পুরোদমে চলছে বাংলা নববর্ষবরণের প্রস্তুতি। রাজধানীতে বর্ষবরণের সবচেয়ে বড় আকর্ষণ মঙ্গল শোভাযাত্রার প্রস্তুতিতে ব্যস্ত সময় পার করছেন আয়োজকরা।
এবার নববর্ষ ও মঙ্গল শোভাযাত্রা আয়োজনের সার্বিক দায়িত্ব পালন করছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদের ২৫ ব্যাচের শিক্ষার্থীরা। বিভিন্ন ভাগ হয়ে সকাল থেকে রাত পর্যন্ত কর্মযজ্ঞ পালন করছেন এই শিক্ষার্থীরা।
গত ২১ মার্চ বর্ষবরণ ও মঙ্গল শোভাযাত্রার এ প্রস্তুতি কার্যক্রমের উদ্বোধন করেন শিল্পী হাশেম খান। এ বছর কবি জীবনানন্দ দাশের 'তিমির হননের গান' কবিতা থেকে 'আমরা তো তিমিরবিনাশী' চরণটিকে প্রতিপাদ্য নির্ধারণ করা হয়েছে।
সরেজমিনে দেখা যায়, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদের ভেতরে হাতি ও টেপা পুতুলের বিশাল আকৃতির মূর্তি তৈরি করা হচ্ছে। এগুলোর কাঠামো এরই মধ্যে দাঁড় করানো হয়েছে৷ এখন সেগুলোর গায়ে কাগজ লাগিয়ে রং করা হবে। এছাড়া তৈরি হচ্ছে বিভিন্ন পশু-পাখির আদলের মুখোশ। তার মধ্য বাঘের মুখাবয়ব, প্যাঁচা, ফল ও রাজা-রানিসহ একাধিক মুখোশ তৈরি করছেন শিক্ষার্থীরা। রঙিন কাগজের ওপর বিভিন্ন নকশা এঁকে তৈরি হচ্ছে এসব মুখোশ।
মুখোশ তৈরিতে ব্যস্ত কারুশিল্প বিভাগের ২৫ ব্যাচের শিক্ষার্থী চিন্ময় রায়। চিন্ময় বলেন, প্রতিবারই প্রবীণতম ব্যাচ আয়োজনের দায়িত্ব পালন করে। তবে আমাদের সঙ্গে অন্যান্য ব্যাচের নবীন শিক্ষার্থীরাও কাজ করছেন। যেসব ব্যাচের শিক্ষার্থীরা বের হয়ে গেছেন তারাও আমাদেরকে সহযোগিতা করছেন। মঙ্গল শোভাযাত্রার আগ পর্যন্ত আমাদের কার্যক্রম চলবে।
আঁকাআঁকির অপরপাশেই রয়েছে বিক্রয়কেন্দ্র। সেখানে টুইন পাখি, ছোট প্যাঁচা, বড় প্যাঁচা, বাঘের মাস্ক, বিভিন্ন ধরনের সরাচিত্র, রাজা-রানির মাস্ক, হাতপাখা সাজিয়ে রাখা হয়েছে।
প্রস্তুতি নিয়ে প্রাচ্যকলা বিভাগের শিক্ষার্থী সাদিত সাদমান রাহাত জানান, রোজা ও ঈদের ছুটিতে ক্যাম্পাস বন্ধ থাকায় শোভাযাত্রার প্রস্তুতির কর্মযজ্ঞে উপস্থিতি তুলনামূলক কম। এর পরও আমরা সর্বোচ্চ প্রস্তুতি নিয়ে কাজ করে চলছি। বিগত বছরগুলোর মতো আয়োজনে কোনো কমতি থাকবে না। আশা করছি, এ বছরও জাঁকজমকপূর্ণভাবে মঙ্গল শোভাযাত্রা অনুষ্ঠিত হবে।
শোভাযাত্রার প্রস্তুতির কারণে অনেক শিক্ষার্থীই ঈদের ছুটিতে বাড়ি যাচ্ছেন না। তাদের একজন প্রিন্টমেকিং বিভাগের শিক্ষার্থী জাবির জামান। তিনি বলেন, এটি আমাদের ব্যাচের বৈশাখ, এটি আমাদের করতে হবে। সেভাবে কাজ না করলে হয়তো বিগত বছরগুলোর মতো শোভাযাত্রা অনুষ্ঠিত হবে না। তাই আমরা অনেকেই ছুটিতে বাড়িতে যাচ্ছি না।
প্রিন্টমেকিং বিভাগের আরেক শিক্ষার্থী পূজা রায় বলেন, ২০১৬ সালে মঙ্গল শোভাযাত্রা আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃতি পেয়েছে। এবার আমাদের ব্যাচ দায়িত্ব পেয়েছে। যেহেতু আমাদের সময় কম, তাই কষ্ট একটু বেশি হচ্ছে, এরপরও কাজটি বেশ উপভোগ করছি।
সার্বিক বিষয়ে কথা হয় মঙ্গল শোভাযাত্রা উপকমিটির আহ্বায়ক চারুকলা অনুষদের ডিন অধ্যাপক নিসার হোসেনের বলেন, শোভাযাত্রার আগমুহূর্ত পর্যন্ত শোভাযাত্রার প্রস্তুতি চলবে। ঢাকায় যেসব শিক্ষার্থী রয়েছেন, তাদের নিয়েই আমরা সর্বোচ্চ চেষ্টা করব যেন এবারের শোভাযাত্রাও বড় পরিসরে করা যায়।