মঙ্গলবার, ১৯ মার্চ ২০২৪, ০৫:৩৫ অপরাহ্ন


শামীমকে এরেস্ট করা হয়েছে!

  • প্রকাশের সময় : ১২/০৮/২০২১ ১২:৪০:৫৯
এই শীতে ভাঙন আতঙ্কে দিন কাটছে তাদের
Share
8

২০০১ সালের  ডিসেম্বর মাস। বিএনপি ক্ষমতায়। আমার বয়স প্রায় ৩০ হবে। তখন সড়ক ও জনপথ বিভাগ এর এস ও  আবুল হোসেন আমাকে অনুরোধ করে বললেন  শেরপুর ঐ পারে অর্থাৎ মৌলভীবাজার জেলাধীন সকল অবৈধ স্থাপনা জনপথ  বিভাগ কর্তৃক ভেঙে ফেলে দেওয়া হবে। আমি যদি ওই পারে থাকি দাঙ্গা ফাসাদ থেকে তারা রক্ষা পাবে। আমি যেন দয়া করে সেখানে থাকি।

রোডস এন্ড হাইওয়ে এর  সাথে আমাদের সম্পর্ক অত্যন্ত ভালো ছিল।  তার অনুরোধ রক্ষা করব বলে বলে মনে মনে ঠিক করলাম? ঐপারের লোকজন আবার আমাকে খুব আদর যত্নও করেন। আমি কোন কথা বললে তারা সেটা মেনে নিতেন। পরদিন সকালেও আবুল হোসেন ভাই আমাকে নক করল। আমি বললাম আপনি যান আমি আসছি। তারা যাওয়ার দশ পনের মিনিটের মাথায় আমি সেখানে যাই।

তারা অবৈধ স্থাপনা ভাঙ্গা শুরু করে দিলো। সেখানে দেখলাম প্রচুর পরিমাণে পুলিশ এবং মৌলভীবাজারের ডিসি ও এস,পি সাহেব। আমি আমাদের প্রয়াত সাদিক ভাইর ফাস্ট ফুডের দোকানের সামনে দাঁড়িয়ে কয়েকজনের সাথে কথা বলছি। ঠিক আমার ১০/১২ হাত দূরে ডিসি এসপি সাহেব। আমি পরিচিত জনের সাথে কথা বলছি। হঠাৎ করে তাজপুর কলেজের ছাত্রলীগ নেতা  ছোট ভাই সাজন ও ফয়সাল মোটরসাইকেলে করে চলে আসে আমার সামনে।

মোটরসাইকেলটা পুরনো ছিল। এক্সেলেটর কমালে বন্ধ হয়ে যায়। তারা এস্কেলেটর কে বাড়িয়ে ধরে রেখেছে এবং আমাকে সালাম দিয়ে কুশলাদি জিজ্ঞেস করছিল। আমি তাদেরকে এটা বন্ধ করতে বলি এবং বুঝাতে চেষ্টা করছি ডিসি, এসপি সাহেব আছেন। মোটরসাইকেলের বিকট শব্দ যে ডিসি, এস,পি সাহেবের কানে যাচ্ছে এবং তাদের খারাপ লাগবে সেটা আমি অনুমান করেছিলাম। এটা যে একটা অভদ্রতামি সেটাও বুঝতে পেরেছিলাম।

কিন্তু যারা মোটরসাইকেলে ছিল তারা খেয়াল করেনী, বাচ্চা মানুষ - যে ডিসি, এসপি সাব দাঁড়ানো। ডিসি সাহেব ছিলেন পুরুষ এবং এসপি সাহেব ছিলেন মহিলা। নাম আজ এত বছর পরে আমার মনে নেই। আমি মোটরসাইকেলটি বন্ধ করার কথা বলার সাথে সাথে তারা মোটরসাইকেলটি বন্ধ করে দেয়। তারপরেও শেষ রক্ষা হলো না। এসপি সাহেব একজন অফিসার কে ডেকে বললেন এদের মোটরসাইকেল চিজ করো এবং তাদেরকেও  ফাঁড়িতে নিয়ে যাও।

আমি  কথা শোনার পর কর্তব্যের খাতিরে এ ডিসি, এসপি সাহেবকে গিয়ে বলি- যে তারা তাজপুর ডিগ্রী কলেজের ছাত্র। তারা ভাল মানুষ। তাদেরকে দয়া করে ক্ষমা করে দেন। আপনারা যে- এখানে দাঁড়িয়ে আছেন তারা খেয়াল করিনি। মোটরসাইকেলটা পুরনো তাই শব্দ করছিল বেশি। আমি কথা বলছি আর ইতিমধ্যে উনার অফিসার আদেশটা পালন করছে। তারা তাদেরকে নিয়ে ফাঁড়িতে চলে গেল।

