জাতীয় সংসদ নির্বাচন শেষ হতে না হতেই ক্ষমতাসীন দলের এক ডজন নারী নেত্রী সংরক্ষিত আসনে সংসদ-সদস্য হতে দৌড়ঝাঁপ শুরু করেছেন। নিয়ম অনুযায়ী সাধারণ নির্বাচনের ফলাফলের গেজেট প্রকাশের ৯০ দিনের মধ্যে জাতীয় সংসদের সংরক্ষিত মহিলা আসনের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়ে থাকে। দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের গেজেট হয়েছে ৯ জানুয়ারি। এ হিসেবে আগামী ৯ এপ্রিলেরই মধ্যে সংসদের সংরক্ষিত মহিলা আসনে ভোট সম্পন্ন করতে হবে নির্বাচন কমিশনকে (ইসি)। তবে সচরাচর ভোট হয় না। আসনগুলোতে বিজয়ী রাজনৈতিক দল বা জোট সাধারণ আসনের কোটা অনুসারে প্রাপ্ত সংরক্ষিত আসনে একক প্রার্থী মনোনয়ন দেন। তাই তারা বিনা প্রতিদ্বন্দ্বীতায় বিজয়ী হন।
সিলেট বিভাগে চার জেলা থেকে দীর্ঘদিন ধরে দুজন সংসদ-সদস্য সংরক্ষিত আসনে নির্বাচিত হয়ে আসছেন। সংরক্ষিত আসন ৩০টি থেকে ৫০-এ উন্নীত হলেও এ বিভাগের আসন সংখ্যা বাড়েনি। এজন্য এবার সিলেট বিভাগ থেকে সংরক্ষিত আসনে ৩ জন সংসদ-সদস্য দেওয়ার দাবি উঠেছে। বিষয়টি সংসদ নেত্রী ও আওয়ামী লীগ প্রধান শেখ হাসিনার ওপর নির্ভরশীল।
আসন বণ্টনের ক্ষেত্রে সংরক্ষিত আসনের নারী সদস্যদের জন্য কোনো নির্ধারিত নির্বাচনী এলাকা নেই। তারা কেবল দলীয় বা জোটের সদস্য হিসেবে পরিচিত হয়ে থাকেন। এক্ষেত্রে দল বা জোটের প্রাপ্ত আসনের ভিত্তিতে মহিলা আসন বন্টন করা হয়।
জাতীয় সংসদে সংবিধান অনুসারে বর্তমানে ৫০টি সংরক্ষিত মহিলা আসন বিদ্যমান। এই সংখ্যাকে দেশের মোট সংসদীয় আসন ৩০০ দিয়ে ভাগ করে ভাগফলকে নির্বাচনে অংশগ্রহণকারী দল বা জোটের বিজয়ী সংসদ সদস্য সংখ্যা দিয়ে গুণ করলে প্রাপ্ত ফলই হচ্ছে ওই দল বা জোটের প্রাপ্ত সংরক্ষিত আসন। সাধারণত ফলাফল যদি ভগ্নাংশে আসে তবে শূন্য দশমিক ৫ বা তার বেশি সংখ্যার ক্ষেত্রে একটি আসন দেওয়া হয়। তবে এক্ষেত্রে মোট আসন সংখ্যা ৫০ অতিক্রম হয়ে গেলে ভগ্নাংশের হিসেবে কিছুটা তারতম্য হতে পারে। লটারির বিধানও রয়েছে।
স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা মনে করেন সিলেট বিভাগে প্রতিটি জাতীয় নির্বাচনেই আওয়ামী লীগ ভালো করে আসছে। সে হিসাবে এখানকার দলীয় কর্মীদের মূল্যায়ন করা হয়নি। একাদশ সংসদ নির্বাচন পরবর্তী গঠিত সরকারে সাধারণ আসনের সংসদ-সদস্যদের থেকে চারজন মন্ত্রী ও একজন প্রতিমন্ত্রী করা হলেও সংরক্ষিত আসনের সংসদ-সদস্য বাড়েনি। এবারের সরকারে দুজন মন্ত্রী ও একজন প্রতিমন্ত্রী পেয়েছে সিলেট। যদিও ভোটের হিসাবে এ বিভাগে পুরুষ-নারী প্রায় সমান। এসব বিবেচনায় এবার দুজনের পরিবর্তে তিনজনকে সংরক্ষিত আসনে সংসদ-সদস্য করার দাবি উঠেছে।
এবার সংরক্ষিত আসনে সংসদ-সদস্য হওয়ার আলোচনায় আছেন আওয়ামী লীগের সভাপতি মণ্ডলীর সদস্য সাবেক এমপি সৈয়দা জেবুন্নেছা হক। দলের পরীক্ষিত এই নেত্রী সদ্যসমাপ্ত সংসদ নির্বাচনে দলীয় প্রার্থীর পক্ষে চষে বেড়ান নির্বাচনি এলাকায়। অসুস্থ শরীর নিয়েও নগরীর পাড়া-মহল্লা ছাড়াও ছুটে গেছেন প্রত্যন্ত গ্রামাঞ্চলে। নিজ বাসায় গ্রেনেড হামলার শিকার হয়ে একটি পায়ের অংশবিশেষ হারালেও দলীয় কর্মকাণ্ডে তিনি থেমে থাকেননি।
এছাড়া আসনে সংসদ-সদস্য হওয়ার দৌড়ঝাঁপ দিচ্ছেন সিলেট জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি নাজনীন হোসেন, একাদশ জাতীয় সংসদের সংরক্ষিত আসনের সদস্য মৌলভীবাজার জেলা মহিলা আওয়ামী লীগের সভাপতি সৈয়দা জোহরা আলাউদ্দিন ও কৃষক লীগের কেন্দ্রীয় নেত্রী শামীমা আক্তার খানম, মহিলা আওয়ামী লীগের আইন সম্পাদক ব্যারিস্টার সীমা করিম, কেন্দ্রীয় সদস্য (সিলেট-সুনামগঞ্জ) সাবিনা সুলতানা, সিলেট জেলা মহিলা আওয়ামী লীগের সভাপতি অ্যাডভোকেট সালমা সুলতানা, মহানগর মহিলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আসমা কামরান, সিলেট জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য ডা. নাজরা আহমদ চৌধুরী, সিলেট জেলা পরিষদের প্যানেল চেয়ারম্যান আমাতুজ জাহুরা রওশান জেবীন রুবা, যুব মহিলা লীগের সভাপতি আলেয়া সারোয়ার ডেইজি, আওয়ামী লীগের সদস্য আজিজুস সামাদ আজাদের স্ত্রী মুমতাহিনা রীতু, সুনামগঞ্জ জেলা মহিলা আওয়ামী লীগের সভাপতি সাবেক সংসদ-সদস্য অ্যাডভোকেট শামছুন নাহার বেগম (শাহানা রব্বানী), সহ-সভাপতি অ্যাডভোকেট রীপা সিংহা ও মৌলভীবাজার-৩ আসনের সাবেক এমপি সৈয়দা সায়রা মহসীন, মহসিন আলী ও সায়রা দম্পতির মেয়ে যুবলীগের নেত্রী সৈয়দা সানজিদা মহসীন।