের উত্তর-পশ্চিম অঞ্চলে মুক্তিযুদ্ধের সপক্ষে প্রবাসী বাঙালীদের তৎপরতার ইতিহাস। এ বইয়ে ইংল্যান্ডের ম্যানচেস্টার, লিভারপুল, লিডস, ব্র্যাডফোর্ড ও চেস্টারে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে প্রবাসী বাঙালিদের আন্দোলনের চিত্র ও গবেষণা উঠে এসেছে।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে শাহজালাল বিশ^বিদ্যালয়ের সাবেক অধ্যাপক ড. কামাল আহমদ বলেন, স্বাধীনতাপূর্ব ও স্বাধীনতা-উত্তর বাংলাদেশের প্রবাসীদের অবদান সবচেয়ে বেশি। ব্রিটেন প্রবাসী বাঙালীরা আমাদের মুক্তিযুদ্ধে যেমন অসামান্য ভূমিকা রেখেছেন তেমনি বাংলাদেশের প্রথম রেমিট্যান্স তারাই পাঠিয়েছিলেন।
সভাপতির বক্তব্যে কেমুসাসের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি আহমেদ নূর বলেন, আমাদের দুর্ভাগ্য যে, স্বাধীনতার বায়ান্ন বছরেও আমরা মুক্তিযোদ্ধাদের সঠিক তালিকা করতে পারিনি, মুক্তিযুদ্ধের সঠিক ইতিহাসও লিখতে পারিনি। এক্ষেত্রে তৃণমূল পর্যায় থেকে মুক্তিযোদ্ধাদের সাক্ষাৎকারের ভিত্তিতে যে ইতিহাস উঠে আসে, সেটাই প্রকৃত ইতিহাস। তিনি বইটির মোড়ক উন্মোচনের জন্য কেমুসাসকে বেছে নেয়ায় লেখককে ধন্যবাদ জানান।
লেখক তাসলিম শাকুর বলেন, এ বইটি সামগ্রিকভাবে গোটা ব্রিটেনের মুক্তিযুদ্ধের চিত্র নয়, এটা মূলত ইংল্যান্ডের উত্তর পশ্চিম অঞ্চলে মুক্তিযুদ্ধের সপক্ষের আন্দোলনের ইতিহাস। তিনি বলেন, প্রবাসে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস লিখতে হলে সিলেটী প্রবাসীদের বাদ দিয়ে সেটা কোনোভাবেই রচনা সম্ভব নয়। এ কারণে আমি বইটির মোড়ক উন্মোচনের জন্য সিলেট তথা কেমুসাসকে বেছে নিয়েছি।