ফয়সল এবং সাজন ঐ সময়ের তুখোড় ছাত্রনেতা। এখন কেন জানি তারা আর আগের মত একটিভ না? আমার মন খুব খারাপ হলো। আমার জের জবর নেওয়া শুরু করলেন । আমার পরিচয় আমি দিলাম আমি শামীম আমার বাড়ির সাদিপুর। সাথে সাথে আরেকজন অফিসার কে ডেকে বলল ওনাকেও ফাঁড়িতে নিয়ে যাও। আমাকে এবং আমার মোটর সাইকেলটি নিয়ে ফাঁড়িতে চলে গেল। আমরা যেখানে দাড়িঁয়ে আছি সেখান থেকে প্রায় ৪০০/৫০০ গজের মধ্যে ফাঁড়িটা।

পুলিশ অফিসার আমার মোটরসাইকেল চালাচ্ছে আমি পিছনে বসে আছি। এটা শেরপুর বাজারের অনেকে দেখেছে এবং তা ফলাও হয়ে গিয়েছে শামীম কে এরেস্ট করা হয়েছে।

ফাঁড়িতে যাওয়ার পরে দেখলাম সাজন, ফয়সল ১৪ শিকের ভিতরে। আমাকে বসানো হয়েছে একটা চেয়ারে। গিয়ে দেখলাম ফাঁড়ির ইনচার্জ জরুরী কাজে শ্রীমঙ্গলে অবস্থান করছেন। ফাঁড়ির  ইনচার্জ ছিলেন কদ্দুস সাহেব।

তিনি আমাকে খুব ভালোভাবে চিনতেন আমিও তাকে চিনতাম। ফাঁড়িতে শুধু ওয়ারলেস অপারেটর। আমাকে ওয়ারলেস অপারেটর এর কাছে সমজিয়ে  তারা চলে গেলেন । ওয়ারলেস অপারেটর এর নাম সঞ্জয় বাবু। তিনি আমাকে খুব খাতির যত্ন করতে লাগলেন। আমি তাকে বললাম আপনার  ইনচার্জকে ওয়ারলেস মেসেজ দিয়ে জিজ্ঞেস করুন, আমি কি এ্যরেস্ট? যদি এরেস্ট হই তাহলে আমাকে সাজন এবং ফয়সালের কাছে রডের ভিতরে রাখেন।

তিনি বললেন না শামীম ভাই আপনি এরেস্ট না। বললাম আমি যদি এরেস্ট না হই তাহলে আমাকে ছেড়ে দেন। সে বলল শামীম ভাই আমার ক্ষমতা থাকলে এখনই ছেড়ে দিতাম। কিন্তু আমিতো কিছুই জানিনা। আমাকে বললেন আপনি একটু ধৈর্য ধরেন। আমি নাছোড়বান্দা বললাম এরেস্ট যদি হই তাহলে আমাকে আমার ছোট ভাইয়ের কাছে পাঠিয়ে দেন। তাদেরকে সেখানে রেখে আমি চেয়ারে বাহিরে এটা আমার বিবেক মানছেনা।

ইতিমধ্যে আমাদের আটকানোর খবরটা সমগ্র বাজারে ছড়িয়ে ছিটিয়ে গেছে এবং আমার এলাকায়ও খবরগুলি চলে  গেছে। প্রচুর মানুষ আসতে শুরু করেছেন। ফাঁড়ির সামনে  লোকে লোকারণ্য হয়ে গেছে। তখন ফাঁড়ির বড় গেট তারা লাগিয়ে দিলো। মানুষ চিৎকার শুরু করেছে। ইতিমধ্যে আমার অত্যন্ত আদরের ছোট ভাই ছাত্র নেতা বাহাদুর পুরের আশরাফ চলে আসে  আমার কাছে। বলল ভাই এসপি সাহেবের সাথে কথা হয়েছে উনি বলেছেন আপনাকে একটা বন্ড দিতে হবে এই মর্মে যে- এই পারে কোনো গন্ডগোল হলে আপনি দায়ী।

আমি বললাম  রোডস এন্ড হাইওয়ে এর এস,ও  সাহেবের দাওয়াতে আমি এসেছি । তারা এস,ও সাহেবকে  জিজ্ঞেস করুক  এটা সঠিক কিনা। আর এই ব্যাপারে এপারে গন্ডগোল হলে আমি দায়ী এমনটা আমি কোন অবস্থায় দিতে পারব না। আমি বন্ড সাইন কেন করবো? আমি কি রংবাজ বা মাস্তান? না শেরপুরের মালিক যে আমি ওয়াদা করবো শেরপুরে গন্ডগোল বা মারামারি হবেনা। তুমি এ-কি রকম প্রস্তাব নিয়ে আসলে?

