একুশে পদকপ্রাপ্ত গণমানুষের কবি দিলওয়ারের দশম মৃত্যু বার্ষিকী আজ ১০ অক্টোবর। স্বাধিকার আন্দোলন ও মুক্তিযুদ্ধে প্রেরণাদানকারী বহু ছড়া, কবিতা ও গানের স্রষ্টা এই কবি ২০১৩ খ্রিষ্টাব্দের ১০ অক্টোবর সিলেট নগরীর সুরমা নদীর দক্ষিণ পারে অবস্থিত ভার্থখলা গ্রামে নিজ বাসভবনে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। এই বাড়িতেই ১৯৩৭ খ্রিষ্টাব্দের পয়লা জানুয়ারি তিনি জন্মগ্রহণ করেছিলেন।
স্বাধীনচেতা ও সংগ্রামী জীবনের অধিকারী ছিলেন কবি দিলওয়ার। তিনি গ্রিক, রোম থেকে শুরু করে পুরাণকে তৃতীয় দৃষ্টির আলোকে প্রকাশ করেছেন তাঁর কবিতায়। জীবনধর্মী ইতিহাসবোধের কারণে তিনি প্রাগৈতিহাসিক কালকে টেনে আনেন তাঁর কবিতায়।
তিনি লিখেছেন, ‘সেই আদি অকৃত্রিম আকাশের নিচে/ ধূলো বালি ঘাসের ওপরে/ আমি আছি, সেই আমি জন্ম পরম্পরা থেকে/ যে আমি এখন মানুষ!’
তাঁর প্রথম কাব্যগ্রন্থ ‘জিজ্ঞাসা’ প্রকাশিত হয় ১৯৫৩ খ্রিস্টাব্দে। এছাড়াও তাঁর প্রকাশিত গ্রন্থগুলোর মধ্যে রয়েছে ‘ঐক্যতান’, ‘পূবাল হাওয়া, ‘উদ্ভিন্ন উল্লাস, ‘বাংলা তোমার আমার’, ‘রক্তে আমার অনাদি অস্থি’, ‘বাংলাদেশ জন্ম না নিলে’ উল্লেখযোগ্য।
১৯৮১ খ্রিস্টাব্দে বাংলা একাডেমি পুরস্কার, ১৯৮১ খ্রিস্টাব্দে বাংলা একাডেমি ফেলোশিপ ও ২০০৮ খ্রিস্টাব্দে একুশে পদক পান কবি। এছাড়া লাভ করেছেন অসংখ্য সম্মাননা ও পদক।
দীর্ঘ ৬০ বছরব্যাপী সাহিত্যের প্রায় সকল বিষয় নিয়ে লিখে গেছেন দিলওয়ার। সমৃদ্ধ করেছেন বাংলা সাহিত্যকে। সমাজতন্ত্র ও জাতীয়তাবাদ এ দুটো বিষয় দিলওয়ারের বিভিন্ন লেখায় প্রকাশ পেয়েছে।
‘মা-মেঘনা সুরমা যমুনা গঙ্গা কর্ণফুলী, তোমাদের বুকে আমি নিরবধি গণমানবের তুলি’ নিজের আত্মপরিচয়কে এভাবেই তুলে ধরেছিলেন কবি দিলওয়ার। সিলেটের প্রাণ ইতিহাস-ঐতিহ্যের অন্যতম সাক্ষী লর্ড ক্বিন কর্তৃক নির্মিত ক্বিনব্রিজকে নিয়ে লিখেছিলেন ‘ক্বিন ব্র্রিজের সূর্যোদয়’।
তাঁর কবিতায় স্বত:স্ফূর্তভাবে উঠে এসেছে সাধারণ মানুষের কথা। সাধারণ মানুষের সাথে মিশে যেতে তিঁনি তাঁর নামের সাথে বংশ পরিচয় ‘খান’ ছিন্ন করে দিলওয়ার নামেই লিখে গেছেন। আর এ জন্যই সিলেটের মানুষের কাছে তিনি ‘গণমানুষের কবি’।