মাত্র কয়েক সেকেন্ডের মধ্যে মোবাইল ফোনের আইএমইআই (ইন্টারন্যাশনাল মোবাইল ইকুইপমেন্ট আইডেন্টিটি) নম্বর পরিবর্তন বদলে ফেলে মিজানুর রহমান (২২) ও আব্দুর রহমান (২২)। দুজনেই বিভিন্ন অ্যাপস বা সফটওয়্যার ব্যবহার করে কয়েক সেকেন্ড বদল করে ফেলে। তারা সিলেট নগরীর বন্দরবাজারস্থ করিম উল্লাহ মার্কেটে মোবাইল সার্ভিসিং সেন্টারের আড়ালে এসব কাজ করে থাকতো। আইএমইআই সেগুলো ফের মার্কেটে বা অনলাইনে বিক্রি করতো তারা। ইতিপূর্বে প্রায় ২০-২৫ হাজার মোবাইলের আইএমইআই বদলে ফেলে তা বিক্রি করেছে।
মঙ্গলবার(১১জুন) দুপুরে সিলেটে র্যাবের সদর দপ্তরে সংবাদ সম্মেলন করে এ তথ্য জানান র্যাব-৯–এর অধিনায়ক মো.মোমিনুল হক।
চুরি-ছিনতাইয়ের মোবাইল ফোনের আইএমইআই পরিবর্তন করে এমন একটি চক্রের ৬ সদস্যকে গ্রেফতার করে র্যাপিড এ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব)-৯।
সোমবার(১০জুন) সিলেট নগরীর বন্দর বাজারস্থ করিম উল্লাহ মার্কেটের ৩য় তলায় একাধিক মোবাইল সার্ভিসিং দোকানে অভিযান চালিয়ে মোবাইল চোর, ছিনতাইকারী চক্র ও আইএমইআই পরিবর্তনকারী সংঘবদ্ধ চক্রের ৬ সক্রিয় সদস্যকে গ্রেফতার করে র্যাব।
এসময় তাদের কাছ থেকে ২৩১ টি স্মার্ট মোবাইল, ১০ টি বাটন মোবাইল, ১০ টি ট্যাব, ০২ টি পিসি, ০৩ টি মনিটর, ০২ টি কীবোর্ড, ০২ টি মাউস, ০১ টি হার্ডড্রাইভ, ০২ টি পেনড্রাইভ, নগদ ৭৫,৫৫০ টাকা এবং ০১ টি আইএমইআই পরিবর্তনকারী ডিভাইস জব্দ করা হয়।
গ্রেফতারকৃতরা হলেন-সিলেট নগরীর লাউয়াই উম্মর কবুল এলাকার রফিকুল ইসলাম সেতাবের ছেলে নজিবুল ইসলাম জেবলু (২২), এসএমপি’র শাহপরাণ থানার লামাপাড়ার মো.বাচ্চু মিয়ার ছেলে মো.আব্দুর রহিম (২৮), হবিগঞ্জ জেলার বাহুবল থানার ভবানীপুর এলাকার মো.আকল মিয়ার ছেলে মো.মাসুদ মিয়া (২৩), দক্ষিণ সুরমা থানার ধরাধরপুর এলাকার আমির আলীর ছেলে মো.ইমন (২২), মোগলাবাজার থানার সিলাম টিকরপাড়া এলাকার মানিক মিয়ার ছেলে মিজানুর রহমান (২২) ও দক্ষিণ সুরমা থানার ধরাধরপুর এলাকার আব্দুর রজ্জাকের আব্দুর রহমান (২২)।
তিনি জানান, গ্রেফতারকৃতদের মধ্যে জেবলু একজন ছিনতাইকারী। সেই বিভিন্ন স্থান থেকে ছিনতাই করে সেগুলো বিক্রি করতো। মো.আব্দুর রহিম (২৮) ও মো.মাসুদ মিয়া (২৩) তারা ছিনতাইকারী বা চোরদের কাছ থেকে কম মূল্য ক্রয় করে থাকে। মো.ইমন (২২) হচ্ছে মিডিয়ার দায়িত্বে। সে কারো কাছ থেকে মোবাইল ক্রয় করে না বা বিক্রি করে না। তার কাজ হচ্ছে আইএমইআই পরিবর্তনকারীর কাছে নিয়ে যাওয়া। আর আইএমইআই পরিবর্তনের মূল কাজটি করেন মিজানুর রহমান (২২) ও আব্দুর রহমান (২২)। সাধারণত কেউ যদি তাদের কাছে মোবাইলের আইএমআই পরিবর্তন করতে যান তাহলে করবে না।তবে তাদের সিন্ডিকেটের কোনো সদস্যসের মাধ্যমে গেলে তখন তা কয়েক সেকেন্ডের মধ্যে পরিবর্তন করে দেয়।
র্যাবের এই কর্মকর্তা বলেন, চুরি ও ছিনতাই করা মোবাইল ফোন বিক্রির সময় তারা ক্রেতাকে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর চোখ এড়াতে আইএমইআই পরিবর্তনের নিশ্চয়তা প্রদান করে। পাশাপাশি তারা মোবাইলের কেসিং, ডিসপ্লেও পরিবর্তন করে ফেলে। এই চক্রটি ২০-২৫ হাজার মোবাইল ফোনের আইএমইআই পরিবর্তন করে বিক্রি করেছে বলে জানা যায়।
তিনি আরও বলেন, গ্রেফতারকৃতদের মধ্যে আব্দুর রহিমের বিরুদ্ধে চুরি, মারামারি, হত্যার চেষ্টা ও সরকারি কাজে বাধা দেয়ার চেষ্টাসহ ৫টি মামলা রয়েছে। অবৈধ মোবাইল বাসায় রেখে বিক্রি করার অপরাধে মিজানুর রহমানের বিরুদ্ধে একটি মামলা রয়েছে। গ্রেফতারকৃতরা বিভিন্ন সময় মোবাইল সার্ভিসিং দোকানে সেলসম্যান বা মোবাইল সার্ভিসিং দোকানে মেরামতকারী হিসেবে কাজ করে থাকে।
র্যাব-৯–এর অধিনায়ক মো.মোমিনুল হক বলেন, গ্রেফতারকৃতদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। তাদের কাছ থেকে বেশ কয়েকজনের নাম উঠে এসেছে। তাদের ব্যাপারেও তদন্ত চলছে। আগামীতে এই ধরণে অভিযান অব্যাহত থাকবে।