সে কাঁদছে আমাকে জড়িয়ে। সে বলল ভাই আপনার পক্ষে আমি বন্ড   দিয়ে দেই, তারা যদি মানেন। আমি বললাম তা কখনো হতে পারে না আমি কোন দোষ করিনি। কি মামলায় আমাদের এ্যরেষ্ট করলেন তা জনগনকে বলতে হবে।

ইতিমধ্যে সাড়ে তিন/ চার হাজার  মানুষ চলে এসেছেন। আরো আসতেছেন। কারণ মানুষ আমাকে খুব আদর করেন, ভালবাসেন। জীবনে যতকিছু করেছি  মানুষের উপকারের জন্য করেছি।

আমার এলাকার ১০৪ জন রিস্কা  ড্রাইভার ছিলেন,  আমার জন্য তারা পাগল। তারা ও আসলো। কেউ কাঁদছেন, কেউ চিৎকার করছেন। অবস্থা বেগতিক দেখে। প্রথমে এডিশনাল এসপি আমার কাছে আসেন। আমাকে বললেন যে আপনাকে ছেড়ে দেওয়া হবে তবে আপনি একটা কাগজে লিখে দেন এইপারে কোন গন্ডগোল হলে আপনি দায়ী।  শ্যামলা রঙের মানুষ, সুঠাম দেহেরা অধিকারী এ,এপ,পি সাব।

আমি বললাম ভাই আমি কেন বন্ড  সাইন  করবো আমিতো শেরপুরের  মালিক না। যে কোন কেউ এই বাজারে গন্ডগোল করতে পারে সমস্যা হতে পারে তার জন্য আমি দায়ী হবো কেন? আমি বন্ড সাইন করতে পারবোনা আমাকে আপনারা কি মামলা এরেস্ট করেছেন সেটা বলেন। তিনি কোনো সদুত্তর দিতে পারেননি আমাকে  অনেক জোরাজোরি করলেন আমি কিন্তু রাজি হইনী। আমাকে বললেন একা ছেড়ে দেবেন তাতেও আমি রাজি না আমার ছোট ভাইদের ছাড়তে হবে।

এ,এসপি সাব চলে গেলেন। অনেক পরে এসপি সহ তিনি আবার আসলেন। এসে বললেন যে- সব মানুষকে বলেন গেইট থেকে দূরে চলে যেতে। আপনাদেরকে ছেড়ে দেওয়া হবে। এই সময় এ,এসপি সাব আমার কানে কানে বললেন  আজাদ বকত স্কুলে কি বক্তব্য দিয়েছিলেন? এ রকম বক্তব্য আর দিয়েন না। তখন আমি বুঝলাম যে আসলে আমার উপরে খড়গ নেমে এসেছে এই কারণে।

এখন বুঝেছি ঐদিন থেকে  থেকে প্রায় মাস দুয়েক আগে আমি একটা বক্তব্য দিয়েছিলাম আজাদ বক্ত স্কুলে।

আর আমাকে এরেস্ট করার পর যখন জেনেছে  যে এই শামীম সেই শামীম তখন তারা আমাকে আটকানোর চেষ্টা করেছেন। যাই হোক আল্লাহর অশেষ রহমত সুন্দর ভাবে চলার কারণে মানুষ ভালোবেসে ছিলেন আর মানুষ ভালোবেসে ছিলেন বিধায় সব মানুষ সেখানে গিয়েছেন যার কারণে আমি মুক্তি পেয়েছি আমার ফয়সল ও সাজন মুক্তি পেয়েছে।

শেরপুর সহ এলাকার সব মানুষের কাছে চির কৃতজ্ঞ। আল্লাহ সবাইকে যেনো হেফাজতে রাখেন।

লেখক : শামীম আহমদ ভিপি, সভাপতি সিলেট জেলা যুবলীগ।


সিলেট প্রতিদিন / এমএনআই


Local Ad Space
কমেন্ট বক্স
© All rights reserved © সিলেট প্রতিদিন ২৪
পোর্টাল বাস্তবায়নে : বিডি আইটি ফ্যাক্টরি